আজ রাজীব গান্ধীর জন্মদিবস
অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ

কাঁচরাপাড়ায় রাজীব গান্ধীর আগমন
তমাল সাহা

পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। মধ্যরাতে ভারতবর্ষের বুকে করাত চালিয়ে তাকে দুখণ্ড করে উত্তর-পূর্ব গোলার্ধের এই দক্ষিণ মহাসাগরের দেশে স্বাধীনতা এসেছিল।
সেই ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল কাঁচরাপাড়ায় এসেছিলেন ১৯৫৪ সালে। কাঁচরাপাড়া এরোড্রাম থেকে বতরণ করে জিপে করে থানামোড়-গান্ধীমোড় হয়ে তিনি কল্যাণীতে কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়, কংগ্রেস সভাপতি অতুল্য ঘোষ। সেই অভিধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা জগজীবন রাম, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, বীজপুরর প্রথম বিধায়ক বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী, কাঁচরাপাড়ার কংগ্রেস নেতা নরেন দে। সে এক ইতিহাস! তারপর থেকেই কল্যাণী নগরীর গুরুত্ব বেড়ে যায়।

ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী কোনোদিন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং দুজনাই কাঁচরাপাড়ায় এসেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী আকাশ পথে এরোড্রোম থেকে নেমে কাঁচরাপাড়া হয়ে নৈহাটি ছাইগাদা ময়দানে ১৯৬৯ সালে বিধানসভার অন্তর্বর্তী নির্বাচনী প্রচারে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন আর রাজীব গান্ধীও কাঁচরাপাড়া স্পলডিং মাঠে ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে বক্তৃতা দিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এবং বীজপুর বিধানসভা কংগ্রেস প্রার্থী বিমল দত্ত মুখোমুখি

পাঞ্জাবে অমৃতসর মন্দিরে খালিস্তান আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্লুস্টার অপারেশনের (৬ জুন,১৯৮৪) কারণে ইন্দিরা গান্ধী নিজ বাসভবনে দেহরক্ষী দ্বারা নিহত হয়েছিলেন আর শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে তামিল নিধনে ভারতীয় শান্তি রক্ষী বাহিনীর সহযোগিতার কারণে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরাম্বুদুরে বক্তৃতাদানের সভায় মানব বোমা বিস্ফোরণে রাজীব গান্ধী নিহত হয়েছিলেন।

ভারতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দুজন প্রধানমন্ত্রীর পরপর এভাবে খুন হয়ে যাবার ঘটনা ঐতিহাসিক এবং আন্তর্জাতিক।

কাঁচরাপাড়া বাগমোড় অঞ্চলে কোনোদিন এঁদের মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য। একদা তার ভক্তজনেরাই আরো উন্নয়ন প্রদর্শনের কারণে সেই দুই মূর্তিকে সম্পূর্ণ আড়াল করে বাস স্টপ তৈরি করে। বীজপুরের জনগণের কাছ থেকে ইন্দিরা ও রাজীবের প্রতিমূর্তি সম্পূর্ণ আড়ালে চলে যায়। তাঁরা অদৃশ্য হয়ে যান। কথায় বলে আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড। ২০২২ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুদিনে এই উন্নয়ন মার্কা অপকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয় পোর্টাল মিডিয়া অবতক সরব ও সোচ্চার হওয়ায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের টনক নড়ে।

শেষ পর্যন্ত ২৩ ডিসেম্বর২০২২ দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিমূর্তি সাফসুতরো করে তা যেন বীজপুরবাসীর সম্পূর্ণ দৃশ্যমান থাকে তার ব্যবস্থা করা হয়। এই কর্মটি সম্পন্ন করে বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী তাঁর দায়বোধের পরিচয় রেখেছেন। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেতা প্রবীর সরকার, খোকন তালুকদার, দীপন দত্ত প্রমুখ।