অবতক খবর,৩ মার্চ,নদীয়া:- যুগের পর যুগ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন হিন্দু মুসলিম বৈষম্য নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির পুঁজি বৃদ্ধি করে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন জিইয়ে রেখে হয়ে ওঠে নেতা। ঠিক এমনই এক অসহিষ্ণু পরিবেশের মধ্যে বেনোজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করল চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া শিবির পাড়ার বাসিন্দারা। সেখানে হিন্দু-মুসলিম নয় সকলেই বাস করেন আন্তরিক প্রতিবেশী হিসাবে। ধর্মের থেকেও বড় আন্তরিকতা এবং মানবিকতা নিয়ে।

এই গ্রামেরই পঞ্চাশোর্ধ বাসিন্দা রবীন দে হকারি পেশায় মনোহারী দ্রব্য বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েন দিনের আলো ফুটতেই, ফেরেন গভীর রাতের অন্ধকারে। বাকি দুই ভাইয়ের একজন থাকেন বিদেশে অন্যজনেরও আর্থিক পরিস্থিতি অত্যন্ত দুরবস্থা। তাই দাদার মতন সেও সারাদিন ঘুরে বেড়ায় অর্থ উপার্জনের জন্য। বাড়িতে অষ্টআশি বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা মা, গতকাল পরলোকগমন করেন তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই। দারিদ্রতার কারণে তাদের কাছে মোবাইল না থাকার কারণে মায়ের মৃত্যু সংবাদ জানানো সম্ভব হয়নি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। তবে চুপ করে বসে থাকেনি কেউই।

এলাকাবাসী রাজু খালিফা, আব্দুল কাদের, জিন্দার শেখ, ঝন্টু দফাদার, পরিজাত শেখ জহিরুলরা পাড়া থেকে সকলে মিলে আর্থিক সাহায্য তুলতে বেরিয়ে পড়েন। খবর দেওয়া হয় দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজনদের। তাদের আপ্যায়ন, হিন্দু শাস্ত্র মতে মৃত্যুর পর পরলৌকিক ক্রিয়াকর্মের কোন ত্রুটি রাখেনি তারা। বেলা বেড়ে যাওয়ার কারণে মালশা ঘুনসি, হবিস্যির বাজার, ঘাট থেকে স্নান করে নতুন ধরা কাঁছা সমস্ত আয়োজন করে, নিজেদের তৈরি করা বাশের খাটিয়াসহ কাঁধে তুলে নেন বাসন্তী দেবীর মৃতদেহ। দৈবক্রমে ইতিমধ্যে রবিন বাবু এসে উপস্থিত হন, তিনি জানান শরীর খারাপ এবং মনের অস্থিরতার কারণেই অর্ধেক কাজ করে ফিরে এসেছেন।

তবে এ দুঃসময় প্রতিবেশীদের এভাবে পাশে দাঁড়ানো তার কাছে নতুন নয়, তিনি বলেন এই গ্রামে সকলেই সকলের আত্মীয়। অন্যদিকে রাজু খলিফা, আব্দুল কাদের রা জানায় ধর্ম যার যার নিজের তবে তা পালনে কর্তব্য সকলের। যদি উনি আসতে দেরি করতেন তাহলে আমরাই মুখাগ্নি করতাম, কারণ সেই অধিকার এখনো নষ্ট হয়নি আমাদের এলাকায়।
অবশেষে জলঙ্গী নদীর ধারে কাঠের আগুনে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী সমস্ত অন্তোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয় বৃদ্ধার মৃতদেহর।