অবতক খবর,৮ জানুয়ারি :: আজ ১৭টি ট্রেড ইউনিয়নের ডাকে, ভারত সরকারের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রায়ত্ব কলকারখানা বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে, বেকারত্ব মোচনের দাবিতে, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের প্রতিবাদে, বিশেষ করে এনআরসি এবং সিএএ-র বিরুদ্ধে জনস্বার্থকে কেন্দ্র করে ধর্মঘটে নেমেছে বামপন্থী দলগুলি।

আজ সকাল থেকেই বামপন্থী সংগঠনগুলি বন্ধের সমর্থনে প্রচারে নামে। তারা সকালে প্রায় ৪০ মিনিট কাঁচরাপাড়া স্টেশনে রেল অবরোধ করে। প্যাসেঞ্জারেরা নেমে এসে অবরোধকারীদের কাছে বিনীতভাবে অবরোধ তুলে নিতে বলেন। কারণ অনেক রোগী এই ট্রেনে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বামপন্থীরা মানবিকতার কারণে অবরোধ তুলে নেন, ট্রেন চলাচল শুরু হয়। যদিও পরবর্তীতে নৈহাটি, শ্যামনগর, ব্যারাকপুরে ট্রেন অবরোধ প্রায় দশটা পর্যন্ত চলে। এখনও ট্রেন চলাচল খুবই অস্বাভাবিক। তবে ট্রেনে যাত্রী নেই বললেই চলে।প্লাটফর্ম শুনশান। সেই হিসেবে ধর্মঘট সফল বলা যেতে পারে এই অঞ্চলে।

অন্যদিকে ভোরবেলা দোকানপাট বন্ধ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁচরাপাড়ার দোকানপাট খুলে যায়। এদিকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত বামপন্থী সংগঠনকে প্রচার করতে দেখা যায়। ‌ তারা গান্ধী মোড়, লক্ষ্মী সিনেমা অঞ্চল,কলেজ মোড়, স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চল এবং কাঁচরাপাড়া পৌরসভা অঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং কি কারণে বন্ধ সে ব্যাপারে স্লোগান তোলেন।

এদিকে জানা যায় যে, কলেজের গেটে যখন বামপন্থী দল প্রচারকার্য নিয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ অবস্থান করে সেখানে পুলিশের সঙ্গে নেতৃবৃন্দের কথা কাটাকাটি হয়। পুলিশ এমনও জানিয়ে দেয় যে এখান থেকে হটে না গেলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করবে। এমন হুমকিরও মুখোমুখি হয় তারা। তবে তাদের মিছিল যে পথ পরিক্রমা করে তার পেছনে সব সময় দুটি পুলিশ গাড়িকে দেখা যায়।

অন্যদিকে সর্বাত্মক বন্ধ হয়েছে হাজিনগর অঞ্চলে। হাজিনগর অঞ্চল একটি মিশ্র এলাকা। এখানে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেন। ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই শ্রমিকশ্রেণী এই অঞ্চলে ধর্মঘট পালন করেছেন, তা প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য জুটমিল,হুকুম চাঁদ জুটমিল সম্পূর্ণভাবে সেখানে বন্ধ সফল। কোন শ্রমিক কাজে যোগ দেয়নি। অকল্যান্ডে, গৌরীশংকর মিলে। আরো দেখা যায়,আইপিপি ইন্ডিয়ান পেপার পাল্প কারখানার গেট সম্পূর্ণ বন্ধ। সেখানকার গেটকিপার আমাদের জানায়, আজকে এখানে সম্পূর্ণ কর্মবিরতি চলছে। কোন শ্রমিক আজকে কাজে যোগদান করেননি।

আমরা সকালে যখন কাঁচরাপাড়া কারখানা অঞ্চলে যাই তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষ কারখানা অঞ্চলসংলগ্ন বিভিন্ন দোকানে চা পান করছেন, গল্প-গুজব করছেন। দুই একজন করে যে কারখানায় ঢুকছেন তাও আমরা দেখতে পাই। অর্থাৎ কাঁচরাপাড়া অঞ্চলে এমনই একটি মিশ্র ধর্মঘটের প্রবণতা দেখা গেছে।

এদিকে অনেক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা কথা বলে জানতে পারি যে শাসক পক্ষের দিকে থাকতে গেলে দোকানপাট খোলা না রেখে উপায় নেই। ‌কারণ, কোনো শাসক দলের বিষ দৃষ্টিতে আমরা পড়তে চাই না। মনে মনে বন্ধ সমর্থন করলেও বাইরে থেকে আমাদের এটা মেনে নিতে হচ্ছে।

এমনকি একটি অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীরা আড্ডা দিচ্ছিলেন তারা বলেন, বন্ধের বিরুদ্ধে আমরা যতই প্রচারে নামিনা না কেন, মানুষ মনে মনে বন্ধ সমর্থন করছে।

অন্যদিকে তৃণমূল নেত্রী আলোরানি সরকারের নেতৃত্বে তৃণমূল সদস্য কর্মীরা বিরোধী প্রচারে কাঁচরাপাড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মিছিল করেন এবং জনসাধারণকে দোকানপাট খোলা রাখতে আবেদন জানান।