আজ জাতীয় সংবাদমাধ্যম দিবস

কন্ঠস্বর

তমাল সাহা

কার্তিকের হিমেল জ্যোৎস্নায় ধান কাটা মাঠে বিস্তীর্ণ আলো ছড়িয়ে পড়ে। নীলাম্বরী কৃত্তিকা নক্ষত্র জ্বলজ্বল করে অগ্নিকোণে কিন্তু গভীর স্তব্ধতায় রাত্রি নামে ভারত মহাসাগর তীরে, বঙ্গোপসাগরীয় উপত্যকায়। তুমি কি দেখতে পাও? অন্ধকারেরও একটি রং থাকে, থাকে তার বন্ধকরা নিজস্ব একটি স্বর।

রৌদ্রাক্ত বেলায় পথঘাট হাটেবাজারে হিরন্ময় আলো ছড়িয়ে পড়ে। প্লাটফর্মে ট্রেন এসে থামে। ট্রেন আপ ডাউন দুদিকেই যায়। দুদিক থেকেই সবজিওলি মাসিরা শাক সবজির গাঁটরি মাথায় প্লাটফর্মে নামে।

তুমি প্রভাতী ভ্রমণে নদীর পারে গিয়ে দেখো ধর্ষিতার লাশ ভেসে যায়। অরণ্যের আঁধারে পথ হাঁটতে গিয়ে দেখো, বামদিকে গুম করা লাশ পড়ে আছে।

ফিরতি পথে আনাজপাতি সওদা করো, পেটের দানাপানি কিনে আনো। সামগ্রীর দাম বাড়ে, তোমার মূল্য বাড়ে না।

শাসক কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেবে এ কে জানে না? সেই সত্তর দশকে কবি সাংবাদিকের মুণ্ডু কেটে নিয়ে চলে যায় রাষ্ট্র। কবন্ধ শরীর লোপাট করে দেয়। জেলখানার ভেতরে কত সরব কন্ঠ স্তব্ধ করে দিয়েছিল থার্ড ডিগ্রি প্রয়োগ করে। তা শুধু কুঠুরির দেয়াল জানে। স্মৃতি তোমার ধূসর হয়ে গেছে!

জরুরি অবস্থার রাতে গরাদের শিকের ভেতর মুখগুলির টুকরো টুকরো ছবি তুমি দেখেছিলে, তোমার মনে পড়ে? সাদা আমি কালো আমির দৌরাত্ম্য তুমি দেখো নি। শুধু কন্ঠনালীকে ভারী বুটে চেপে ধরে তারা। ইন্দিরা একাদশীর পৃষ্ঠা ওল্টাওনি তুমি। চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির– ব্যানড সিলমোহরের ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়েছিল রবীন্দ্রনাথ।

এবার বসন্তে লাল শিমুল পলাশের গাছ বন্ধ্যা হয়ে যাবে কিনা জানিনা তবে এই হিমেল রাতে চুম্বনে উষ্ণ হতে আমি ভয় পেয়ে যাই।

হঠাৎ যদি উঠল কথাকে কি পুলিশ ডাকবে? সংখ্যালঘু ইউটিউবারকে ডেকে পুলিশ কি কড়কে দেবে, নাস্তানাবুদ করবে, হুমকি ধমকি দেবে অথবা ওই বাংলার বার্তাবাহককে কি গুণ্ডা দমন শাখা লাল বাজারে গিয়ে কোনো সেটিং করে নিতে বলবে?

শোনো মর্ত্যবাসীরা! শোনো গঙ্গাপুত্র গাঙ্গেয়সকল!

কোথায় স্বরধ্বনি নেই?

মেঘ বৃষ্টি বজ্র বিদ্যুৎ অরণ্য প্রত্যেকেরই নিজস্ব কণ্ঠস্বর আছে। মন্দ্র কণ্ঠস্বর, জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর, বজ্রবাহী কন্ঠকে কি স্তব্ধ করা যায়?

গণকন্ঠের উল্লাস, জনকল্লোল তরঙ্গ হয়ে মেতে উঠেছে হাওয়ায়!