অবতক খবর,৪ মে: ভোট শেষ হয়েছে, ফলাফলও বেরিয়েছে। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আর বীজপুরের ফলাফল তো সকলেরই জানা। ১৩,৯৮০ ভোটে‌ জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুবোধ অধিকারী। এই ফলাফলের পরেই দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস বীজপুরের বিভিন্ন ক্লাব দখল করতে শুরু করেছে। এতদিন যে ক্লাবগুলি বিজেপির অধীনে ছিল সেগুলির দখল নিতে শুরু করেছে তৃণমূল।

কাঁচরাপাড়া ৬ নং ওয়ার্ডের যে ওয়ার্ড অফিস, কমিউনিটি হল, যা এতদিন বিজেপির দখলে ছিল, তা এখন দখল নিতে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু যেহেতু সেটি এতদিন বিজেপির দখলে ছিল তাই সেখানে বিজেপি প্রার্থী শুভ্রাংশু রায়ের নিরাপত্তারক্ষীরা থাকতেন। অর্থাৎ সেই অনুমতি বিজেপি প্রার্থী শুভ্রাংশু রায় নিজেই দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন এই নিয়ে শুরু হয়েছে দুই দলের মধ্যে গন্ডগোল। এই গন্ডগোল আজ নতুন নয়। দীর্ঘদিন এই বিষয়টি নিয়ে গণ্ডগোল চলে আসছে। একপক্ষ বলছেন, বিজেপি প্রার্থী শুভ্রাংশু রায় ওই কমিউনিটি হলটি জোর করে দখল করে রেখেছিলেন। কিন্তু এতদিন কারো সাহস ছিলনা সেটা দখল নেওয়ার।
জানা গেছে, গতকাল বেশ কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা শুভ্রাংশু রায়ের বাড়িতে গিয়ে বলেন যে, এই কমিউনিটি হলটি সর্বসাধারণের। এটি আপনার কোন গোডাউন নয়। এটি খালি করতে হবে। আর ওয়ার্ড অফিসটিও খালি করতে হবে। কারণ সেটি আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এতদিন আপনি বিধায়ক ছিলেন তাই আমরা কিছু বলিনি। এবার আপনাকে কমিউনিটি হল এবং ওয়ার্ড অফিস দুটোই খালি করতে হবে। জবরদখল আর চলবে না।”
এরপরই দেখা যায় কমিউনিটি হল এবং ওয়ার্ড অফিসের সামনে যে গাড়িগুলি ছিল সেগুলিতে ভাঙচুর চালায় ওই তৃণমূল কর্মীরা। এর পাশাপাশি সেখানে শুভ্রাংশু রায়ের যে ব্যানারগুলো ছিল সেগুলো ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।‌
অন্যদিকে ৬ নং ওয়ার্ডেরই আরেকটি ক্লাব বাণী সংঘ ক্লাব, যা দীর্ঘবছর ধরে বিজেপি দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছিল, সেটারও দখল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
কাঁচরাপাড়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্লাব, জোড়া মন্দির সংলগ্ন লিটিল স্টার ক্লাব। যা বিজেপির ক্লাব নামে পরিচিত ছিল,সেটিও দখল নিয়েছে তৃণমূল। দীর্ঘ বছর এই ক্লাব হীরা মণ্ডলের পরিচালনাধীনে ছিল। কিন্তু নব্য বিজেপির আসার পরে ক্লাবটি তাদের দ্বারাই পরিচালিত হত। ফলাফল ঘোষণার পরের দিন ক্লাবটিকে সাদা রং করে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে এতদিন যাবৎ কাঁচরাপাড়া নবাঙ্কুর ক্লাব পরিচালিত হত প্রাক্তন পুলিশ অফিসার তপন দত্ত দ্বারা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ,তিনি অন্যের জমি দখল করে সেখানে ক্লাব গড়ে তুলেছিলেন। ‌ কিন্তু গতকালই ওই জমির মালিক নিজের জমির মালিকানা নিয়ে নেন এবং ক্লাবটি বন্ধ করে দেন।

এই সমস্ত ঘটনা দেখে বোঝাই যাচ্ছে বীজপুরে বিজেপির যে ক্ষমতা ছিল সেটা এখন আর নেই অর্থাৎ তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ‌ চোখে পড়ার মতো বিষয় হল ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিজেপির একটি মানুষকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কাঁচরাপাড়া ৩ নং ওয়ার্ড স্থিত ভাতৃ সংঘ ক্লাবের‌ সামনে ৩ নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রমুখ শিবানী দেবীর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে তৃণমূলের পক্ষে,এমনই অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

তবে এই সমস্ত ঘটনা দেখে বীজপুরবাসী বলছেন যে,২০১৯ এর ২৩শে মে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বীজপুর তথা ব্যারাকপুর লোকসভায় যেভাবে গেরুয়া বাহিনী সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছিল, এইবার ফলাফল ঘোষণার পর কিন্তু বীজপুর শান্ত রয়েছে। অর্থাৎ কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাধারণ মানুষ আরো বলেছেন, বীজপুরে শান্তি বজায় রেয়েছে। এতে আমরা অত্যন্ত খুশি। আর এই শান্তির পেছনে যার হাত রয়েছে তিনি হলেন আমাদের নবনির্বাচিত বিধায়ক সুবোধ অধিকারী। অন্য দলের মতো তিনিও যদি বদলার মনোভাব রাখতেন তাহলে এই শান্তি বজায় থাকত না। কিন্তু তিনি বদলা নয় বদলের রাজনীতি করেন। তাই তিনি মাইকিং করিয়ে চারিদিকে সকলকে বলেছেন যে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে। ‌তাঁর এই ভূমিকায় খুশি সাধারণ মানুষ। শুধু তিনিই নন, তাঁর দলের অন্যান্য নেতারাও ফলাফল ঘোষণার পর বলেননি যে তারা বদলা নেবেন। কারোর মুখেই এইরকম কোন কথা শোনা যায়নি। উল্টে তারা বলেছেন, এলাকায় তারা শান্তি চান। অঞ্চলের মানুষ সুস্থ স্বাভাবিক থাকুন।