অবতক খবর,১ নভেম্বর: কে বাঁচাবে বীজপুর তথা কাঁচরাপাড়াকে এই দখলদারির হাত থেকে? এখন মনে হয় দখলদারি একটা নতুন প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। যে যখন যেই জায়গাটুকু পাচ্ছে সেটা দখল করে নিচ্ছে। সেটা পুকুর ভরাট হোক কিংবা বেআইনিভাবে জমি দখল অথবা ড্রেনের উপর ঢালাই করে দোকান তৈরি, সরকারি শৌচালয়ের সামনে জায়গাটুকু দখল করে দোকান, এখন এটা একটা নতুন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে পৌর প্রশাসন কিংবা নগর প্রশাসন সকলেই পুরোপুরি নীরব। পৌরসভার যারা ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর রয়েছে তাদের ভূমিকা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। তারা এখন শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের কারণেই এই পদে রয়েছেন, মানুষের জন্য তারা এখন আর নেই।

কিছু কিছু ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরের এমন হাবভাব যে, “আমরা তো আর টিকিট পাব না তাই আর কাজ করে লাভ নেই। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি পকেট ভরা যায় ততই ভালো।”

পৌর নির্বাচন আসন্ন। পৌর নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডের পদ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হওয়ার পর তো তারা আর তাদের পকেট ভরতে পারবেনা,তাই এখন তারা শুধুমাত্র কামাইয়ের দিকেই লক্ষ্য স্থির রেখেছেন,মানুষের দিকে তাদের কোন নজর নেই।

গোটা কাঁচরাপাড়া শহর জুড়ে সরকারের তরফে যে শৌচালয়গুলি তৈরি করা হয়েছিল সেগুলির অস্তিত্ব এখন আর প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ সেগুলো এখন আর প্রকাশ্যে দেখা যায়না। সেগুলো ঢাকা পড়ে গেছে বিভিন্ন বেআইনিভাবে দোকানের পেছনে। কাঁচরাপাড়া লক্ষ্মী সিনেমা, মিলন নগর, লিচুবাগান পেট্রোল পাম্প, কলেজমোড়ের শৌচালয় গুলির সামনে এখন দোকান তৈরি হয়েছে অথবা কিছু মানুষ সেগুলি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছে। ‌

প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতৃত্ব এখন এই বিষয়ে এতটাই উদাসীন, তাদের ভাবখানা এখন এমন, “যে যা খুশি করুক আমাদের কিছু যায় আসে না।” আর এইসব জায়গায় এই বিষয়গুলি নিয়ে যখনই কোন গন্ডগোলের সৃষ্টি হয় তখন তারা সমস্ত দায় চাপিয়ে দেন সাধারণ মানুষের।

অবশ্য এখনকার নেতাদের চরিত্রই হলো নিজেদের দোষ জনগণের ঘাড়ে চাপানো।

কাঁচরাপাড়া কলেজ মোড় সংলগ্ন অঞ্চলে দুটি নতুন দোকান তৈরি হয়েছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি। সরকারি ড্রেনের উপরে তৈরি হয়েছে এই দোকান দুটি। এই দোকান মালিকদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, এখানে তাদের কারা বসিয়েছে? তখন তারা উত্তরে বলেছে, এই ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর বাণীব্রত মন্ডল তাদের সেখানে বসার অনুমতি দিয়েছেন। ‌

এবার আসা যাক আরেক রকম দখলদারির কথায়। কাঁচরাপাড়া স্টেশন থেকে বাগমোড় পর্যন্ত সোজা রাস্তা দিয়ে যদি আপনি যান তবে দেখতে পাবেন, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এই প্রধান সড়কের দুই ধারে যে পিডব্লিউডির ফাঁকা জায়গাটুকু অবশিষ্ট ছিল সেই জায়গাটুকুও এখন আর চোখে পড়ছে না। সেখানে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক বেআইনি দোকান। আর যেখানে দোকান হয়নি, ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সেখানে অন্যান্য দোকানদাররা তাদের দোকান সামনের দিকে নিয়ে চলে এসেছে। অর্থাৎ তাদের দোকানের জিনিসপত্র দিয়ে জায়গাটুকু আটকে দিয়েছে। এখন আর সাধারণ মানুষের হাঁটার ফুটপাতটুকুও নেই।

