অবতক খবর,১৩ এপ্রিলঃ হে চাঁদ! আগলে রেখো জ্যোৎস্নাকে। এই চন্দ্রমাকে নিয়েই মানুষের জীবন যাপন, ভালোবাসার আলিঙ্গন। আকাশে চাঁদ, মাটিতে মানুষ। দূরত্ব অনেক কিন্তু কিভাবে যে চাঁদ মানুষের নিকট এসে যায়! চাঁদকে ঘিরে মানুষের উৎসব। চাঁদকে লক্ষ্য করে মুসলিম সম্প্রদায়ের সমস্ত অনুষ্ঠান, পূর্ণিমার চাঁদকে ঘিরে আমাদের রাখি পূর্ণিমা, দোল পূর্ণিমা, শুক্লা পঞ্চমী কত সব আয়োজন। বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা। আর গুরুপূর্ণিমা তো আমাদের গুরুপাঠ– শিক্ষার উৎসধারা।

কবিদের তো হাতের মুঠোয় চাঁদ। কাস্তে চাঁদ, রুটির মতো চাঁদ, চাঁদের উদ্দেশ্যে ক্লান্ত ঘর্মাক্ত শরীরে শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ফেরার গান। চাঁদ আর চাঁদ, চাঁদকে নিয়ে অনন্ত জীবনসঙ্গীত।

আর এই চৈতি চাঁদকে দেখেই সিন্ধ্রি সম্প্রদায় ও শিখ সম্প্রদায়ের নববর্ষের উৎসব, উৎসব তামিল সম্প্রদায়ের। কাঁচরাপাড়া এক বহুমাত্রিক বহতা নদী। বহু সম্প্রদায় রয়েছে এখানে কিন্তু কাঁচরাপাড়া সাম্প্রদায়িক নয়।

এলাকা জুড়ে রয়েছে সিন্ধ্রি
সম্প্রদায়ের মানুষ।আমরা বলি সিন্ধিয়া।
চাঁদমারি রোডে জনতা হাইস্কুলের পাশে রয়েছে সিন্ধিয়াদের ইংরেজ আমলের পুরানো বাড়ি– আনন্দ ভবন। এক সময় এই বাড়ির অন্যতম ব্যক্তিত্ব শেঠ আউৎ রায় পৌর নির্বাচনে দাঁড়াতেন। তাঁর প্রতীক ছিল বটগাছ। শ্রীলক্ষ্মী সিনেমা হলও ছিল সিন্ধিয়াদের ব্যক্তি মালিকানাধীন। এসব পুরানো ইতিহাস।

সিন্ধিয়া সম্প্রদায় ১৩ এপ্রিল চৈতি চাঁদকে লক্ষ্য রেখে নববর্ষ উৎসব পালন করে। সিন্ধি নববর্ষ উৎসব তাদের গর্ব। সিন্ধু প্রদেশ–সিন্ধু নদের তীরে তাদের বসবাস। এই ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতার ঐতিহ্য তাদের রক্তে বহমান। এতে তাদের গর্ববোধ রয়েছে। তারা এখন বঙ্গ সংস্কৃতির মধ্যে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন কিন্তু নিজেদের চিরায়ত সংস্কৃতি কৃষ্টি বজায় রাখতে এই অনুষ্ঠানের সম্মিলিত আয়োজন করে থাকেন।

সাঁই ঝুলেলালকে তারা তাদের কুলদেবতা বা জলদেবতা বলে মানেন। এদিন তাঁর জন্মদিন। প্রায় ১১০০ বছর আগে জন্মেছিলেন তিনি, এ কথা জানালেন এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক পি আর দাস যিনি অঞ্চলে পরশা দা নামে পরিচিত। তিনি একজন সমাজকর্মী। অন্যতম আয়োজক মনোহর বাবু জানালেন, তারা আসলে শ্রেষ্ঠী সম্প্রদায়। বাণিজ্য একসময় তাদের পেশা ছিল। বাণিজ্যের জন্য জলপথ যাত্রা করতেন তার পূর্ব পুরুষেরা। জলদস্যূ ও জলজ জন্তু-জানোয়ার দ্বারা আক্রান্ত না হয়ে নিরাপদে যেন বাণিজ্য শেষে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন, তাই এই দেবতার পুজো করতেন। সেই থেকে এই ঐতিহ্য চলে আসছে। তারা গুরু নানককেও তাদের গুরু বলে মানেন। তাই তাদের উৎসবে শিখ সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ থাকে।

নববর্ষের সকালে দেবতা ঝুলেলাল ও গুরু নানককে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুজো পর্ব শুরু হয় ভজনগীতের মাধ্যমে। বিকেলে গঙ্গার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জলদেবতাকে পুজো ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।

দেবতা বিসর্জনের পর সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতাপাঠ, গান, কাঠি নাচ ইত্যাদি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসব সম্পন্ন হয়।

এরপর দিন গুরুদ্বোয়ারায় শিখ সম্প্রদায়ের নববর্ষের উদযাপন অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত থাকেন।