জরুরী অবস্থা ৪৮ বছর
অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন

শত শত বিরোধী নেতা, ২৩ জন সাংসদ গ্রেপ্তার। কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক জেলের ঘানি টানে।
বলপূর্বক নাসবন্দীর হানা। মিটিং মিছিল জমায়েত বন্ধ। গ্রিন শার্টের দৌরাত্ম্য। ৪৮ বছর পার হয়ে যায়— কালো দিন কালো রাত, জরুরি অবস্থা জারি,২৫ জুন মধ্যরাত,১৯৭৫।

কালো দিন কালো রাত
তমাল সাহা

অন্ধকার রাত্রি আরো ঘন হতেই
নেমে আসে ঘনতম অন্ধকার।
অন্ধকারে কে যেন চিৎকার করে ডেকে যায়–
রাষ্ট্র কার! রাষ্ট্র কার!
মসনদ, ক্ষমতা হাতে যার, তার।

প্রিয়দর্শিনী তখন শ্রীমতী ভয়ঙ্করী
সিদ্ধার্থশঙ্কর আরো ভয়ঙ্কর!
গ্রিন শার্টের দৌরাত্ম্যে কাঁপে
শহর গাঁ-গঞ্জ তেপান্তর।

মধ্যরাতে ভাঙায় ঘুম,
এ কী দুঃসাহস!
ডেকে তোলো রাষ্ট্রপতিকে জরুরি দরকারি,
আমি স্বৈরাচারী
স্বাক্ষর করুন দ্রুত নির্দেশনামা
সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি।
বন্ধ করতে হবে
বিরোধীপক্ষের প্রতিবাদ-হানদারি।

রাতারাতি গ্রেপ্তার
বিরোধী নেতা সাংবাদিক কলমজীবী।
এ কোনো রাজ!
রাষ্ট্রের হাতে অধিকারের তালা-চাবি।
জেলখানায় স্থান অকুলান।
দেশজুড়ে আতঙ্ক,
বাজতে থাকে সন্ত্রাসের গান।

লেনিন! সে তো নামেই বিস্ফোরণ
পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
সে থাকে তো ভোলগা নদীর দেশে, বহিরাগত
সে আবার কবে গাঙ্গেয জলের মতো বিশুদ্ধ?
রবীন্দ্রনাথ রঙ্গলাল সুকান্ত নজরুল বীরেন চাটুজ্জে আরো সব–বাতিল।
তাদের কবিতা প্রকাশ ব্যানড সেনসর্ড সিল।

নাটক চলচ্চিত্রে রাষ্ট্রবিরোধিতা–
মানেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
শাসকের বিপক্ষে তোমার রচনা
চল্ শালা! ঘুরিয়ে আনি জেলখানা।

এখানে তখন শাসক সিদ্ধার্থশঙ্কর,
আর বহুমুখী দলদাস সুব্রত বঙ্গীয় মাতব্বর।
কী স্পর্ধা! এইসব ভণ্ড নেতার ‘চিত্ত যেথা
ভয়শূন্য…
রবীন্দ্রনাথের উপর চালাচ্ছে কাঁচি
মারছে স্ট্যাম্প সীলমোহর!

উৎপল দত্তের কেন, আরো অনেকের নাটকে রাষ্ট্রীয় মস্তানের হামলা।
জমায়েত-মিছিল-মিটিং-ভাষণ সব বন্ধ–
সময় দৌড়ায় মুণ্ড হাতে জীবন্ত কবন্ধ।

সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি খানাতল্লাশি
জ্যোতির্ময় দত্ত শম্ভু রক্ষিত গৌরকিশোর ঘোষ
বরুণ সেনগুপ্ত কারান্তরালে
অন্য সব নেতারা অন্তরীণ
তারুণ্য পালিয়ে গেল কোথায় কোন আড়ালে!

শত শত নেতার হাতে শেকল
জয়প্রকাশ নারায়ণ, জর্জ ফার্নান্ডেজ
আদবানি,অটলবিহারী বাজপেয়ী রাজনারায়ণ
তেইশ জন সাংসদের হাতে হাতকড়া
দেশজুড়ে পুলিশিরাজ,
কালো গাড়ির সর্বত্র চলাফেরা।

ভয়! ভয় রাজত্ব চালায়,চালায় শাসন।
ক্রমাগত চলমান মৌলিক অধিকার হরণ।
শুরু হয়ে গেল গণতন্ত্রের মাদারি খেল
গণকণ্ঠ রোধ
ডি আই আর, মিসার আগমন
পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বুকে তোলে গর্জন– প্রতিরোধ! প্রতিরোধ!