অবতক খবর,৬ সেপ্টেম্বর,দক্ষিণ দিনাজপুর: দেব কুলের ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকর্মা পুজোর আগেই বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের মৃৎশিল্পীরা।
মাঝে হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপরেই পূজিত হবেন শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মা। ঋকবেদের দশম সূক্তে বিশ্বকর্মার কাহিনী বর্ণিত রয়েছে। বলা হয়েছে, এক সময় পৃথিবীতে যখন জলভাগ আর স্থলভাগ একসঙ্গে মিশে ছিল এরপর বিশ্বকর্মা তাঁর জ্ঞানচক্ষু দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ধীরে-ধীরে পৃথিবীতে সব কিছু গঠন করতে থাকলেন। এই বিশ্ব আসলে তাঁরই কর্মযজ্ঞের একটি অংশ, তাই তিনি বিশ্বকর্মা। বিশ্বকর্মার বাহন হাতি, অনেকেই মনে করেন প্রবল শক্তির হিসেবেই হাতি সংযোগ হয়েছে।

আবার কথিত আছে পুরীর জগন্নাথ দেবের মূর্তি বিশ্বকর্মার হাতেই তৈরি। শাস্ত্র মতে মহিষাসুরকে বধের সময় দেবী দুর্গার হাতের ধারালো অস্ত্র ও বিশ্বকর্মা তৈরি করেছিলেন।

প্রত্যেক বছরই কলকারখানা থেকে শুরু করে ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান দোকান এমনকি বাঙালির ঘরে ঘরে শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মা পূজিত হয়ে আসছেন। আগামী ১৭ই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো যদিও এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। বছর ধরে কোরোনা আবহের কারণে একাধিক কল কারখানা বন্ধের মুখে। পাশাপাশি নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালির অর্থনৈতিক অবস্থাও দীর্ঘ লকডাউন এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন অনেকটাই খারাপ। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন মৃৎ শিল্পালয় গুলিতে। গত ২ বছর আগেও বিশ্বকর্মা পুজোর আগে বছরের এই সময়টা মূর্তি তৈরির চরম কর্মব্যস্ততা দেখা যেত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর, রশিদপুর, বালুরঘাট, কুমারগঞ্জ, তপন, হরিরামপুর সহ বিভিন্ন এলাকার মৃৎশিল্পালয় গুলিতে। কয়েক বছর আগেও দক্ষিণ দিনাজপুরের তৈরি বিশ্বকর্মা প্রতিমা পৌঁছে যেত জেলা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জেলার বাজার ও বিভিন্ন বড় বড় কলকারখানায়। কিন্তু গতবছর বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি করেও একাধিক প্রতিমা বিক্রি হয়নি।এবারও প্রতিমার অর্ডার নেই বললেই চলে। এই রকম পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়েই খুবই কম সংখ্যক বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি করেছেন মৃৎশিল্পীরা। যদিও এক আকাশ ভর্তি অনিশ্চিত আশঙ্কার মেঘ দানা বেঁধেছে। এবারও শেষপর্যন্ত বিশ্বকর্মা প্রতিমা বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন জেলার বিভিন্ন মৃৎশিল্পালয়ের কারিগরেরা। আদতেও এই পরিস্থিতি কোনদিনও পাল্টাবে কিনা জানেন না তারা। ইতিমধ্যেই শিল্পীরা অনেকেই পেশা বদলে ফেলেছেন। যে কজন পেশার টানে পরে রয়েছেন তারা শুধু চাইছেন অন্তত এবারের বিশ্বকর্মা পুজোয় প্রতিমা বিক্রি হোক কিছুটা হলেও ভালো সময় আসুক মৃৎশিল্পীদের।