নজরুলের জন্মদিবসে তাঁর তেজোদীপ্ত মুখ স্মরণে রেখে

প্রেম ও দ্রোহ পরিপূরক হয়ে গেলে
তমাল সাহা

সমতল থেকে হাঁটতে হাঁটতে দুঃসময় আকাশের দিকে চলে যায়।
সন্ত্রাসে পলায়নরত মানুষ
আকাশ থেকে খসে পড়তে থাকে দ্রুত গতিতে আবার মাটিতে অভিকর্ষজ টানে।
সীমান্তের দিকে ভয়ার্ত অবয়ব নিয়ে ছুটতে থাকে নারীরা শিশুকন্যাদের হাত ধরে
তখন ভেসে ওঠে তোমার শালপ্রাংশু দীপ্ত রূপের মহিমা
চুলের অরণ্যে খেলে যাওয়া
ঝড়ো বাতাসের অসহিষ্ণু ঢেউ।

ধর্মদ্রোহী হয়ে মানবিক প্রেমে
তুমি যখন মন্দির মসজিদ—
পৃথিবীর যাবতীয় উপাসনাগৃহ ভেঙে চুরমার করে দেবার কথা বলো
কবিতায় তোমার কন্ঠে অগ্নিবীণা ও বিষের বাঁশি যুগপৎ বেজে ওঠে রুদ্রমঙ্গলে
তারা বলে উচ্চকিত আওয়াজে কবিতা বাতিল হয়ে যায়
তারা কবিতায় সহজ সরল দার্ঢ্য উচ্চারণ
খারিজ করে দেয়
তারা এই পোস্টমডার্ন অথবা মডার্নপোস্ট কবিরদল–
তারা নাকি এই সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে নয়া কবিতার আবিষ্কারে চিত্রকল্পে ও ভাষ্যে।
প্রকাশ্যে তারা এখন হাঁটু মুড়ে বসে আছে
তোমার স্তুতিগানে ওল্টাচ্ছে সর্বহারা সাম্যবাদী সিন্ধু হিন্দোল ভাঙ্গার গান ফণিমনসা আর রাজবন্দীর জবানবন্দীর পৃষ্ঠা।

প্রেমই ছিল তোমার কাছে দ্রোহ আর দ্রোহেই ছিল তোমার প্রেম।

রক্তস্রোত ছাড়া
সন্ত্রাসের আর কোন চিত্রকল্প হয়?
খিদের আর মহত্তম চিত্রকল্প কি হতে পারে—
ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ চায় দুটো ভাত,একটু নুন… কচিপেটে তার জ্বলে আগুন।
ক্রমাগত ধর্ষিতা হতে থাকে নারী
তখন নারী মর্যাদায় এর চেয়ে সৌন্দর্যময় উচ্চারণ আর কি হতে পারে—
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

এই সব হাড়-হারামি কবিদের দিকে
শ্লেষ ছুঁড়ে দিয়ে তুমি ঘোষণা করো
আমি কবি কুলি মজুর আর কামগারের।
কারার ঐ লৌহ কপাট ভাঙতে চেয়ে জেলখানার কবি হয়ে যাও
তখন এই কবির দল সার্বজনীন কল্যাণ-সৌন্দর্য উপেক্ষা ক’রে
কত সব অবাস্তব নাকি পরাবাস্তব
পংক্তি চয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,
বৌদ্ধিক চেতনায় ডগমগ করে ওঠে কবিতার অস্ত্রোপচার।

মানুষের মর্যাদা, মানুষের খিদে
নিপীড়িতের বেদনা, রাষ্ট্রীয় অত্যাচার ছাড়া জীবনের বাস্তবতা কোথায়?
তুমি আমাদের শেখালেও
এখন আর আমরা
কুলিকামিন-চাষাভুষোর কাব্য লিখি না।

তোমার জন্মদিন-মৃত্যুদিন ছাড়া বাচিকশিল্পীরাও এখন আর
তোমার কবিতার আবৃত্তায়ন করে না।

পার্টি সংগঠক গরাদের ঘানি টানা কলমজীবীই যে আসল কবি
যে জনারণ্য উদ্দাম উত্তাল করে দেয় শাব্দিক বিন্যাসে
সেই সংবাদ শুধু
ক্ষেতে-খামারে কলে-কারখানায় ঘামঝরানো মানুষ
পার্বত্য অঞ্চলের পাথর ভাঙা মানুষ
প্রবল জলস্রোতের বিরুদ্ধে লড়েযাওয়া জলজীবীরাই জানে।

তুমি মানুষের পাশে—
আমরা চিনি তোমাকে।
তুমি কবি হতে আসোনি এই ভুবনে।