অবতক খবর : কথা দিয়ে কথা রাখলেন বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী। তাঁর পরিশ্রমের ফলে আজ বীজপুরের ৪৭টি ওয়ার্ডেই জয় পেল তৃণমূল। ২০১৯-এর ২৩শে মে’র ঘটনা কে ভুলতে পারে! চারিদিকে শুধু সন্ত্রাস আর হানাহানি। ঘর ছাড়া হয়েছিল একের পর এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। সেই সময়ে বড় বড় সকল নেতারা নিজের স্বার্থে দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দেন।‌ এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শুভ্রাংশু রায় এবং তার নেতৃত্বে অনেকেই দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে জয়েন করেন।

১৪ই জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীজপুরের মাটিতে পা রাখলেন। সেই দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুবোধ অধিকারীর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিলেন এবং সেইসাথে বীজপুরের দায়িত্বও তিনি তাঁর হাতেই তুলে দিলেন। কারণ দলের সুপ্রিমোর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, এই অঞ্চলকে রক্ষা করতেপারবেন একমাত্র সুবোধ অধিকারী। কারণ সেই সময় বিজেপিতে ছিলেন বীজপুরের দুবারের প্রাক্তন বিধায়ক এবং বর্তমানে তৃণমূলের টিকিটে জিতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন সেই শুভ্রাংশু রায়। আর ছিলেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং।

সুবোধ অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বীজপুরের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিজেপির দখলে চলে যাওয়া একের পর এক পৌরসভা অর্থাৎ কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, নৈহাটি ভাটপাড়া এই সমস্ত অঞ্চল বিজেপির দখলমুক্ত করেন। সুবোধ অধিকারী মনে করেন তাঁর নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যুব আইকন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় তাঁর পাশে আছেন। আর তাঁর বড় ভাইয়ের মতো পাশে ছিলেন এবং আছেন পার্থ ভৌমিক। তিনি মনে করেন তাঁরা না থাকলে আজ তিনি সুবোধ অধিকারী হয়ে উঠতে পারতেন না। এতদিন গোটা ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষকে শোষণ করা হয়েছিল। যারা শোষণ করতো তারা বিজেপিতে গিয়েই শোষণ করেছিল। অনেক লড়াই করে সুবোধ অধিকারী ২০১৯-এর লোকসভার ফলাফল ঘোষণার পর বীজপুর সহ অন্যান্য অঞ্চল বিজেপির সন্ত্রাস মুক্ত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। সাংসদ অর্জুন সিং-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ‌

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বীজপুরে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন সুবোধ অধিকারী এবং বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন শুভ্রাংশু রায়। শুভ্রাংশু রায়ের রাজনৈতিক দক্ষতা সে বিচারে অনেক বেশি ছিল। কারণ তিনি দুবারের বিধায়ক ছিলেন‌। কিন্তু সেই তুলনায় সুবোধ অধিকারীর রাজনৈতিক দক্ষতা অনেকটাই কম ছিল। কিন্তু সুবোধ অধিকারী এসব কথা না ভেবে তিনি ভেবেছিলেন যে মানুষের থেকে বড় নেতা আর কেউ হতে পারে না। আর মানুষই ঠিক করবে যে, কে তাদের নেতা হবে। কারণ আমি বলব আমি উন্নয়নের কান্ডারী, আমি ঘরের ছেলে, আমি সকলের নেতা,তা কখনোই হতে পারে না। এটা মানুষ ঠিক করবে।

সেই সময় শুভ্রাংশু রায়ও উঠে পড়ে লেগেছিলেন সুবোধ অধিকারীকে দমিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু এত কিছুর পরেও সুবোধ অধিকারী ময়দান ছেড়ে যাননি। ‌

যেখানে শুভ্রাংশু রায় সকালে বেরিয়ে ২ থেকে ৩ ঘন্টা প্রচার করে ঘরে ঢুকে পড়তেন, সেখানে সুবোধ অধিকারী সারাদিন,এমনকি বিকেল থেকে রাত পর্যন্তও মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের পায়ে‌ হাত দিয়ে আশীর্বাদ চাইতেন। এত বড় ব্যবসায়ী এবং এই ভারী চেহারা নিয়ে প্রতিটি মানুষের যখন পা ধরে আশীর্বাদ চাইতে লাগলেন সেই বিষয়টি মানুষের মনে ধরল।

মানুষ তখন বলেন যে কোনো বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধি কেউই এই ভাবে কখনো কারো পা ধরে ভোট চায়নি। কিন্তু সুবোধ অধিকারী প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে নিজের থেকে বয়সে বড় মানুষদের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে এসেছেন এবং ভোট প্রার্থনা করেছেন। বীজপুর মানুষটাকে খুব সহজেই আপন করে নিলেন। ‌

