বিনয় ভৰদ্বাজ,অবতক খবর, ৮ই সেপ্টেম্বর ::  নৈহাটিতে ফের গোষ্ঠী কলহ তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগেই অবতক খবরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর প্রকাশিত হয়েছিল।‌ তখন বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের উদ্যোগে সকল নেতা-নেত্রীদের এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানানো হয়েছে যে,তাদের মধ্যে কোন গোষ্ঠীর কলহ নেই। তারা দলের স্বার্থে এক রয়েছেন। তবে এই ঘটনার বেশিদিন হয়নি তার মাঝেই আবার গোষ্ঠী কলহ ইতিমধ্যেই প্রকাশ হতে শুরু করে দিয়েছে।

করোনা অতিমারির পরিবেশে বড় দলীয় কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেনি তৃণমূল। তবে সামনে নির্বাচন, তাই দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন নেত্রী। এই দলীয় কর্মসূচি বিভিন্ন বিধানসভায় আলাদা আলাদা করে পালন করছেন বিভিন্ন পৌর প্রতিনিধিরা ও এলাকার নেতা-নেত্রীরা। নৈহাটিতেও বিশাল ভাবে সকল পৌর প্রতিনিধি যারা ইতিমধ্যে প্রাক্তন প্রতিনিধি হয়েছেন, এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের যৌথভাবে কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল।  তবে নৈহাটি তৃণমূল কংগ্রেসে আয়োজিত এই সভায় চেয়ারম্যান ও দু-চার জন কাউন্সিলর ছাড়া আর তেমন কোনো নেতা-নেত্রীদের দেখা যায়নি।

কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় উল্লেখযোগ্যভাবে অনুপস্থিত এলাকার সদ্য প্রাক্তন যুব সভাপতি সনৎ দে। তাছাড়াও মঞ্চে দেখা যায়নি পার্থ দাস গুপ্ত, যুবনেতা বিষ্ণু অধিকারী, ছাত্রনেতা বিকাশ ও মহিলা নেত্রী বা ওয়ার্ডের জন প্রতিনিধিদের।

প্রথমেই কথা বলা যাক পার্থ দাশগুপ্তকে নিয়ে। পার্থ দাশগুপ্তকে নৈহাটি তৃণমূলের অসময়ের বন্ধু বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সুসময়ের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই বলেই প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন সভা ও মিটিং দেখে। বলা হচ্ছে নির্বাচনের পর যে দলের ভাঙ্গন তৈরি হয়েছিল তাকে জোড়া লাগাতে এই পার্থপ্রতিম দাশগুপ্তকে ব্যবহার করা হয়।‌ তারপরে দুধের মাছির মত তাকে দল থেকে বের করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ, সত্যিই পার্থবাবু অর্থাৎ টুটুল বাবুর প্রয়োজনীয়তা তেমনভাবে নেই। কারণ তাকে আর কোন দলীয় বৈঠক হোক বা কর্মসূচি, তাতে আমন্ত্রণও জানানো হয় না।

এ নিয়ে পার্থবাবু অর্থাৎ টুটুল দাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি পরিষ্কার জানান, নৈহাটি তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অশোক চ্যাটার্জী তাকে দেখতে চান না, তাকে দলে চান না। তাই তিনি তাকে কোন অনুষ্ঠানে বা কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানান না। টুটুল বাবু আরো জানান, মাঝেমধ্যে বিধায়ক জোর করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ডাকলেও সেই মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যান অশোক চ্যাটার্জী। এর ফলে একটি দৃষ্টিকটু পরিবেশ তৈরি হয়। এছাড়াও তিনি জানান, হয়তো দলে তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। তাই তাকে আর প্রয়োজনও মনে করা হয় না। তাই তিনি এখন দল থেকে সরে দাঁড়াতে চান দলের স্বার্থেই।

নৈহাটী তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত বিক্ষোভ সভায় অংশগ্রহণ করেননি দাপুটে যুবনেতা বিষ্ণু অধিকারী। এই বিষয়টি যুবসমাজকে বিজেপি থেকে তৃণমূল মুখী করেছিল। বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের হাত ধরে নৈহাটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যুবক-যুবতীরা তৃণমূলে যোগদান করেন ও একটি শক্তপোক্ত যুব সংগঠন গড়ে তোলেন। কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে বিষ্ণু অনুপস্থিত।

