অবতক খবর সংবাদদাতা :: ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাটপাড়া।‌ দুই গোষ্ঠীর বোমাবাজির জেরে গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। তাকে গোলঘর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতদিন ধরে ভাটপাড়ায় যে বোমাবাজি হয়ে এসেছে তার পেছনে কোনো না কোনোভাবে এলাকার দাপুটে নেতা ও বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং-এর নাম ছড়াতো।‌ তবে এই বোমাবাজিতে এবার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর নাম জড়িয়েছে। তৃণমূলে এখন খাওয়াখায়ী আর এলাকা দখলের লড়াই শুরু হয়েছে। তাছাড়াও চলছে ব্যাপক ভাবে তোলাবাজির কারবার।

‌আসলে কয়েক মাস আগে তৃণমূল একজোট হয়ে বিজেপির হাত থেকে ভাটপাড়া পৌরসভা দখল করেছিল। ‌এই নিয়ে মাঝেমধ্যে চলছিল তৃণমূল বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ। গত ৪-৫ মাস ধরে অর্জুন সিং এই এলাকায় শান্ত হয়ে বসে আছেন। এখন তৃণমূলে একের পরে এক নেতা গজিয়ে উঠেছেন।‌ সেখানে তৃণমূলের পৌরসভার চেয়ারম্যানকে হবেন এই নিয়ে লড়াই চরমে ওঠে। এই লড়াইকে সামনে রেখে তৃণমূল দল সরাসরি দুই ভাগে ভাগ হয়ে। একপক্ষ পার্থ ভৌমিক এর অনুগামীরা এবং আরেক পক্ষ ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল আবজার্ভার ও বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের লড়াই সর্বসমক্ষে চলে আসে।

নির্মল বাবু অর্থাৎ নান্টু ঘোষ যেহেতু ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের আবজার্ভার তাই তাঁর নির্দেশেই তৃণমূল ভাটপাড়া চেয়ারম্যান ও তৃণমূল সভাপতির নাম চূড়ান্ত করা হয়। তিনি সেখানে দুজন মহিলা সভাপতির নামও ঘোষণা করেন। কিন্তু পার্থবাবুর হস্তক্ষেপে পরে মহিলা নেত্রীদের বদল করে নতুন নেত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়।

সবমিলিয়ে দুই নেতার জেদাজেদি ও দলীয় অন্তরকলহের ফলে দলের অবস্থা শোচনীয় এই অঞ্চলে। এখন ভাটপাড়ার দায়িত্ব থেকে নির্মল ঘোষ ও পার্থ ভৌমিককে সরিয়ে জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক সুবোধ অধিকারীকে নতুন অবজারভার করা হয়েছে। সুবোধ ভাটপাড়ার পাঁচজন নেতাকে নিয়ে বৈঠকও করেন। তাদেরকে নিজের নিজের এলাকার দায়িত্ব পালন করার কথা জানিয়ে দেন। বর্তমানে দুই সভাপতি টিঙ্কু ঘোষ এবং জীতেন্দ্র সাউ ওরফে জীতু সাউ।

অন্যদিকে নির্বাচনের আগে সোমনাথ শ্যামকে এলাকার কনভেনর করা হয়েছিল। এখন আরেকজনকে তার সহযোগী হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এখন এলাকায় সোমনাথ শ্যাম অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে উঠছেন বলে এলাকার দলীয় সভাপতিদের সাথে বিরোধ বাড়ছে ও তাদের লড়াই সামনে চলে আসছে।

এলাকার এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা জানান যে অর্জুন সিং-এর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তৃণমূলে যোগদান করে এলাকার সমস্ত মস্তান বাহিনী। ‌আর এইভাবেই জিতেন্দ্র চৌধুরীও অর্জুনকে ছেড়ে সোমনাথ শ্যামের হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান করে। এই জীতেন্দ্র চৌধুরী লোকেরা তার হয়ে এলাকায় তোলাবাজি করে। তারই সঙ্গী কানা স্বপন একজনের কাছে নতুন বাড়ি করার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।‌ সেই ব্যক্তি তোলা দিতে অস্বীকার করায় সে মানিকপীর এলাকায় দলবল নিয়ে বোমাবাজি করে। এই বোমাবাজির ফলে একজন মহিলা আহত হন।

বোমাবাজির পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন জিতুর এলাকার মানুষ। অবশেষে অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় তারা। পুলিশ এলাকায় পৌঁছে এলাকার নিয়ন্ত্রণে আনে এবং তদন্ত শুরু করে । অবশেষে কানা স্বপনকে চাপে পড়ে আত্মসমর্পণ করতে হয়। জানা গেছে, সোমনাথ শ্যামকে ধরেই আত্মসমর্পণ করে কানা স্বপন। এই নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

অন্যদিকে এলাকার সভাপতি জিতু সাউ পরিষ্কার জানিয়েছেন যে,কোন বেআইনি কার্যকলাপ তিনি আর এলাকায় চলতে দেবেন না। গুন্ডা মস্তানদের বদমাইশি বরদাস্ত করা হবে না। তিনি জানান, ভাটপাড়ার নতুন অবজারভার তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, এলাকায় মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাই তাঁর কথা অনুযায়ী এলাকার কোন গুন্ডা বাহিনীর আর দখলদারি চলতে দেবেন না।‌

ভাটপাড়ার দলীয় চেয়ারম্যান ধরমপাল গুপ্তা জানান, তোলাবাজি নিয়ে ব্যাপক গন্ডগোল হয়েছে। গুন্ডাবাহিনী বাড়াবাড়ি করছে। এতেই এই গণ্ডগোলের সৃষ্টি। পুলিশ ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ‌তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বাকিদেরও নাম বেরিয়ে আসবে।তিনি আরও বলেন যে গুন্ডাগিরিতে যদি আমাদের দলের কারুর নাম আসে তাহলে তাকেও ছাড়া হবে না। তিনি বলেন আমাদের নতুন অবজার্ভার সুবোধ অধিকারী পরিষ্কার বলেছেন ভাটপাড়ায় কোনো গুন্ডাগিরি চলবে না। তবে এই গুন্ডাদের যারা ছত্রছায়া দিচ্ছেন তাদের দিকে পার্টি নজর দেবে, এমনটাই তিনি মনে করেন।