বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর ::  ব্যারাকপুর লোকসভা অঞ্চল রাজ্যের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকায় হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে গত লোকসভা নির্বাচনে।  অর্জুন সিং কে আয়ত্তে আনতে তৃণমূল সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে । পুলিশি অভিযান করেও অর্জুন সিং কে দমাতে পারেনি সরকার, তখন সুবোধ অধিকারী মাঠে নেমে কোণঠাসা করেন অর্জুন কে। কেড়ে নেন তার নিজস্ব গড় বলে পরিচিত ভাটপাড়া পুরসভা বোর্ড কিন্তু তা সহ্য করতে পারেননি তৃণমূল কিছু নেতা তাই সুবোধকে স্থানীয় নেতাদের থেকে দূরে করতে শুরু হয় ষড়যন্ত্র।

এদিকে সুবোধ অধিকারী নিজেকে যখন বিজপুর এর বিধায়ক ভেবে প্রচারে নেমে পড়লেন তখন থেকেই খেলা শুরু। খেলা খেলতে শুরু করেন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এক তৃণমূল নেতা । তার ঈর্ষার শিকার হন সুবোধ। সুবোধ কে নিয়ে ঈর্ষার প্রধান কারণ তার সুরক্ষা ব্যবস্থা। এই নেতা নিজেকে ব্যারাকপুরের তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতা মনে করেন কিন্তু তার সুরক্ষার জন্য সরকার দুজন কনস্টেবল দিয়েছে অথচ তার থেকে অনেক জুনিয়র, নতুন দলে যোগদান কারী সুবোধের সুরক্ষার জন্য বিশাল ব্যবস্থা। আর এটাই সহ্য করতে পারেননি বা মন থেকে, মেনে নিতে পারেননি এই নেতা।

সুবোধকে স্থানীয় বিজপুর এর ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে তাদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে সুবোধ ছাড়া মঞ্চে কোন কেউই উঠতে পারবেন না। এতে অপমানিত বোধ করতে শুরু করেন স্থানীয় কাউন্সিলর নেতারা। তাছাড়া সুবোধ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেও তাকে তাদের থেকে দূরে করতে শুরু হয় অপপ্রচার। বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চে নেতাদেরকে বারণ করে দেওয়া হয় সুবোধের সঙ্গে মঞ্চে উঠতে। আর এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্থানীয় নেতারা।

সুবোধের অজান্তে বিভিন্নভাবে নেতাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয় যে তাদেরকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না সুবোধ তাই তাদেরকে মঞ্চে উড়তে দেওয়া হয় না। তাদের থেকে জনগণকে দূরে করার চেষ্টা করছেন সুবোধ যদিও এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সুবোধ নিজে কিছুই জানেন না।

এছাড়াও কিছু স্থানীয় কাঁচরাপাড়া হালিশহরের নেতারা নিজেকে সুবোধের খুব কাছাকাছি তুলে এনেছেন আর এই সুযোগে তারা অন্যদের কাছে ভুলভাল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন সুবিধের হয় । সোজাসুজি বলতে গেলে সুবোধের হয়ে স্থানীয় নিচের তলার নেতাদের থেকে দূরত্ব তৈরি করে দেওয়ার হচ্ছে।

এছাড়াও বীজপুরে কোন বড় কর্মসূচির দলের পক্ষ থেকে নেওয়া হলে সেই অনুষ্ঠানে জুড়ে দেওয়া হয় রাজ্যস্তরে নেতাদের। যাতে সুবোধ কর্মসূচির ক্রেডিট না নিতে পারেন। সুবোধ অধিকারীর নিচতলা থেকে কাটতে শুরু করে দেয়া হয় ঠিক এক বছর পূর্বে। ব্যারাকপুরের বড় নেতারা সুবোধ অধিকারীকে শুধু তৃণমূলের হারানো জমি উদ্ধার করার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার শুরু করে দেন। আর এইসব কূটনীতি বা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র না বুঝে সুবোধ নিজেও এই ভাবে ব্যাবহার হয়ে যান দিনের পর দিন বছর ধরে।

