অবতক খবর,১লা এপ্রিল: লকডাউন শুরু হওয়ার পরদিন থেকেই বীজপুর এলাকা এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। এই এলাকার বিভিন্ন সংস্থা,ক্লাব সংগঠন তো বটেই, ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন সাহায্য নিয়ে মানুষের পাশে উপস্থিত হচ্ছেন তারা। সংস্থাগত ভাবে উদ্যোগ তো উল্লেখযোগ্যই, এককভাবে যারা উদ্যোগ নিচ্ছেন জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি দায় ও দায়বদ্ধতা প্রমাণিত হচ্ছে।

কাঁচরাপাড়া পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, লিচুবাগানের নবাঙ্কুর ১০ হাজার ১ টাকা, রজনীবাবূ রোগের বলাকা ১০ হাজার টাকা রাজ্য ত্রাণ তহবিলে দান করেছে।

কাঁচরাপাড়া উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিগত দৃষ্টান্ত রেখেছেন চন্দন রায়। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাস্ক,চাল,ডাল মানুষের মধ্যে দু তিনদিন ধরে বিতরণ করেছেন।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন গোপাল পোদ্দার এবং তার পরিবার। তার পুত্র মার্শেলো পোদ্দারের জন্মদিনটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িতে উৎসবের দিনে পরিণত না করে তিনি প্ল্যাটফর্মবাসীদের সেদিন পাতপেড়ে খাইয়েছেন। অর্থাৎ বিভিন্নভাবে এই অঞ্চলের মানুষ এই সংকট মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

একটি সংস্থা সেনগুপ্ত অ্যাপার্টমেন্ট, তারা উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সবাই যখন চাল, ডাল,মাস্ক দিচ্ছেন তখন তারা কাঁচরাপাড়ার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে মানুষকে স্যানিটাইজেশন করছেন। এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ।

করোনার যে ভয়াবহতা তাতে আমাদের একটা শিক্ষা দিয়েছে যে আমরা এক হতে পেরেছি। যে মাস্ক,যে স্যানিটাইজার,যে চাল,যে ডাল,যে বিস্কুটের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে তার গায়ে কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল যেমন তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, আগুনখোর বিপ্লবী– লেখা থাকছে না। অর্থাৎ করোনা নিজে ভয়াবহ রূপ ধারণ করলেও মানুষের মধ্যে সাম্য এনে দিয়েছে।

কেউই বলছে না এটা তৃণমূলের আলু, কেউ বলছে না এটা সিপিএমের চাল,কেউ বলছে না এটা বিজেপির খাবার প্যাকেট। এটি একটি সুলক্ষণ।

সমস্ত রাজনৈতিক দলই নিজেদের পরিচয় নিয়ে নেমে পড়লেও তারা রাজনৈতিক প্রচার দিচ্ছেন না। এটি ভালো লক্ষণ।

তাহলে করোনা মানুষের মধ্যে সমতা সত্যিই কি তৈরি করতে পেরেছে? সমস্ত মানুষ যখন এক হয়ে বাঁচতে চাইছে তার মধ্যেও সূক্ষ্ম কৌশলে রাজনীতি চলছে। চলছে না এটা বলা যাবে না। কোন কোন দল মাস্ক দিচ্ছে গেরুয়া রঙের। কোথাও কোথাও আলুর বস্তা যখন নামানো হচ্ছে বা আলুর বস্তা বা খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আসা হচ্ছে রিকশাভ্যানে করে, দেখা যাচ্ছে তাতে তৃণমূলের বিশাল ফ্লেক্স লাগানো রয়েছে।

করোনা আমাদের কি করুণা করেছে জানিনা। মানুষ সবাই একসঙ্গে বাঁচতে চাইছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও আত্মপ্রচার, নিজেকে বড় দেখানোর মনোভাব থেকে যাচ্ছে। করোনা সম্ভবত মনের ভেতর জমে থাকা এই হিংসা দ্বেষ,এই সংকীর্ণ রাজনীতি হটাতে পারবে না।

বিষয়টি হচ্ছে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ভোটবাজির রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি করে নিচ্ছে দলবাজরা। এরা মাকাল ফল। ওপরে ঝকঝকে ভিতরে ছাই।

করোনাও এদের কাছে নিশ্চিত এই বিষয়ে হার স্বীকার করেছে। সে যেন বলছে, আমি মানুষের প্রাণ নিতে পারি, কিন্তু মানুষের মন থেকে এই দ্বন্দ্ব, হিংসা,বিদ্বেষ, ঈর্ষা দূর করার ক্ষমতা আমার নেই।এখানে আমি অসহায়। পশ্চিমবঙ্গের তিনি সবাইকে হটিয়ে যে দাপাদাপি ও মিডিয়ায় যে প্রচার দিচ্ছেন তা করোনা নির্মূলের চেয়ে ভোট প্রচার সর্বস্ব হয়ে উঠেছে।