অবতক খবর,২৯ অক্টোবর: সাংসদ অর্জুন সিং যে সংগঠন তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি সবসময়ই সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন। রাতদিন তাকে এক ফোনেই পাওয়া যায়। তবে আপাত পরিস্থিতি দেখে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে তার এখন ফোকাস রয়েছে নৈহাটি এবং বীজপুরে। এই দুটি বিধানসভায় সংগঠন মজবুত করতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে দলের কিছু কর্মীরা চাইছেন অর্জুন সিং যাতে বারবার বীজপুরে আসেন এবং বেশি করে সময় দেন। কারণ কর্মীরা ভেবেছিলেন যে বর্তমান নেতা তাদের পাশে দাঁড়াবেন,দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে না। তাই তাদের এখন একটাই ভরসা সাংসদ অর্জুন সিং। এদিকে সাংসদ অর্জুন সিংও তাদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

পুরনো কর্মীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন রক্তদান শিবির,বস্ত্রদান ইত্যাদিতে একবার ফোন করলেই সেখানে সাংসদ ছুটে চলে আসছেন। তিনি আসেন কিন্তু তার পাশে না থাকেন বিধায়ক,আর না থাকেন চেয়ারম্যান। শুধু থাকেন সাধারণ কর্মী,সাধারণ মানুষ এবং পুরনো দলীয় কর্মীরা।

এবার কথা বলা যাক নৈহাটি বিধানসভা নিয়ে। নৈহাটিতে দুর্গা পঞ্চমীর দিনে জর্জ রোডে সার্বজনীন দুর্গাপুজোর যে উদ্বোধন ছিল সেখানে দেখা গেল সাংসদ অর্জুন সিং নিজেই ফিতে কেটে পুজো মণ্ডপ উদ্বোধন করলেন। কিন্তু সেখানে দেখা যায়নি বিধায়ক পার্থ ভৌমিক,চেয়ারম্যান অশোক চ্যাটার্জীকে। এমনকি উপস্থিত ছিলেন না সিআইসি সনৎ দে। কিন্তু উপস্থিত ছিলেন নৈহাটি পৌরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর সহ আইএনটিটিইউসি’র সভাপতি বিষ্ণু অধিকারী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রহড়া বিবেকানন্দ মঠের সম্মানীয় মহারাজ, নৈহাটি পৌরসভার উপ পৌর প্রধান ভজন মুখার্জী, নৈহাটির পৌর পারিষদ কানাইলাল আচার্য, নৈহাটি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৌশিক চক্রবর্তী, বিশিষ্ট সমাজসেবী রানা দাশগুপ্ত, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোনালী চক্রবর্তী নন্দী,বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবাশীষ নন্দী,সমাজসেবী দীপঙ্কর ঘোষ,দিলীপ সরকার,৩০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশীল দেবনাথ এবং তৃণমূল কর্মী সারোয়ার আলী।

তবে এই যে দেখা যাচ্ছে, এতজন কাউন্সিলর তৃণমূল নেতৃত্ব এবং সমাজ সেবীরা তাঁরা যে অর্জুন সিং-এর পাশে এসে হাজির হলেন এতেই আরো একটা অন্যমাত্রার খবর চাউর হয়ে যায় নৈহাটি অঞ্চলে। কারণ টাউন সভাপতি বিধায়ক পার্থ ভৌমিক সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা অনুপস্থিত সেখানে এই সকল নেতৃত্বদের নিয়ে সাংসদ অর্জুন সিং ফিতে কাটলেন, এই ঘটনা রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দেয় নৈহাটির রাজনৈতিক মহলে।

তবে সূত্রে জানা গেছে,বেশ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা বলছেন,”ভূমিপুত্র তথা নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক নিজের অঞ্চল ছেড়ে পুজোর মরশুমে বাইরে গিয়ে বসে থাকছেন, এতে বিরোধীরা নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে,কিন্তু তা তো হতে দেওয়া যাবে না। তাই সাংসদকেই সকল অনুষ্ঠানে আমরা ডাকলাম। কারণ তিনি তো আমাদের দলেরই সাংসদ। মন্ত্রীকে না পেলেও সাংসদকে আমরা পাশে পাচ্ছি। কারণ মন্ত্রীর একটি জায়গা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না, তাকে সমস্ত জায়গাই দেখতে হবে।”

