অবতক খবর,২২ মে: রাজনীতিতে কখন যে কি হয় তা আম জনতার বোঝা মুশকিল। কিন্তু এই রাজনীতি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত নিচু স্তরের কর্মীদের।

এই নিচুস্তরের কর্মীরাই রাজনীতিতে সবথেকে বেশি লড়াই করে এবং মার খায়। কিন্তু শেষমেশ হয় কি? যারা লিডার তারাই গুরুত্ব পায়। শুধু তাই নয় সমস্ত খেলাই পরিচালনা করে তারা। আর এই খেলায় তাদের কোনো ক্ষতি হয় না, তাদের কোন কিছু যায় আসে না, বরঞ্চ সময় সুযোগ বুঝে তারা মালা ও পতাকা বদল করে দল পরিবর্তন করে । আর নিচু স্তরের সাধারণ কর্মীরা এই খেলা খেলা করে পিষে মরে অর্থাৎ তাদের সাথেই খেলা হয়ে যায়।

২০১৯ সালের আগে অর্জুন সিং যখন বিজেপিতে যোগদান করেন,তারও আগে বর্তমানে বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুবোধ অধিকারী এই অর্জুন সিং-এর জন্য প্রচুর লড়াই করেছেন, সংগঠন তৈরি করেছেন। একটু বিস্তারিত বলা যাক, বর্তমানে বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুবোধ অধিকারী এক সময়ে বিজেপির হাত ধরে ছিলেন। সেই সময়ে অর্জুন ছিলেন তৃণমূলে। তখন বিজেপিতে সুবোধ অধিকারী একজন দক্ষ সংগঠক হয়ে উঠেছিলেন। তারপরেই অর্জুন চলে এলেন বিজেপিতে। সেই সময়ও বিজেপির বহু কর্মীরা বিজেপিতে অর্জুনকে মেনে নিতে পারেননি। তখন বিজেপিতে এসে সংগঠন তৈরি করা অর্জুনের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ছিল। আর তখন অর্জুনের সুবোধ অধিকারীর সাহায্যের প্রয়োজন হয়।অর্থাৎ অর্জুন সিং-কে নত হতে হয়েছিল সুবোধ অধিকারীর কাছে। তখন অর্জুনের বিজেপিতে আসাটা সুবোধ অধিকারীও মেনে নেননি। তাই তিনি ত্যাগ করেছিলেন বিজেপি। কাঁচরাপাড়ায় তৃণমূল সুপ্রিমো এসে সুবোধ অধিকারীর হাতে তৃণমূলের ঝাণ্ডা ধরিয়ে ছিলেন। আজ ছবিতে দেখা যাচ্ছে মাথা নত করে সুবোধ অধিকারীর কাছে উত্তরীয় পড়ছেন অর্জুন। এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন, এবারও কি অর্জুনের তৃণমূলে আসাটা মেনে নিতে পারবেন সুবোধ?? নাকি সব কিছু সেটিং হয়ে গেছে ?

২০১৯ সালে বিজেপির হয়ে সাংসদ হওয়ার পর তাঁর নেতৃত্বে গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে যে তাণ্ডব চলেছিল, জানা গিয়েছিল তিনি নিজে রাস্তায় নেমে তৃণমূলের নেতাদের মারতে উদ্যত হয়েছিলেন, আজ ২২শে মে সেইসবের উর্ধ্বে গিয়ে তিনি ফের তৃণমূলে যোগদান করলেন।

তিনি আজ ক্যামাক স্ট্রীটে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিলেন ঠিকই, কিন্তু তাকে তৃণমূলের উত্তরীয় পরতে হলো বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারীর কাছে মাথা নত করেই। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নৈহাটি বিধায়ক পার্থ ভৌমিক,রাজ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা ।

অর্জুনের এই যোগদান মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ কর্মীরা। তাদের বক্তব্য, “এই এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কি সাধারণ কর্মীদের কথা একবারের জন্য কি ভাবা উচিত ছিল না!! আমরা মার খেলাম,ঘরছাড়া হলাম, আমাদের বাড়ি ভাঙচুর হলো, কত মানুষ রক্তাক্ত হলো এই সাংসদ অর্জুন সিং-এর জন্য। কিন্তু আজ দল এই অর্জুন সিং কে মাথায় তুলে নাচচ্ছে। অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি “। আমরা সব সময় সংবাদে,সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি যে তৃণমূল সুপ্রিমো বলছেন,সমস্ত বুথ লেভেলের কর্মীদের গুরুত্ব দিতে হবে, তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে হবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এগুলো শুধু মুখের কথা। যাদেরকে তিনি একসময় গাদ্দার বলেছিলেন তাদেরকে তিনি আবার দলে টেনে নিলেন। তারাই এখন ভালো লোক।

এই সকল কথা নিয়ে এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা।

অন্যদিকে এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, অর্জুন দলে তো যোগ দিলো, কিন্তু এখন সে করবে কি?? আগামী ২০২৪ সালে কি তিনি ফের সাংসদ পদে লড়তে পারবেন? তিনি কি জুট শ্রমিকদের জন্য লড়াই করতে পারবেন? নাকি জুটমিলের কাটমানি হাতছাড়া হয়ে গেছিলো বলেই ফিরে আসা?? তাছাড়া তাঁর নেতৃত্বেই যাদের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছিল, যারা ঘর ছাড়া হয়েছিল, তাদের কাছে কি ক্ষমা চাইবেন? সে দিকেই নজর রাখতে হবে সাধারণ কর্মীদের। তার জন্য যে মানুষ তাদের সন্তান হারিয়েছেন তাদের কাছে কি ভাবে ক্ষমা চাইবেন তিনি ?

তবে এখন সিপিএম বলছে যে, এই হলো বিজেমূল। বিজেপি তৃণমূল সবাই এক। যে যার নিজের স্বার্থে এপাং ওপাং ঝপাং করে ড্যাং ড্যাং করতে পারে। আমাদের সিপিএমের এই কালচার নেই। হয়তো আমরা শূণ্যে চলে গেছিলাম বলে মানুষ বুঝতে পারছে না, তবে মানুষ একদিন নিশ্চয়ই বুঝবে যে সিপিএম ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

তবে আজকের এই ঘটনার পর সিপিএম এও মনে করছেন যে, গোষ্ঠীবাজি তো আগেও ছিল, কিন্তু আজকের এই যোগদানের পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরো উস্কে দেওয়া হল। ‌ আবার দেখা যাবে এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে কামাই নিয়ে গন্ডগোল । ‌ যার জেরে ফের অশান্ত হয়ে উঠবে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল তাতে তৃণমূলের কি আসে যায় ?

২০১৯-এর ২রা মে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর অর্জুনের নেতৃত্বে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে যে তাণ্ডব চলেছিল তাতে বহু মায়ের কোল খালি হয়ে গিয়েছিল।‌ আজ অর্জুনের যোগদানে ওই মায়েদের সন্তান তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তারা কি মেনে নেবেন এই যোগদান ? এখন কি ধরনের রাজনীতি হচ্ছে তা মানুষ খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছে। এখন শুধুই স্বার্থে রাজনীতি, পকেট ভরার রাজনীতি।