কাঁচরাপাড়ায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সানাইবাদক বিসমিল্লাহ খান। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। আমার শ্রদ্ধাঃ

২১ আগস্ট ২০০৬। সানাইয়ের যাদুকর মহান ভারতীয় শিল্পী বিসমিল্লা খান প্রয়াত হন। ১২ আগস্ট’২০ লখনউ হাদহা সরাইয়ের ভিক্ষমশার লেনে তাঁর বাড়িটি ভেঙে দিয়েছে রোগী সরকার। এটি একটি হেরিটেজ বিল্ডিং– হিন্দু-মুসলিম সংহতির মর্যাদা পেয়েছে। এটি কারা করেছে? এতো গেস্টাপোদের কাজ! এখান তৈরি হবে কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স। এর চেয়ে আশ্চর্যের আর কী হতে পারে!

বিসমিল্লাহ সাহেব ভারতবর্ষের চারটি অসামরিক সম্মানেই পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও ভারতরত্ন- এর শিরোপা অর্জন করেছিলেন।

ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা দিবসে নিজস্ব সৃজনশৈলীতে বাজিয়েছিলেন মঙ্গল রাগ। আর প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে সানাইয়ে কাফি রাগ বাজিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।

এই বিসমিল্লাহ খান ১৯৫৫ সালে কাঁচরাপাড়ায় এসেছিলেন। তিনি প্রখ্যাত সিংহওয়ালা বাড়ি যা ওয়ার্কশপ রোডে অবস্থিত ছিল সেই বাড়িতে এক বিবাহ অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপস্থিত হয়েছিলেন। সে বাড়ি নন্দী বাড়ি নামে খ্যাত। এই বাড়ির ডাক্তার ভূতনাথ নন্দী, যিনি শিবানী আরোগ্য নিকেতনের চিকিৎসক ছিলেন, তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র অমূল্য চন্দ্র নন্দীর বিয়ের অনুষ্ঠানে তিনি সানাই বাজিয়েছিলেন। বাড়ির সামনে নহবত বসেছিল। সেখানে তিনি সানাই বাজিয়ে গিয়েছেন। অমূল্য নন্দী কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতির পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। ১৫ আগস্ট,২০১৯ তিনি বিধাননগর, সল্টলেকের বাড়িতে প্রয়াত হন।

কাঁচরাপাড়ার উন্নয়নে এই বাড়ির একটি ভূমিকা রয়েছে। অঞ্চলে গোষ্ঠবিহারী নন্দী সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত। পৌরসভার উপেন্দ্র মাতৃসেবাসদন-মেটার্নিটি বিল্ভিং, শিবানী আরোগ্য নিকেতন নির্মাণ এই পরিবারের অবদান। এই বাড়ির সন্তান বিজয়বসন্ত নন্দী অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং কাঁচরাপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

যাই হোক,এই বিয়ের অনুষ্ঠান বিসমিল্লাহ সাহেবের আগমনের কারণেই শুধু উল্লেখযোগ্য নয়, এই বাড়িতেই কলকাতার সুবিখ্যাত ব্যান্ড “মেহবুবা ব্যান্ড”ও এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে স্বাগত জানিয়েছিল। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গে কাঁচরাপাড়ার একটা ইতিহাস রচিত হয়ে গেছে।

সানাইওলা

তমাল সাহা 

বিসমিল্লাহ খান

তিনি নাকি আর নাই!

হিন্দু বিয়েতে বসেছে নহবত

তিনি বাজিয়ে চলেন

মিলন-সানাই।

ঐ নাকি তার সমাধি!

সমাধি পরে জ্বলে চিরাগ।

সুরে সুরে বেজে চলে

ভারতীয় বাতাসে

তার কন্ঠে মধুর রাগ অনুরাগ।

আনন্দ-বিষাদ দুই সুরেই

তিনি সানাই বাজান।

সে তো জীবনের

এক অবিমিশ্র গান।

ঐ দেখো ভারতীয়

গ্রাম-গঞ্জ পেরিয়ে

সানাইয়ে সুর

কন্ঠে তুলে হেঁটে যান

বিসমিল্লাহ খান।