হাথরাস-এ নাকি ধর্ষণই হয়নি! কেন ধর্ষণ হয়নি– এই অক্ষরজীবীর যুক্তি শুনুন

যুক্তি
তমাল সাহা

রাষ্ট্র শব্দটি অত্যন্ত কঠিন উচ্চারণ।

রাষ্ট্র কহিল, ধর্ষণ হইতে পারে না। ধর্ষণ হয় নাই। মেডিকেল রিপোর্ট তো তাহাই বলিতেছে।দেহে তেমন কোন ক্ষত নাই। এই দেখুন মেডিকেল রিপোর্ট। ‌এই বলিয়া বিচারকের সামনে মেডিকেল রিপোর্ট দাখিল করিল রাষ্ট্র। ‌

রাষ্ট্র আরো যুক্তি দিয়া বুঝাইলো, মহা-করোনা কাল। লকডাউন চলিতেছে। কড়া নজরদারি চতুর্দিকে। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং অত্যন্ত কঠোরভাবে পালিত হইতেছে। সুতরাং কিভাবে দৈহিক সংযোগে ধর্ষণ হইতে পারে?
মুখে মাস্ক পরিধান অত্যন্ত বাধ্যতামূলক।
স্যানিটাইজেশনে ঘন ঘন হাত ধোওয়া আবশ্যিক।
মাস্ক পবিয়া কি স্তন ও ওষ্ঠ দংশন করা যায়?
ঘনঘন স্যানিটাইজেশনে হাত ধৌত করিতে হইলে ধর্ষণের‌ সুযোগ কোথায়?

ইহা ব্যতীত ধর্ষকরাও তো জানে করোনা বিধি অমান্য করিলে রাষ্ট্রের করোনা ধারায় তাহাদের গ্ৰেপ্তার বরণ করিতে হইবে। অথবা তাহারাও করোনা আক্রান্ত হইতে পারে। এই আতঙ্ক তো তাহাদের রহিয়াছে।
সুতরাং ধর্ষণ হইতে পারে না।

ইহা ছাড়া, ভারতবর্ষ একটি ঐতিহ্যবাহী দেশ। সে দেশের বিশাল মহাকাব্য মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের কথা লিখিত আছে, ধর্ষণের‌ গাথা নাই। মহর্ষি ব্যাস দ্বৈপায়ন তাহা হইলে নিশ্চিত উল্লেখ করিতেন।

রামায়ণে সীতার অশোক বনে বন্দিত্বের কাহিনী লিখিত রহিয়াছে,অগ্নি পরীক্ষার কথা রহিয়াছে। মহর্ষি বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করিয়াছেন। কোন ধর্ষণের কথা উল্লেখ করেন নাই।

সুতরাং এই মহান ঐতিহ্যশালী দেশে ধর্ষণ হইতে পারে না।

মনীষা বাজরা খেতে শয়ন করিয়া বিশ্রাম লইতেছিল।
কারণ ঘাস কাটিতে কাটিতে সে ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিল।

মনীষা বাল্মীকি বংশের কন্যা। বাল্মীকি রামের স্রষ্টা।
রাষ্ট্রও রামভক্ত। রাষ্ট্র সম্প্রতি রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করিয়াছে। তাহার কন্যার অসম্মান কেহ করিবে তাহা ভাবিতেও রাষ্ট্র লজ্জা বোধ করে।

রাষ্ট্র স্বয়ং ঘোষণা করিয়াছে,আমি চৌকিদার,আমি চতুর্দিকে চৌকি দিতেছি। আমার নজরে পড়িবে না? তাহা কখনও হয়!

এইরূপ বলিতে বলিতে রাষ্ট্র ক্রন্দন করিতে লাগিল। বিচারক স্ব-আসন ত্যাগ করিয়া বিশাল সামলার এক কোনা দিয়া রাষ্ট্রের চোখ মুছাইয়া দিল।

রাষ্ট্র ও বিচারক সমস্বরে বলিয়া উঠিল, জয়! ভারতবর্ষের জয়!