অবতক খবর,৮ অক্টোবরঃ টানা ১০ ঘন্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে কাঁথি থানার তদন্তকারীরা। একাধিক টালবাহানার পর অবশেষে কাঁথি থানায় শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ কাঁথি থানায় এসে হাজির হন সৌমেন্দু অধিকারী।

টানা ১০ ঘণ্টা তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে সম্মুখীন হতে হয় বিরোধী দলনেতার ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। তিনি কাঁথি পুরসভায় দু’বার পুরপ্রধান ছিলেন। তৎকালীন সময়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। কখনোও কাঁথি শহরে পথবাতি বসানোর নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি! পুরসভার রাঙামাটি শ্মশানে স্টল দুর্নীতি মামলা! সারদা লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি! ত্রিপল চুরি মামলা! একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।

যদিও সৌমেন্দু অধিকারী হাইকোর্ট নির্দেশে ৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত রক্ষাকবচ রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করতে পারবে গ্রেফতার কোনমতে করতে পারবে না। কাঁথি থানার হাজিরা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অনির্বাণ চক্রবর্তী। আইনজীবি রাজ্যের ডিজি কাছে অভিযুক্ত জানিয়েছে।

বস্তুত, কাঁথি পুরসভা ডরমেটরি থেকে ত্রিপল চুরির মামলায় নাম জড়িয়েছিল কাঁথি পুরসভায় দুই কর্মী প্রতাপ দে ও হিমাংশু মান্না। তৎকালীন অভিযোগে নাম ছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। পুলিশ এিপল চুরির মামলা তদন্তের কারণে পুরসভার কর্মী প্রতাপ দে’কে তৎকালীন গ্রেফতার করে। আদালতে নির্দেশে জেলে থাকার পর পরে শর্তসাপেক্ষে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।

এরপর কাঁথি পুরসভা পথবাতি বসানো নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন কাঁথির বাসিন্দা পল্লব দও। এখানেও নাম যুক্ত হয় তৎকালীন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী। পুলিশ তদন্ত নেমে প্রথমে কাঁথি পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ চৌহানকে গ্রেফতার করে। এরপর এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কাঁথির কনোকপুরে বাসিন্দা ভরত প্রধানকে গ্রেফতার করে‌। দিলীপ চৌহান জামিন পেলেও ভরত প্রধান এখনোও কাঁথির জেল হাজতে রয়েছে।

 

কাঁথি শহরে রাঙামাটি শ্মশান স্টল নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন কাঁথি পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। পুলিশ তদন্তে নেমে পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরা , সৌমেন্দু অধিকারী গাড়ি চালক গোপাল সিং, ঠিকাদার সতীনাথ দাস অধিকারী ও তার সঙ্গী অলক সাহুকে গ্রেফতার করে। যদিও শর্তসাপেক্ষে চারজনকে জামিনে মুক্তি দেন কাঁথি মহকুমা আদালত। এরপর আয় বহির্ভূত সম্পত্তির জেরে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরাকে গ্রেফতার করে কাঁথি থানার পুলিশ। সাম্প্রতিক কয়েকদিন আগে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত পান দিলীপবাবু।

 

সাম্প্রতিক কয়েকদিন আগে কলকাতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি দেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। তিনি দাবি করেছিলেন তৎকালীন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীকে একাধিক বিল্ডিং নির্মাণ নিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। এরপর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেন কাঁথি থানার পুলিশ। কাঁথি থানার তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আলিপুর প্রেসিডেন্সি জেলে পৌঁছায়। সেখানেই সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন’কে জিজ্ঞসাবাদ চালায় পুলিশ। সেখানে নাম উঠে আসে পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী।

 

সব কয়েকটি মামলায় আদালতে রক্ষাকবচ চেয়ে দারস্ত হয়েছিলেন সৌমেন্দু অধিকারী। আদালত নির্দেশ দেন গত ৩০ শে নভেম্বর পর্ষন্ত সৌমেন্দু অধিকারীকে কোনভাবেই গ্রেফতার করা যাবে না। তদন্ত কারণে সৌমেন্দু অধিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে পারবে।

 

কাঁথি সংগঠনীক জেলার তৃনমূল সভাপতি তরুন কুমার মাইতি বলেন ” সৌমেন্দু অধিকারীর কাঁথির পুরসভা পুরপ্রধান থাকাকালীন কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন৷ এতদিন পুলিশকে এড়িয়ে চলছিলেন, এবার আদালত নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় থানার তদন্ত করবে৷ এরপরই আইনজীবীকে নিয়ে থানায় হাজিরা দিয়েছেন৷ যেটা হচ্ছে, ভালই হচ্ছে৷ দুর্নীতির কত হয়েছে পুলিশ খুঁজে বের করবে! অপরাধীর কঠোর শাস্তি “।

 

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর আইনজীবী অনির্বাণ চক্রবর্তী বলেন ” কাঁথি পথবাতি দুর্নীতির মামলায় সৌমেন্দু অধিকারীর হাজিরা দেওয়ার জন্য একটি নোটিশ দিয়েছিল। মহামান্য আদালতের নির্দেশ মেনেই সৌমেন্দু অধিকারীর কাঁথি থানাতে হাজিরা দিয়েছেন। মহামান্য আদালতে আইনজীবী দু’ঘণ্টার বেশি জেরা করা যাবে না৷ প্রচুর মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার মক্কেলকে ফাঁসানো হচ্ছে। এটাও একটি মিথ্যা মামলা। জিজ্ঞাসাবাদে পর কার্ষত মক্কেল হেনস্থা করেছে “।