এবার চলে আসুন কাঁচরাপাড়া ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর উৎপল দাস গুপ্ত। এই অঞ্চলের বিখ্যাত পুকুর জোড়া ছট্ পুকুর। কিন্তু এখন সেখানে গেলেই দেখা যাবে পুকুরের ধার দিয়ে ঢালাই করে সুন্দর সুন্দর দোকান গড়ে উঠেছে।

এবার নজর দেওয়া যাক শহরের বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড এবং সৌন্দর্যের জন্য তৈরি করা উদ্যান গুলির দিকে। বাস স্ট্যান্ড গুলির তো এখন বেহালদশা। সেগুলি এখন আর যাত্রীদের অপেক্ষা করার জন্য উপযুক্ত নয়। দিনের বেশিরভাগ সময়েই বাস স্ট্যান্ডগুলিতে দেখা যায় অল্প বয়সী ছেলে ছোকরারা বসে আড্ডা দিচ্ছে অথবা মোবাইলে গেম খেলছে। অবশ্য যে বাস স্ট্যান্ডগুলি একটু ভালো আর বসার জায়গা রয়েছে সেখানেই এই দৃশ্য দেখতে পাবেন আপনি। আর যে বাস স্ট্যান্ড গুলিতে এইটুকুও নেই সেখানে নোংরা আবর্জনা ভর্তি অথবা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন যে দোকান বা বাড়ি রয়েছে,সেটি এখন তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে গেছে বলা চলে। বীজপুরের বেশিরভাগ বাস স্ট্যান্ড অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন এবং ভগ্নদশা। এদিকে গোটা বীজপুর জুড়ে বিভিন্ন ছোট ছোট জায়গায় সৌন্দর্যায়নের জন্য বিভিন্ন রকম ফোয়ারা, আলো এবং গাছপালা দিয়ে সাজানো হয়েছিল, সেগুলোকে এখন মানুষ নিজের স্বার্থে দখল করে ব্যবহার করছে।

এই হচ্ছে কাঁচরাপাড়া-হালিশহরের পরিস্থিতি। আসতে যেতে সকলেরই এই বিষয়গুলি চোখে পড়ছে। কিন্তু সকলেই যেন দেখেও না দেখার ভান করছে। সে ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর হোক কিংবা স্থানীয় নেতা বা শহরে উচ্চপদে আসীন থাকা বড় নেতা। সকলেই উদাসীন। সকলেরই ভাবখানা এমন যে, “যা হচ্ছে হোক আমাদের তো পকেট ভরা নিয়ে কথা।”

আর সাধারণ মানুষের এইসব নিয়ে কোথাও অসুবিধা হলে তারা অভিযোগ করলে প্রশাসন বা নেতৃত্বরা তাদের বলেন যে, “আমরা দেখছি।”
অথচ তাদের কথাতেই,তাদের নির্দেশে যেই দখলদারি চলছে তা বুঝতে পারছে সকলেই। কিন্তু কারোর কিছু করার নেই।
এখন প্রশ্ন, কি হবে এই বীজপুরের? এইসব দখলদারির দায় কার? কোন দিকে যাবে এই বীজপুর? আর আগামীতে কি পরিস্থিতি হতে চলেছে এই কামাই বাজদের? তারা কি এই ভাবেই অবাধে কামাই করতে থাকবে, নাকি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে কেউ? এইসব প্রশ্নের উত্তর সময়ের জন্য তুলে রেখেছেন বীজপুরের আমজনতা।

নীরব নগর প্রশাসন,থানা প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃত্ব।
বীজপুরের মানুষ তাদের উদ্দেশ্যে বলছেন এবার একটু কামাইবাজি ছেড়ে মানুষের কথা ভাবুন।