আমি সময়কে খাই, সময় আমাকে খায়
স্বৈরাচারী সময়কে নিজের চোখে দেখি
তোমরাই বলো,
এ সময়ে চুপ থাকা কি আমাকে মানায়?

পুলিশের গাড়ি ছুটছে
তমাল সাহা

করাল দংষ্ট্রা রাত্রি খড়্গ হাতে নেমে আসে গাঙ্গেয় উপকূলে। স্বৈরতান্ত্রিক বাতাস এলোমেলো করে দেয় গাঙ্গেয় জীবন।
শোভাবাজার-চিৎপুর এলাকা জুড়ে গোপন শলাপরামর্শে মেতে ওঠে বটতলা থানার বড়বাবু এবং রাষ্ট্রের দামামা বাজানো পুলিশ।

তিন শতাব্দীর চেয়েও প্রাচীন থানার প্রাচীরের গাত্রে শিল্পীর হাতে আঁকা কলকাতার শিল্পকলা সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে— ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশরাজের উর্দিপরা পুলিশের স্থিরচিত্রগুলি।

৭০ দশকের সন্ত্রাসের পুলিশি ঐতিহ্য বজায় রাখতে হবে,
এই মনে করে অবিস্মরণীয় স্মৃতিগুলি নড়েচড়ে ওঠে পুলিশি মস্তিষ্কের ভেতর….
এইসব রাষ্ট্রীয় মস্তানেরা জাগিয়ে তোলে ভারি ভারি টায়ারে মোড়া পুলিশের দুর্দান্ত গাড়িগুলির চাকা।
মধ্যরাত্রের অন্ধকার ধাঁধিয়ে দ্রুতবেগে ডানা ঝাপটে উড়ে চলে অমারাত্রির নিশাচর।
গাড়ির বনেটের নিচে দুদিকে তীব্র সার্চলাইট জ্বলে, ভয়ংকর সব ডাইনির মুখে বসানো যেন বিদ্যুৎবাহী আলো বিচ্ছুরিত চোখ!
বটতলার বেশ্যাপাড়ার পাশ দিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটতে থাকে গাড়িগুলি মঙ্গল পান্ডের পাড়ার দিকে।

রাত্রি পৌনে তিনটেতে আহ্বান অথবা স্বাগত ঘন্টা ইংরেজি ভাষায় যাকে বলে কলিংবেল বেজে উঠলে কেঁপে ওঠে জনক-জননীর প্রৌঢ় হৃৎপিণ্ড, ঘরের বাতাস দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে।
গণতান্ত্রিক অধিকারকে অপমানিত করে সংবিধানের পাতা খুলে তার উপর দাঁড়িয়ে পড়ে পুলিশের বুট।
চারিদিকে পুলিশি টহল হাতে দশ ব্যাটারির টর্চের আলোয় সে এক অন্য রাত্রির উৎসব–তটস্থ পাড়া।

তিনি বলে দিয়েছেন, এটাই শেষ কথা!
বালের ওয়ারেন্ট! শালা! পুলিশ যাকে চায় তাকেই ইচ্ছেমতো উঠিয়ে নিয়ে যাবে। বেরিয়ে আয় শালা!

পুলিশ তুলে নিয়ে যায় কাকে?
কে জানে কোথায় নিয়ে যাবে নাকি গায়েব করে দেবে তারা!
গণতন্ত্র ক্রমাগত ধর্ষিতা হতে থাকে
যোনিপ্রদেশ থেকে অবিরত ঝরতে থাকে রক্তধারা….

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর তীরে ঘনীভূত লবণাম্বু হাওয়া ডেকে ওঠে,
জাগো, জাগো, উপকূলবাসী! দুয়ারে ছয়লাপ পুলিশ…
প্রপিতামহেরা শমীবৃক্ষে রেখে গেছে অস্ত্রসমূহ
হাতে তুলে নাও, মুখোমুখি দাঁড়াও অহর্নিশ।