অবতক খবর,  উত্তর দিনাজপুর: অতিথীদের কাছ থেকে মেয়ের জন্মদিনের উপহার ছিল রক্তের প্যাকেট। ছিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াকে ট্রাই সাইকেল প্রদান। অন্য ধারার ওই অনুষ্ঠানে রক্ত দাতাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে সেসব তুলে দেওয়া হলো ব্লাড ব্যাংকে।

ফি বছর এমনই অনুভব নিয়ে রক্তদান শিবিরের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক কর্মসূচি নেন ইসলামপুর আশ্রম পাড়ার এক শিক্ষক দম্পতি। রবিবার মেয়ের অষ্টম জন্মদিনে রক্তদান শিবিরের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হলো ট্রাই সাইকেল। এমনই ব্যতিক্রমী আয়োজন করে সমাজের এক নতুন দিককে তুলে ধরলেন ওই দম্পতি।

এভাবেই যদি প্রতিটি শিশুর জন্মদিনে বা কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয় তবে এলাকায় কখনোই রক্ত সংকট থাকবে না। তাই জন্মদিনকে সামনে রেখে ১ মার্চ রবিবার ইসলামপুর মহকুমা প্রেস ক্লাব ভবনে ছিল এমনই ভিন্ন ধারার আয়োজন। রবিবার ইসলামপুর আশ্রম পাড়ার শিক্ষক দম্পতি সুশান্ত নন্দী ও সুরমা রানীর আয়োজনে তাদের একমাত্র মেয়ে রূপকথার জন্মদিনের কর্মসূচির প্রাক মুহূর্তে উপস্থিত হয়ে ইসলামপুর পৌর সভার চেয়ারম্যান কানাইলাল আগরওয়াল শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন ,জন্মদিন এমন হলে পাল্টে যাবে সমাজ। এভাবেই এগিয়ে চলুন।

অন্যদিকে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোলাম রব্বানী বলেন, সুশান্ত নন্দীর এই উদ্যোগে আমি রীতিমতন অভিভূত। জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম রক্তদান শিবিরে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম এবং এই বার্তা আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও পৌঁছে দিয়েছি যে এভাবেও জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে রক্ত সংকট দূর করা যায়। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সুজন মল্লিক। একক নৃত্য পরিবেশন করে এর মাধ্যমেই জন্মদিনের পাল্টা উপহার তুলে দেয় সবাইকে রূপকথা নন্দী। সংগীত পরিবেশনের ছিলেন নেপাল, এছাড়াও ছিল দীর্ঘ সময় ধরে রক্তদানের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।

রূপকথার বাবা সুশান্ত নন্দী জানান, প্রতি বছর একটু অন্য ধারার বার্তা নিয়ে শুরু হয় তার মেয়ের জন্মদিন। প্রথম বছর বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে ছিল অনুষ্ঠান। পরের বছর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুঃস্থ শিশুদের নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা শিবির ও চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়। এর পরের বছর ছিল বাড়িতেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন। কখনো রক্তদাতা আবার কখনো বা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের মত অনেকেই হয়ে ওঠে ওই জন্মদিনের আমন্ত্রিত অতিথি। আর এবারও রক্তদাতারাই ছিল অতিথি। তাঁদের পেট পুরে খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকুক সেই খরচ তিনি এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য বহন করেন । পাশাপাশি রক্তদাতাদের একজন গর্বিত রক্তদাতা হিসেবে স্মারক তুলে দেওয়া হয়।  রসাখোয়া থেকে একজন আসা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে বিধান নগর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা বাপন দাস রূপকথার জন্মদিনের উপহার হিসাবে একটি ট্রাইসাইকেল তুলে দেন । এদিন অন্যান্য বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামপুর থানার আইসি শমীক চাটার্জী , ডাঃ কৌস্তুভ নন্দী, নাট্যকার উত্তম সরকার, পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অর্পিতা দত্ত,  লেখিকা মৌসুমী নন্দী, বাচিক শিল্পী পায়েল পাইন,নৃত্য শিল্পী আইভি বিশ্বাস প্রমুখেরা। এদিন মোট ৩৫ ইউনিট রক্ত রূপকথাকে উৎসর্গ করে উপহার তুলে দেন রক্তদাতারা। ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে জমা করা হয় ওই রক্ত। সমগ্র অনুষ্ঠানটি নিজের ভাবনায় সঞ্চালনা করেন মিঠুন দত্ত।