বিনয় ভরদ্বাজ,অবতক খবর, ৪মার্চ : তৃণমূল ছাড়লেন বিধায়ক ও দমদম ব্যারাকপুর জেলা সভাপতি ও নেতা তাপস রায়। গত ১লা মার্চ তিনি দমদম-ব্যারাকপুর জেলা সভাপতি সহ দলীয় সমস্ত পদ থেকে আগেই পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি । আজ বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্কের ইতি টানলেন বলে জানালেন তাপস রায়।

তিনি বলেন, দলের কোন কাজকর্মের সঙ্গে বিগত ৫২ দিন ধরে কোন সম্পর্ক নেই। তিনি জানান,গত ১২ ই জানুয়ারি আমার বাড়িতে হানা দিয়েছিল। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে কোন নেতা-নেত্রী তাঁর পাশে দাঁড়াননি। এনিয়ে এক শব্দ খরচ করেনি দল। এতে তিনি মর্মাহত। তিনি একুশে ফেব্রুয়ারি ফের একবারের জন্য বরানগর পৌরসভার কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাপস বাবু জানান তিনি সংসদ সৌগত রায় ও নেতা কাউন্সিলরদের এই মিটিংয়ে দলের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ও অপমান নিয়ে জানিয়েছিলেন। দলে তিনি উপেক্ষিত এবং অপমানিত, তাই তিনি আর এরপর কারো সাথে দেখা করবেন না ও পুরসভায় আসবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এসব শোনার পরেও সাংসদ সৌগত রায় সেই একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে একবারের জন্যও তাঁর কোনো খোঁজ নেন নি। এ নিয়ে মুখ খোলেননি দলের কোন নেতাও।

তাপস বাবু সাংবাদিকদের জানান যে তিনি ভীষণভাবে অপমানিত এবং ভারাক্রান্ত। তিনি আরো বলেন, দলের নেতাদের চরম দুর্নীতি ও সন্দেশখালি কান্ড নিয়ে ভীষণভাবে তিনি মর্মাহত । তিনি বলেন যে, গত ৫০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে তিনি যুক্ত। উত্তর কলকাতাতেই তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। তিনি তিনবারের বিধায়ক। কলকাতার কাউন্সিলর, উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদও তিনি সামলেছেন। এছাড়াও তিনি বিধানসভায় নির্মল ঘোষের সাথে মুখ্য সচেতকের দায়িত্বও পালন করেছেন। গত ২০১৫ থেকে তাঁকে দলে কোণঠাসা করার কাজ শুরু হয়। তাঁকে উত্তর কলকাতার সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সভাপতি করা হয়। তারপর থেকেই সুদীপবাবু তাঁকে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে বৈঠকে বাদ দিয়ে এসেছেন একবারের জন্যও তাঁকে ডাকা হয়নি। তাঁর উপর সেই ২০১৫ থেকেই মানসিক আঘাত আনা হয়। তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা শুরু হয়।

তাপস বাবু জানান, এই দল আমার জন্য নয়। তাঁর দাবি,যাদেরকে দলে শোকজ,সাসপেন্ড করার কথা তারা বহাল তবিয়তে আছেন। কিন্তু যারা দলের প্রতি অনুগত,দলের জন্য সৎ ভাবে কাজ করছে তারা উপেক্ষিত লাঞ্ছিত এবং কোনঠাসা।

অভিমানী তাপস বাবু আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় শেখ শাহজাহানের ইডি অভিযান নিয়ে মুখ খুলেছেন। কিন্তু তাঁর বাড়িতে ইডি হানা হল তা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে কিছু বলতে পারতেন, কিন্তু তিনি বলেননি।

গত ৪৮ ঘন্টা ধরে তাঁর ফোন বন্ধ রাখার পর আজ সকালে তাপস বাবুর মানভঞ্জন করতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কুনাল ঘোষ তাঁর বাড়িতে হাজির হন। ২ ঘন্টা ধরে তাকে বোঝানো এবং মানভঞ্জনের পালা চলে। তারপরেও কোন কাজ হয়নি। আলোচনা সেরে তাপস বাবু সেখান থেকে সটান রওনা দেন বিধানসভার উদ্দেশ্যে। বিধানসভায় পৌঁছে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ পত্র সপে দেন।

নির্বাচনের মুখে তাপস বাবুর এহেন পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন দল। তবে তাপস বাবুর এই দল ত্যাগ এবং বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়ার পর সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রমণ শানিয়েছেন। কল্যাণ বাবু বলেন, উত্তর কলকাতার টিকিট পাওয়ার জন্য এই নাটক করছে তাপস। তিনি প্রথম থেকেই পদলোভী এবং ক্ষমতালোভী। কল্যাণবাবু তাপস রায়কে একের পর এক আক্রমণ করে বলেন, তার দল ত্যাগে কোন প্রভাব পড়বে না। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন তাপস বাবু ঠিক নির্বাচনের আগে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে সঠিক কাজ করেছেন। তাপস বাবুকে দলে যেভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছিল। তাঁর দল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোন রাস্তা ছিল না। আবার কেউ কেউ বলছেন তাপস বাবু হয়তো তৃণমূল থেকে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দিতে চলেছেন। তবে যতক্ষণ তিনি অন্য কোন দলে যোগ না দেন বা অন্য কোন পদক্ষেপ না নেন ততক্ষণ সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা বাংলা।