অবতক খবর,১১ জুন: কাঁচরাপাড়া শ্রমিক অধ্যুষিত অঞ্চল। কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপ একসময়ে এশিয়ার বৃহত্তম রেল কারখানা এমনই তার পরিচিতি ছিল। এখানে শ্রমিক নেতা নিত্যানন্দ চৌধুরী, জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল। ‌তারা ওয়ার্কশপ রোডে অবস্থিত যে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস, যেটা লাল ঝাণ্ডার অফিস নামে পরিচিত ছিল সেই অফিসে আশ্রয় নিতেন। সেখান থেকে রাজনৈতিক ট্রেড ইউনিয়নের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।

এক কথায় এই কাঁচরাপাড়ার কমিউনিস্ট পার্টি অফিসটি একটি ঐতিহাসিক। কারণ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন বঙ্কিম মুখার্জী, ভবানী সেনগুপ্ত, বিপ্লবী নিরঞ্জন সেন, বিজয় মোদক,শ্রমিক নেতা মনোরঞ্জন রায়, মহম্মদ ইসমাইল—এই সমস্ত ব্যক্তিবর্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাইরে নেতৃবৃন্দ পি সুন্দারাইয়া,বি টি রণদিভে, পি রামমূর্তির মতো নেতারা এই অফিস ঘুরে গিয়েছেন।

রাজনৈতিক দল‌ হিসেবে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকাণ্ডকে সরাসরিভাবে বন্ধ করে দিতে না পারলেও পরোক্ষভাবে তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। ‌সেইজন্য সেই পাটির ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিকতাকে গুরুত্ব না দিয়ে সেই পার্টি অফিসের সামনে একটি বিশাল দক্ষিণ ভারতীয় খাদ্যসামগ্রী, ফাস্ট ফুড দোকান তৈরি করার মদত দেওয়া হয়েছিল এবং দীর্ঘ বছর ধরে এই দোকানটি চলে আসছে। ফলে পার্টি অফিসে যাতায়াতের পথটি সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ‌

কিন্তু অস্বীকার করার কোন উপায় নেই রাজনৈতিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টি অর্থাৎ যেটা এখন সিপিএমের দপ্তর বলে পরিচিত তারা সেই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। এটি নিশ্চিত একটি লজ্জার বিষয়।

যাই হোক, বর্তমান লকডাউনের পরিস্থিতিতে সেই দোকান বন্ধ আছে এবং বোঝা যাচ্ছে যে দোকান টি আর সেখানে বসবে না। বিভিন্ন সূত্রের খবর বর্তমান শাসকদল চাইছেন কোনো রাজনৈতিক দল সে বিরোধী দল হলেও তাদের মুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে। বিরোধী হলেও কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা হস্তক্ষেপ করতে চান না।

বর্তমান তৃণমূলের এক বরিষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, এটি যে আমলে যার মদতে নির্মিত হয়েছিল, তিনি এখন অন্য রাজনৈতিক দলে চলে গিয়েছেন। ফলত,তারা এখন সক্রিয় হয়েছেন, যে অন্যায় কাজটি করা হয়েছিল সেই অন্যায় বোধ থেকে তারা পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইছেন।

ইতিমধ্যেই দেখা গেছে যে, সিপিএম পার্টির দপ্তরের সামনে রেলিং দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমান অবস্থাটি সিপিএম পার্টির অনুকূলেই যাচ্ছে।

আরো দেখা গেছে, দোকানটি যারা পরিচালনা করতেন তারা ফেসবুকে এটি ঘোষণা করে দিয়েছেন যে,এই দোকানটি উঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কি কারণে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা বলছেন না এবং কারা উঠিয়ে দিয়েছে সেটাও তারা বলেন নি। এছাড়াও তারা তাদের ব্যবসা যে ঘরমুখী করেছেন এবং যারা তাদের ব্যবসার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চান বা জিনিসপত্র খাদ্যসামগ্রী কিনতে চান,তবে তারা যেন তাদের বাড়িতে অর্ডার দিতে পারেন। ‌এমন তারা প্রচার দিয়েছেন ফেসবুক মারফত।

অর্থাৎ একটা রাজনৈতিক ঐতিহ্য হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টি তথা সিপিএম তার পুরানো জায়গা ফিরে পাচ্ছে। এটা রাজনৈতিক শুভ লক্ষণ।