অন্যদিকে শুভ্রাংশু রায়,যিনি দুবারের বিধায়ক ছিলেন তিনি মানুষের পা ছোঁয়া তো দূরের কথা ঠিকঠাক জনসংযোগ পর্যন্ত করেননি।

২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর সুবোধ অধিকারী তার জয়ের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বীজপুরের মানুষ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিয়েছেন।

তিনি বলেন, মানুষ ভোট না দিলে আমি জয়লাভ করতে পারতাম না। আর মানুষ আমাকে দেখে নয় দলের সিম্বল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই ভোট দিয়েছেন। তাদের আশীর্বাদেই আমি বিধায়ক হয়েছি। আর আমি এও কথা দিয়েছিলাম যে, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর এই বীজপুর অঞ্চলে একটা কালিপটকাও ফাটতে দেব না।

এলাকা শান্ত রেখে,এলাকাকে সন্ত্রাস মুক্ত করে ২০১৯-এর সন্ত্রাসের পাল্টা জবাব দিলেন বিধায়ক সুবোধ অধিকারী।

আর এই সকল দেখে বীজপুরের মানুষ, ব্যবসায়ী এবং দলের সাধারণ কর্মীরা ও খুব খুশি হলেন। শুধু তাই নয় বিরোধীদল অর্থাৎ বিজেপি এবং সিপিএমও অত্যন্ত খুশি হয়েছেন বিধায়কের এই কাজ দেখে। তারা বলেন, সুবোধ অধিকারী যে কথা দিয়েছিলেন সেই কথা তিনি রেখেছেন। ‌তিনি বদলায় বিশ্বাসী নন। তিনি সকলকে নিয়েই চলতে চান।

তিনি বলেন,বিরোধীরা তো থাকবেই। বিরোধীরা না থাকলে ভুল ত্রুটি ধরাবে কে? আমি সকলের বিধায়ক।

তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হবার পর দেখা গেল যে, তিনি সকলের কাছে গিয়েছেন। কারোর বাড়িতে পুজো হোক কিংবা কোনো অনুষ্ঠান, তাঁকে যখন যে যেভাবে ডেকেছে তিনি তখন সেখানে গেছেন। তিনি কাউকে হতাশ করেননি। ফলে মানুষ বুঝতে পেরেছেন যে, এই বিধায়ক অন্যান্য সকল বিধায়কের থেকে আলাদা। তিনি সাধারণ একজন মানুষ। যিনি যেকোনো পরিস্থিতিতেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। ‌

২০২২-এর পৌর নির্বাচনের আগে বিধায়ক এবং জনসাধারণের যে সম্পর্ক,সেই সম্পর্ক তিনি এতটাই সহজ করে দিলেন যে, বীজপুরের ৪৭টি ওয়ার্ড মানুষ তাকে উপহার দিলেন।

বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি হালিশহর এবং কাঁচরাপাড়া দুই পৌরসভাতেই প্রতিদিন থাকতেন। মানুষের যে কোন অভাব অভিযোগ তিনি সরাসরি শুনতেন এবং তা সমাধান করতেন। তাই মানুষ এবার তাঁর দলের অর্থাৎ তৃণমূলের সকল প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন।

এমনকি যে মানুষটি একসময় তার বিরোধিতা করেছিলেন তিনিও জিতলেন এবং পৌর নির্বাচনে যারা নতুন মুখ ছিলেন তারাও জয় লাভ করলেন।

বিধানসভা নির্বাচনে বীজপুরের দুবারের প্রাক্তন বিধায়ক বিজেপির হয়ে লড়াই করে ভেবেছিলেন যে তিনি হয়তো ফের জয়লাভ করবেন। কিন্তু তিনি সুবোধ অধিকারীর কাছে হেরে গেলেন কারন সুবোধ অধিকারীর কাছে ছিল সাধারণ মানুষের আশীর্বাদ।
আর সুবোধ অধিকারীর কাজ দেখেই মানুষ এবার তৃণমূলকে ভোট দিয়ে সকল কাউন্সিলরদের জিতিয়েছেন।

অন্যান্য কাউন্সিলর হোক কিংবা শুভ্রাংশু রায়, সকলকেই মেনে নিতে হলো যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারীর জন্যই তারা জয়লাভ করতে পেরেছেন। ‌

শুভ্রাংশু রায় এও বলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত মাথায় না থাকলে তিনি জয়লাভ করতে পারতেন না। বিজেপিতে গিয়ে তিনি বড় ভুল করেছিলেন।