চালাকি করে বিজপুর থেকে তাকে সরানোর জন্য ভাটপাড়ার বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে অর্জুনের সঙ্গে লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় সুবোধকে। নেতাদের ষড়যন্ত্র তিনি ধরতে পারেননি আর না বুঝেই সুবোধ তার উপরওয়ালাদের অঙ্গুলিহেলনে কাজ শুরু করে দেন। আর অন্যদিকে বিজপুর স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের থেকে দূরে হতে থাকেন। যতক্ষণে সুবোধ এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পারেন ততক্ষনে নিচের তলার নেতাদের একটা বিশাল বড় গোষ্ঠী তৈরি হয়ে  যায় তার বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে যে ভাটপাড়ার দায়িত্ব সুবোধের উপরে দেওয়া হয় সেখানকার স্থানীয় নেতারা প্রথমেই জানিয়ে দেন বহিরাগত কোন নেতাদের তারা মেনে নেবেন না। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ভাটপাড়া নিয়ে নাক গলানো শুরু করলে এলাকার নেতারা তাকে এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে দেন। ভাটপাড়া স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন গত উপনির্বাচনে বহিরাগত বলেই মদন মিত্র র মতন দাপুটে বাহুবলী নেতাকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল কিন্তু তাকেও হারিয়ে ভূত করে পাঠিয়ে দেন ভাটপাড়ার ভোটাররা। ভাটপাড়ার ভোটারদের এই সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা নেয়নি দল। তা ছাড়াও তাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে কেন্দ্রের বাইরের প্রার্থী কে।

ভাটপাড়ায় অর্জুন ও পবনকে টক্কর দেয়ার জন্য সবচেয়ে বেস্ট প্রার্থী বাছাই করতে হবে তৃণমূলকে কিন্তু তা না করে সুবোধ অধিকারীকে ভাটপাড়া চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে দল।

অর্জুন এর বিরুদ্ধে ভাটপাড়ায় লড়তে গেলে রাজনৈতিক অংক গুলো কে সামনে আনতে হবে। প্রথম অংক হিন্দিভাষী  অধ্যুষিত এলাকা ভাটপাড়া ।তার ওপরে এলাকার সাউ ও সিংহ দুই জাতির সমীকরণ রয়েছে। সিংহ ভোট অর্জুন সিং এর সঙ্গে যাচ্ছে তাই সাউ ও মুসলিম ভোট অর্জুন থেকে আলাদা করতে পারলেই সম্ভব হবে জয়। ভাটপাড়ায় তৃণমূলের দুজন সাউ জাতীয় প্রার্থী রয়েছেন। ধরমপাল গুপ্তা এবং জিতু সাউ। ধরমপাল গুপ্তা বর্তমানে তৃণমূল পার্টির চেয়ারম্যান অথচ জিতু এলাকার সভাপতি। ধরমপাল গুপ্তা কংগ্রেসের ঘরানার রাজনীতি থেকে তৃণমূলে এসেছেন অথচ জিতু  বামপন্থী আন্দোলন থেকে লড়াই করে তৃণমূলে যোগদান করেছেন।

ধরমপাল গুপ্তা এবং জিতু সাউ দুজনের মধ্যে জিতুর স্থানীয় যুবকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বেশি। বিভিন্ন সময়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে কাজের ক্ষেত্রে পৌঁছে যান জিতু।তাছাড়া মুসলিমরা তোকে বেশি বিশ্বাস করে বেশি ধরমপাল গুপ্তার তুলনায়। শুধু তাই নয় নির্দল প্রার্থী হয়ে অর্জুন সিং কে সরাসরি টক্কর দিয়ে ঘোল খাইয়া দিয়েছিলেন জিতু সাউ 2016র নির্বাচনে। এমন অবস্থায় জিতু  ভাটপাড়া অর্জুন কে ভালো টক্কর দিতে বেশি সক্ষম। অন্য প্রার্থী তার ধারে কাছে নেই। কিন্তু এই জিতুকে প্রার্থীর না করে অন্য বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে দল। তাই এই সিট জে আবার অর্জুনের বা বিজেপিকে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিচ্ছে দল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

জানা যাচ্ছে এই সমস্ত কিছু জেনে শুনে বুঝেও দু-একজন জেলা নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে ব্যাপক উলটপালট করা হচ্ছে প্রার্থীদের নির্বাচনী কেন্দ্র । আর এই ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত এবারও দিতে হবে তৃণমূল দল কে।

সব মিলিয়ে ব্যাপক উলটপালট করে বিজপুর থেকে বারাকপুর পর্যন্ত যে সম্ভাব্য তৃণমূলের প্রার্থীরা নির্বাচনে দাঁড়াতে চলেছেন তারা হলেন তৃণাঙ্কু ভট্টাচার্য, রাজ চক্রবর্তী, সুবোধ অধিকারী, দেবরাজ চক্রবর্তী, পার্থ ভৌমিক, এবং উত্তম দাস বা নির্মল ঘোষ।