এখন প্রশ্ন, কেন বিষ্ণু সমস্ত যুবসমাজকে এক সূত্রে বেঁধে আবার মঞ্চ থেকে অনুপস্থিত হয়ে গেলেন? কেন এখন দলের থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন? তার মূল কারণটি হচ্ছে বিষ্ণু সংগঠন শক্তপোক্ত করলেও এখন বিষ্ণুকে যুব সমাজের নেতৃত্ব থেকে আলাদা সরিয়ে রাখতে চায় দল। সরাসরি কথা বলতে গেলে বিষ্ণুকে যুব সভাপতির দায়িত্ব দিতে চায়না দল। তবে বিষ্ণুকে ফোন করে দলে উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি ব্যাপারটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন শরীর খুব একটা ভালো নয়।

উল্লেখ যোগ্যভাবে বিক্ষোভ মঞ্চে দেখা যায়নি সদ্য-প্রাক্তন নৈহাটি যুব সভাপতি ও একমাত্র নেতা যিনি ২৩শে মে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের রেজাল্ট বেরোনোর পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাননি। তিনি অন্যদের মতো দল ত্যাগ করেননি বা বিজেপিতে যোগদান করেননি। বরং এলাকায় থেকে তৃণমূলের ঝাণ্ডা ধরে রেখেছেন। সনৎ দের দল নাছাড়ার কারণে তার স্ত্রী পুত্রকে নিগৃহীত হতে হয়েছে। সনৎ দে ইতিমধ্যে বারেবারে বলেছেন তিনি দলের অনুগত সৈনিক।দল আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমাকে যতটুক লোক চেনে শুধুমাত্র তৃণমূলের জন্য। তাই আমি দলের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে কেন উপস্থিত হননি এই বিক্ষোভ মঞ্চে, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মন মেজাজ ভালো নেই এই মুহূর্তে,এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না,মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছি।

এখন প্রশ্ন সনৎ বাবু হঠাৎ করে দল নিয়ে কথা বললেই মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত এমন কথা বললেন কেন? এমনকি ঘটল যে তিনি দলের জন্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সূত্রে জানা গেছে, সনৎ বাবু বর্তমানে দলের কোন পদে নেই, তাই এখন তার কাছে যে ছেলেছোকরারা থাকত, যে ভিড় হয়ে থাকত, তার অনুগামীরা এখন পালটি মেরে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। তার পার্টি অফিস এখন প্রায় ফাঁকা। শতশত ছেলেকে ধরে রাখা এখন তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। তাই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

তবে সূত্রে জানা গেছে যে, সনৎ বাবুকে ইতিমধ্যে পদে বসাতে আগ্রহী হয়েছেন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। নৈহাটির ৩১টি ওয়ার্ডকে দুভাগ করে অর্ধেক এলাকার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব সনৎ বাবুকে দেওয়ার কথা ভাবছেন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলে সূত্রে খবর। জানা গেছে, তিনি নাকি জেলা কমিটিকে নৈহাটির দুজন সভাপতি করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের এই প্রস্তাবকে ভালোভাবে গ্রহণ করছেন না দীর্ঘদিন ধরে নৈহাটির মাদার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদে থাকা অশোক চ্যাটার্জী।যেহেতু অশোক বাবুর ক্ষমতা অর্ধেক খর্ব করে দেওয়া হচ্ছে, তাই তিনি তাঁর ছেলের জন্য একটি দলে বড় পদ চেয়েছেন।

 

এ নিয়ে তিনি জেলা কমিটি,জেলা সভাপতি ও অন্যান্যদের কাছে বারে বারে দরবারও করেছেন বলে সূত্রে খবর। অশোক বাবুর এই বারে বারে জেলার নেতার কাছে ছুটে যাওয়া নিয়ে নেহাতই হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপে হাসাহাসিও চলছে।

দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি ছাত্রনেতা বিকাশসহ সহ বিভিন্ন প্রাক্তন কাউন্সিলরদেরও। সবমিলিয়ে নৈহাটি তৃণমূলের ভেতরের অবস্থা যে খুব খারাপ তা বিক্ষোভ মঞ্চের ছবি দেখেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।