ভীম কুন্তী সংবাদ
তমাল সাহা

কুন্তী কহিলেন, হে দ্বিতীয় পুত্র! তোমার ক্ষুধার অন্ন জোগাড় করিবার মতো ক্ষমতা আর আমার নাই। তুমি এতো খাই খাই করিও না। এতো বৃকোদর কেন? তোমার লজ্জা হয় না?

ভীম রাগত স্বরে কহিলেন, তাহা হইলে তুমি আমাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছিলে কেন? আমি তো স্ব-ইচ্ছায় ভূমিষ্ঠ হই নাই! ক্ষুধা নিবারণের উপায় যখন তোমার জ্ঞাত নাই তবে গর্ভিণী হইবার এত সুখ হইয়াছিল কেন?

এইবার চোখে বহতা নদী আনয়নপূর্বক কহিলেন, আমায় বিদায় দাও মাতঃ! আমি নবান্নে গমন করিব। অন্নদার নিকট আমার ক্ষুধার কথা বর্ণন করিব। দুয়ারে অন্ন– এমন একটি প্রকল্পের কথা আমার কর্ণগোচর হইয়াছে।

সেই দিবসটি ছিল ১৮ মে,২০২২। ভীম যাত্রা করিলেন। অতিদূর পথ। ঝাড়গ্রাম আসিয়া পৌঁছিলেন। অবলোকন করিলেন অন্নদা প্রশাসনিক বৈঠকে ভাষণরত।

তিনি আশ্চর্য হইলেন। কারণ কুন্তী অর্থাৎ তাহার মাতাকে কদাপি ভাষণ প্রদান করিতে দৃষ্ট হন নাই। উপরন্তু তাহার ক্ষুধার কথা শ্রবণ করিয়া নতমুখী ও নিশ্চুপ ছিলেন। ভীম শ্রবণ করিলেন অকুস্থলেও ক্ষুধা লইয়া বিতর্ক চলিতেছে। জেলা পরিষদ সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষ ষদিগের মধ্যে বাদানুবাদ।

ভীম স্বীয় উদরাভিমুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেন এবং লজ্জায় আরক্ত হইলেন।

নবান্নবাসী অন্নদা প্রকাশ্যে কহিতেছেন, কত খাবে? এতো লোভ কেন? অনেক তো দিয়েছি। আমি আর অত দিতে পারবো না। আর একা কত গ্রাস করবে?
কয়লা-পাথর খাদান, বালি-গরু পাচার, কাটমানি শব্দসমূহও ভীম শ্রবণ করিলেন কিন্তু কিয়ৎমাত্র উপলব্ধি করিতে সমর্থ হইলেন না।

ভীমের মননে কুন্তীর কথা জাগ্রত হইল। আমার মাতঃ এতো অশিক্ষিত! ক্ষুধা সম্পর্কে এই শব্দসমূহ কস্মিনকালেও উচ্চারণ করেন নাই।

ভীম মৃত্তিকায় উপবেশন করিয়া শিরে করাঘাত করিতে থাকিলেন।