কাঁচরাপাড়ার রাখাল তো সময়ের ইতিহাস। বাবু ব্লক হার্নেট হাই স্কুল সংলগ্ন তার চায়ের দোকানে মাস্টারমশাই রেল শ্রমিকদের আড্ডা তো ছিলই, ছিল শিল্প-সাহিত্য নাটক বয়স্ক মানুষের ভিড়। সেই রাখাল, রাখাল চন্দ্র দাস চলে গেল চায়ের দোকান ও হালিশহর বারুইপাড়ার বাড়ি ফেলে…

কালের রাখাল
তমাল সাহা

গো-চারণে দেখিনি তাকে, দেখেছি বাবু ব্লকের মোড়ে।
চা!চা! আগুনের সঙ্গে লড়াই করে সেই কাকডাকা ভোরে।

সময় দেখে রাখাল,মহাদর্শক সে ছিল বুঝি!
লিকার দুধ-চা বেচেই তার সাংসারিক রুটিরুজি।
বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ, জরুরি অবস্থা, রেল স্ট্রাইক–সব সব ঘটনা সে জানে.
দেখে দেখে গিয়েছে শিখে জীবনের মানে।

রাখালের চা দোকান মানেই আড্ডা।
সত্তর দশকের দুর্ধর্ষ রাজনীতি
দাদা! একটু আস্তে
কান খাড়া করে আছে খোচরের নাতি!

রাখালের চা দোকান মানেই শ্রমিকদের যাপিত জীবন- আলোচনা।
শঙ্কা ভয়,
কত দিন চলবে আর এই কাঁচরাপাড়া কারখানা!
শ্রমিক সংখ্যা ধীরে ধীরে যাচ্ছে কমে
সংসারটা চলবে কি আর এই বেদমে?

রাখাল! রাখাল! বানাচ্ছে চা।
নাটক মহড়া অভিনয় সিনেমা– এসব নিয়ে রাখালকে পাশে রেখে আমাদের মরা বাঁচা।

দোকানে ছিল স্থানীয় কাগজ মুখোমুখি বেচাকেনা।
তার চেয়েও বেশি খবর ছিল তার জানা।
সে আমাকে বলেছিল একদিন,দিও একটা বিজ্ঞাপন,মুখোমুখি প্রাপ্তিস্থান—
পাশে লিখে দিও,রাখালের চায়ের দোকান।

সে ছিল ঠিকানাওয়ালা—
চা বানাতে বানাতেই রাখাল জিজ্ঞাসা করে, কত নম্বর কোয়ার্টার যেন বললেন?
ও অমুক বাবু!
দিয়ে দেবে সঠিক ঠিকানার হদিশ
আগন্তুক বলে, রাখালবাবু ধন্যবাদ, কুর্নিশ!

সত্তর আশি নব্বই কত দশক পার!
কালের রাখাল এপারে ছিল,খুঁজে পেল নিজের মোকাম
এবার পেরোলো জীবন নদী— চলে গেল ওপার!