বিগত চার বছরে সাড়ে আটশোর ওপর ভারতীয় সৈনিক নিহত হয়েছে। আমার ছোট্ট মেয়ে টুকুন তুলে দিয়েছে মূল প্রশ্নটি। শহিদ কাকে বলে? শহিদ শব্দটি কি পণ্য? বাজারে খায়? টুকুনের প্রশ্নঃ

শহিদ কে
তমাল সাহা

দেশে উঠেছে দেশপ্রেমের ঝড়
আমরা আক্রান্ত সেই জ্বরে।
কবি প্রশ্ন তুলেছেন
আমরা শববাহক না সত্যভাষী স্বর?

আমার ছোট্ট মেয়ে টুকুনও তুলেছে প্রশ্ন
শহিদ শব্দটি কি বাজারে পণ্য?
এই শব্দটি কি বাজারে খুব খায়?
রাষ্ট্র বোঝে কিন্তু…
তোমাদের মতো জ্ঞানীগুণী বোঝে কোথায়?

সে বলে, পুলওয়ামায় মরে গেল
ঊনপঞ্চাশ জন সৈনিক।
দেশপ্রেমের ঝড় উঠেছে দিগ্বিদিক।
এতে দেশের জন্য প্রাণদান কোথায়?
এতো পরিকল্পিত খুন-নারকীয় হত্যা!
দেশের ভিতর সৈন্যরা শিবির পাল্টায়
কোথায় ছিল, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা?

ওরা তো কোনো যুদ্ধে মরেনি।
সীমান্তে দাঁড়িয়ে অথবা বাঙ্কারে শুয়ে চালায়নি কোনো মেশিনগান?
শহিদের তকমা লাগিয়ে তাদের কেন করো প্রতারণা, কেন করো অপমান?
নিজেদের গাফিলতি থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চায় এ কোন্ মূর্তিমান শয়তান?

বাড়ি ফিরে এলো বন্দি কফিনে, মোড়ানো জাতীয় পতাকা।
ভেতরে কি কোনো দেহ ছিল?
ছিল মাংসপিন্ড শুধু দলাপাকানো।
বাক্সের ওপর আছড়ে পড়েছিল বুকফাটা আর্তনাদ— স্ত্রী-কন‍্যা-মাতা।

দেশরক্ষীরাই খুন হয়ে যায় দেশের ভিতর।
এরা দেশবাসীকে দেবে কোন সুরক্ষা?
সংবিধান থেকে অবিলম্বে তুলে দাও
বেফালতু শব্দটি যার নাম—
প্রতিরক্ষা!

টুকুন বলে, তুমি কি জানো প্রধান মন্ত্রীর সুরক্ষার রূপরেখা, প্রতিদিন ব‍্যয় কত কোটি?
ঐ সৈনিকটি লাঞ্ছিত অপমানিত—
মনে পড়ে সোচ্চার হয়েছিল
তাদের ভাগ্যে কেন পুরানো পোশাক,
পোড়া রুটি?

বাবা, তুমি কি পড়েছ আওয়েনের কবিতা—
ডিজঅ‍্যাবেলড,দ‍্য লাস্ট লাফ,সেন্ড অফ?
যোদ্ধা কবি রাইফেল ধরেছিলেন,
নিজেই এখন যুদ্ধের বিরুদ্ধে সরব।

সৈনিকটি বলেছিল যাবার আগে
এক-একটি করে খতম করবে শত্রু,
রাখবে দেশের মান।
প্রস্তুত আছে, পিছপা হবে না দেবে বলিদান।
শেষ কন্ঠে উচ্চারিত হবে তার—
মা! তুঝে বহুত সেলাম!

নিজের ইচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি পালনে
ব্যর্থ সৈনিক,
স্বদেশ জন্মভূমিতেই হয়ে গেল খুন!
কোন স্বার্থে রাষ্ট্র তাকে শহিদ বানায়,
ছোট্ট মাথায় বুঝিনা আমি,
সুধী দেশবাসী একটু বুঝিয়ে বলুন।

পড়ন্ত শীতের বেলা, দেখি—
ভোটের পতাকা উড়ছে হাওয়ায় দুর্দান্ত দারুণ!

ছোট্ট মেয়েটি জড়িয়ে ধরে আমায়
ভেঙে পড়ে অঝোর কান্নায়।
বলে, সৈনিকের প্রতি এই অপমান
সহ্য করা মানেই তো আমরা শুধু শববাহক।
শুনে রাখো বাবা, নীরবতা নীরবতাই—
নেই এর কোনো সম্মান।
এর দায় আমাদেরও, নাহলে আমরাও
শাসকের চেয়ে বেশি দূরে নয়—
নিশ্চিত এক প্রতারক, মহাপাতক।