অবতক খবর,২৫ মে,তমলুক: জাকার্তা শহরে বিশ্ব লোক সঙ্গীতের আসরে পটচিত্র ও পটের গান তুলে ধরবেন চন্ডিপুরের গৃহবধূ সায়েরা চিত্রকর। পটচিত্র শিল্পের পসরা নিয়ে জুন ১০ তারিখ পাড়ি দেবে ইন্দোনেশিয়ার উদ্যেশ্যে। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা শহরে ১২ জুন থেকে বসতে চলছে আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভ্যাল ও সেমিনার। গ্রাম বাংলার প্রাচীন শিল্প-সংস্কৃতি পটচিত্র ও পটের গান নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন সায়েরা চিত্রকর।

বাউল যেমন বাংলার লোকসংস্কৃতির শিরায় উপশিরায় মিশে গেছে তেমনি বাংলার পটচিত্র ও পটের গান প্রাচীন লোকসংস্কৃতির আদর্শ উদাহরণ। বাউল আন্তর্জাতিক মঞ্চে বহু কাল আগে থেকেই স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু পটের গান ও পটচিত্র এর সেই পরিচিতি নেই। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা শহরে ১২ থেকে ১৫ জুন চারদিনের এই ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভ্যাল অ্যান্ড সেমিনারে আরবের ‘গাওয়া’, ভেনেজুয়েলার ‘মেরেঙ্গ’, কানাডার ‘ক্যালাতিক’, হাঙ্গেরির ‘বেলা বার্তক’ কিংবা স্পেনের ‘ফ্লেমেঙ্ক’ ফোক গানের সুরে বাউল এর পাশাপাশি এবার পটর গানের সুরের মিলন হবে।

ইন্দোনেশিয়ার এই আন্তর্জাতিক লোকগান লোকসংস্কৃতি উৎসব এবং সেমিনারি বাংলার নদীয়ার ও বীরভূমের বাউল শিল্পীদের পাশাপাশি পটচিত্র ও পটের গান নিয়ে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে যাবেন চন্ডিপুরের গৃহবধূ সায়েরা চিত্রকর। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগ এবং বস্ত্র শিল্প সেইসঙ্গে ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে গ্রামীণ হস্তশিল্প ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বাংলার শিল্পীরা হাজির থাকবেন। বাংলার প্রাচীন লোকসংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে পটচিত্র ও পটের ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে ১০ জুন রওনা দেবেন সায়েরা।

চন্ডিপুর থানার অন্তর্গত হাবিবচক গ্রামের সায়েরা চিত্রকর স্বামী আবেদ চিত্রকরের হাত ধরে পটচিত্র আঁকা ও পটের গান শিখেছেন। সমাজ সচেতনতায় বাল্যবিবাহ ও প্রতিরোধ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পটচিত্র আঁকার পাশাপাশি গান বেঁধে সুর দিয়েছেন এই শিল্পী। এর পাশাপাশি পৌরাণিক বহু বিষয়ে পটচিত্র আঁকা ও পটের গান তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। এর আগে সায়রা চিত্রকর সরকারি উদ্যোগে জেলা ছাত্র যুব উৎসবে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে জেলার সেরা লোক গান শিল্পীর সম্মান পেয়েছেন। এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিভার ছাপ রাখতে চলেছেন।

এ বিষয়ে সায়েরা চিত্রকর জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই অনেক দুঃখ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দিন কেটেছে। পড়াশুনাও বেশি দূর পর্যন্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। স্বামী আবেদ চিত্রকরের হাত ধরে। পটচিত্র আঁকা ও পটের গান লেখা এবং সুর করা শিখেছি। সেই পটচিত্র ও পটের গান নিয়ে বিদেশে প্রথম যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমি আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমার সেরাটা তুলে ধরব। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের শিল্প ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে কিছু শেখার সুযোগ হবে।’