রামনবমী হয়ে গেছে, হামলাবাজিও শুরু হয়েছে,তবে রামচন্দ্রকে কেউ দেখেননি। আমি নিজের চোখে রামচন্দ্রকে দেখেছি। কখন, কিভাবে দেখেছি শুনুন।

রামচন্দ্র ডোম হয়ে গেছে
তমাল সাহা

শেষ পর্যন্ত দেখা হল তার সঙ্গে নটবর ঘাটে।
বাংলা মদের বোতল,দুটো ছোলা বাদামের প্যাকেট পড়ে আছে ঘাটের সিঁড়ির পেছনে, একটু আড়াল মতো জায়গায়।

লুঙ্গিটাকে নেংটির মতো করে কিভাবে ভাঁজ মেরে যেন পরেছে,গান্ধিজি টাইপের কৌপিন যেন।
মাথায় গামছা ফেট্টির মত করে বাঁধা।
শ্মশানঘাট মানেই গনগনে আগুন।
চিতাকাঠ জ্বলছে—
আগুনের আভায় তার কালো মুখটাও উজ্জ্বল লাল আলোয় ভরে গেছে।
একটা বেশ ডাগর পুরুষ্টু ছোট সাইজের বাঁশ তার সম্বল। এটা দিয়ে আগুন আয়ত্তে আনে সে,
ছোট-বড় করে আগুনের আঁচ উস্কে দেয়।

গান্ধিজি রামধুন গাইতেন। রামরাজ্য চেয়েছিলেন।
সব মিলছে কিন্তু কয়েকটা জায়গায় মিলছে না।
রামচন্দ্র কি মদ খেতেন?ছোলা বাদাম হয়তো খেতেন।
রামচন্দ্র বনবাসে গিয়েছিলেন,
শ্মশানঘাটের কোনো কথা তো লেখা নেই রামায়ণে।

রাম নাম সত্য হ‍্যায়!
বলতে বলতে একটা ডেড বডি এলো।
তারও কিছুক্ষণ বাদে হরেকৃষ্ণ হরেরাম ধ্বনিতে খোলে বোল তুলে একটা মৃতদেহ এলো।

মৃতদেহ দেখলেই তার মুখটা খুশিতে ভরে ওঠে।
এদিকে বোতল শেষ– আরে বুড়ুয়া! বলে সে একটা হাঁক পাড়ল।
বুড়ুয়া ছুটে এলো,একশ টাকার একটা নোট ট্যাঁক থেকে বার করে দিল।
বলল,যা যা জলদি জলদি লে আনা।

ভাগীরথী বয়ে যায়,
মাঝে মাঝে সে আগুনের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে জলের দিকে তাকায়।
আরে বাবু! ই পানি ওর আগ হম লোগোকা ইনসান,
ই আগ কি চেহারা ভি রাতমে বহুত বড়িয়া হো যাতে হ‍্যায়। রাতমে ই শ্মশানখোলা কা চেহারা দুসরা কিসিম।
উপর মে আসমান,চাঁদ,তারা ভি জ্বলছে,
নিচে চিতা ভি জ্বলছে।
গঙ্গা মাইয়া পানি লেকর ধীরে ধীরে বহতি যা রহি হ্যায়।
মদে টানটান চুর হয়ে উঠেছে ততক্ষণে সে।

রামচন্দ্র রঘু বংশে জন্মেছিল। এর কোন্ বংশ?
তুমি রামচন্দ্রের কথা শুনেছো?
সে বলে, রামচন্দর! বহুত শুনাথা।
একঠো বাত আপনি বলুন তো বাবু,
ও সীতাকি অগ্নিপরীক্ষা কাহেকে লিয়ে?
নিজের বৌ কখনো রেন্ডি হতে পারে?
আউর একঠো কথা আমাকে বলুনতো,
এ ক্যায়সা বড়া ভাই হো,নিজের বিবিকে উ জঙ্গল কা পঞ্চবটীমে লিয়ে আসলেন,ঠিক আছে।
লক্ষ্মণকো ভি নিয়ে আসলেন, সে ভি ঠিক আছে,
একবার ঊর্মিলা ভাবীর কথাটো ভাবলেন না?
রামচন্দ্র জঙ্গল মে ভি নিজের সুখ করলেন,
ভাই কে বারে মে কুছ নেহি সোচা?

জল আর আগুন দেখতে দেখতে
জীবন আর ভালবাসার কথা জেনে গেছে
রামু ভাইয়া,রামুয়া,রামচন্দর।

বাবু ,ইয়ে বাতাইয়ে তো,
ও যো পলটিক্স য়া ক্যায়া বলতে হে আপলোগ,
রামচন্দরকো আগে রাখকে লোগোনে রাজনীতি কিঁউ করতে?
ভগবান সে কভিভি পলিটিক্স হোতা হ্যায়?
ই সব দাঙ্গা,খুন কি ঠিক আছে?
আদমি কো ভুখা রাখো আউর
ভুখা আদমি কো লেকর রাজনীতি করো,
ইয়ে ক্যায়া হ্যায় বাবুজি?
বাবুজি,রামচন্দর রামনবমীমে জন্ম লিয়া ঠিক হ‍্যায়,
লেকিন উনকা মৌত কোন্ দিন হুয়ে থে আপ জানতে?

বাবুজি শুনিয়ে,
হাম চণ্ডাল হ্যায়। গুহক ভি চণ্ডাল থে।
রামচন্দর ক‍্যায়া আপনা সার্থ ছোড়কর
গুহক চণ্ডালকে সাথ মিত্রতা কিয়া?
উস টাইম দুনিয়ামে গুহককো ছোড় কর
দুসরা কোই পায়েরসে ধনুস চালা নেহি পাতা থা।
রামচন্দর আ গলে লাগ যা বোলকর
গুহককে পাস গোরসে তীর চালানে কা কৌশল শিখ লিয়া। আউর মহা-ধনুর্ধর বন গিয়া!
ইতনা ধূর্ত থা রামচন্দর!
অওর শুনিয়ে,
রামচন্দর বিশ্বাসঘাত ভি থে। রামচন্দর খুনি ভি থে।
ভারতমে আভি যো গাটবন্ধন রাজনীতি চালু হ্যায়,ইসকা সুরুয়াৎ রামচন্দরনে হি কিয়া থা।
সুগ্ৰীব কে সাথ জোট বাধ কর ও চুপকে চুপকে বালী কো বধ কিয়া।
ইয়ে ক্যায়া অপরাধ, অন্যায় নেহি হ্যায়?
বাবু,বতাইয়ে তো রামচন্দ্র নে দলিত শম্বুক কা সির কিউ কাট লিয়া থা? উনকে তপস্যা মে ক্যায়া কোই অপরাধ থা?

এমন হাজারো প্রশ্ন নিয়ে আগুন ও জলকে সঙ্গী করে
এ জীবন না মৃত্যুর কোন খেলায় মেতেছে রামুয়া!

ত্রেতাযুগে রামায়ণে রামচন্দ্রের কোনো পদবি ছিল না।
কলিযুগে সে ভগবান নয়,ডোম হয়ে বসে আছে।

রামচন্দ্র ডোমকে দেখে এলাম নটবর ঘাটে।