অবতক খবর , উত্তর দিনাজপুর :     অসমের মেখলাকে কেন্দ্র করে গোয়ালপোখরে অনেক সম্ভবনা নিয়ে সেই শিল্পের কারখানা গড়ে উঠলেও এখন তা করোনার গ্রাসে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ মেখলার কারখানা। ফলে রুটিরুজিতে টান পড়েছে মালিক সহ অন্যান্য কর্মীদের। কাজ হারিয়ে এখন তারা চরম সমস্যার মুখোমুখি ।

মিরাজ নামে জনৈক কর্মী জানান, কাজ বন্ধ। তাই এখন তার কোনরকমে সংসার চালাবার মতো আর্থিক অবস্থা নেই। অবিলম্বে সরকার থেকে এই শিল্প চালু করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তথা উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয় দাবি জানিয়েছেন তিনি। একটি মেখলা কারখানার মালিক মিস্টার আলম জানান, এখানকার তৈরি মেখলা সুদূর অসম এবং অরুণাচল প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় রপ্তানি করা হতো। কারণ সেখানে এসবের প্রচুর চাহিদা। সেই হিসেবে যোগান দেওয়া হতো। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার সময় থেকেই বন্ধ হয়ে যায় তাদের এই কারখানা। তাদের সংগ্রহে প্রচুর মেখলা রয়েছে কিন্তু তারা তা বিক্রির বাজার পাচ্ছেন না। তাই সব বন্ধ এখন। রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য কর্মচারীদের অর্থ জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। এর জেরে চরম সমস্যার মুখোমুখি তিনি। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে শিল্পের মাধ্যমেও যে একাধিক রাজ্যের মধ্যে মেল বন্ধন ঘটানো যায় তাই যেন প্রমাণ করে দেখিয়েছিল এক দঙ্গল তরুণ কারিগর।অসম ও অরুণাচল প্রদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মেলবন্ধন ঘটাতে এক বছর আগে উদ্যোগী হন উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর ব্লকের একদল যুবক। অসমের ঐতিয্যবাহী মেখলা শিল্পকে এলাকায় নিয়ে এসে একাধারে যেমন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কাজের জন্য ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রথাকে বন্ধ করতে এগিয়ে এসেছিলেন তারা। এলাকায় মেখলা শিল্পকে কুটির শিল্পের অন্যতম জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিলেন এই যুবকদল। তাদের এই ঐকান্তিক প্রয়াসকে প্রশংসা না করে এড়িয়ে যেতে পারেনি প্রশাসনও।

 

একসময়ে কাজের সন্ধানে গুজরাটের সুরাট,কলকাতা,নাগপুর চলে গিয়েছিল মহ: বসির,শেখ আজহার,মহ: খুদাবক্সরা। সেখানে গিয়েই অসমের বিখ্যাত মহিলাদের পরনের মেখলা তৈরি করার পদ্ধতি রপ্ত করেন তারা। দীর্ঘদিন ভিনরাজ্যে কাজ করার পর পরিবারের টানে ফিরে আসেন এলাকায়। সেখানেই নিজেদের শিখে আসা মেখলা তৈরির শিল্পকে কাজে লাগানোর কথা মাথায় এনে কারখানা গড়ে তোলেন তারা। অন্য রাজ্যে থাকা এই শিল্পে এলাকার দক্ষ যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গোয়ালপোখরে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন তারা। তারপরই একে একে তাদের তৈরি করা মেখলার চাহিদা তুঙ্গে পৌছায়। বর্তমানে এক একটি কারখানা থেকে মাসে ১২০০-১৫০০ মেখলা বানাতে সক্ষম এই যুবকেরা অসম, পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার পেয়ে তা সরবরাহ করছিলেন।

ওই যুবকরা দাবি করেছিলেন, বাইরে গিয়ে কাজ করার চেয়ে বাড়িতে থেকে কাজ করায় অনেকটাই সুবিধা হচ্ছে তাদের। বাড়ির মহিলারও এই কাজে হাত বাড়িয়েছিলেন। ফলে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা পাচ্ছিলেন যুবকেরা। এই কুটির শিল্প প্রশাসনের নজরে আসতেই সাধ্য অনুযায়ী সরকারি সাহায্যের আশ্বাসও পেয়েছিলেন। স্বভাবতই কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কুটির শিল্পের নতুন দিশা দেখালেও আচমকা তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশ গোয়ালপোখরের যুবকেরা।