অন্যদিকে সূত্রে আরো জানা যাচ্ছে,”নৈহাটির এক তৃণমূল নেতা কাউন্সিলরসহ অন্যান্য কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে বলেছেন ১৯-এ যা হয়েছে তা আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা যেমন আগেও দিদির পাশে ছিলাম ঠিক সেরকম দিদির পাশেই আছি। আর এই অঞ্চলের একটাই নেতা পার্থ ভৌমিক। তাকে না জানিয়ে তার অবর্তমানে কাউন্সিলরদের সেখানে(উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে,যেখানে সাংসদ উপস্থিত ছিলেন) যাওয়াটা ঠিক হয়নি।”

এইরকম একটি হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ বিভিন্ন কাউন্সিলরদের করা হয়েছে এক নেতৃত্বের তরফে।

এ বিষয়ে যখন কয়েকজন কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তখন তারা বলেন,”দল বিরোধী কোনো কাজ আমরা করিনি আমরা দলের জন্যই কাজ করছি। যে যাই বলুক।”

অদ্ভুত এক রাজনীতি চলছে বীজপুর এবং নৈহাটি অঞ্চলে। আর এর সাথে কোথাও না কোথাও জড়িয়ে পড়ছেন রানা দাশগুপ্ত। যিনি এখনো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে ব্লক সভাপতি হিসেবে জাহির করেন। যেখানে কয়েক মাস আগেই ফেসবুকে দেখা যায় ব্লক সভাপতি নাম ঘোষিত হয়েছে। তবে তৃণমূলের অফিসিয়াল পেজে সেরকম কোনো তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। অফিসিয়াল পেজে পূর্ববর্তী তালিকা অনুযায়ী পুরনো ব্লক সভাপতি অর্থাৎ রানা দাশগুপ্তের নামই রয়েছে।

রানা দাশগুপ্তের কথা অনুযায়ী-‘এক নেতা জোর করে জেলা সভাপতিকে দিয়ে রবি নিয়োগীকে ব্লক সভাপতি করেছেন। কিন্তু সেই নাম দল পাঠায়নি।কারণ জেলাতে নেতাদের ক্ষমতা চলে আর নাম যখন প্রস্তাব হয় তখন অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল পেজে নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি।’

সেই কারণে রানা দাশগুপ্ত এখনো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্লক সভাপতি হিসেবেই নিজেকে জাহির করে চলেছেন।

একদিকে ব্লক সভাপতির নাম ঘোষণা হচ্ছে, অথচ তা তৃণমূলের অফিশিয়াল পেজে ঘোষণা না হওয়ায় তার কোন দাম থাকছে না। অন্যদিকে ব্যারাকপুর অঞ্চলে নেতারা যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা যেমন বিধানসভার চিফ হুইপ নির্মল ঘোষ,জেলা সভাপতি তাপস রায়,মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, সুবোধ অধিকারী, সাংসদ অর্জুন সিং,এত নেতা হওয়া সত্ত্বেও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না। ব্লকে এখনো রবি নিয়োগ ভার্সেস রানা দাশগুপ্ত চলছে,এটা নিয়েও কেউ মুখ খুলছেন না।

তবে রানা দাশগুপ্তকে দেখা যেত আগে ব্লকগুলিতে রাজনীতি করতেন, কিন্তু এখন তিনি শহরেও ঢুকে পড়েছেন। আর এতেই হয়তো চাপে পড়ে গিয়েছেন নেতারা। কারণ তিনি একজন সাংগঠনিক নেতা। গত ২৬ অক্টোবর রানা দাশগুপ্ত নৈহাটি ঋষি বঙ্কিম ব্লকের পলাশী-মাঝিপাড়া অঞ্চলে বিজয়া সম্মিলনী করলেন। সেখানে প্রচুর কর্মী সমর্থকরা উপস্থিত হয়েছিলেন এবং উপস্থিত হয়েছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং। সেখানেও অর্জুন সিং রানা দাশগুপ্তের উদ্দেশ্যে বলেছেন,’আমরা আপনার পাশে আছি।’

ফের ২৭ অক্টোবর জেঠিয়া নান্না হাসপাতালের পাশে এক বিজয়া সম্মিলনী এবং বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান হয় রানা দাশগুপ্তের উদ্যোগে। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং।

দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে লোকসভা নির্বাচন। আর রাজনীতির এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে নৈহাটি, বীজপুর তথা সমগ্র ব্যারাকপুর লোকসভা অঞ্চলের কি হাল হয় এবং এই অদ্ভুত রাজনীতি কোন দিকে যায় তা আগামীতেই বোঝা যাবে। তবে হাল ছাড়েনি অর্জুন সিং। বিরোধীদের এক টুকরো জমিও ছাড়তে চান না সাংসদ। তাই তিনি কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন ময়দানে। তাঁর একটাই বক্তব্য, “আগামী ২০২৪-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে আমরা এই ব্যারাকপুর তুলে দেবো।