২০ জুন আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু দিবস। এখনো মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া। মানুষকে পালিয়ে বাঁচতে হয়। ডিটেনশন ক্যাম্প নামে গোরু-ছাগলের খোঁয়াড়ে থাকতে হয়। হায়, মানুষ?
উদ্বাস্তু দিবসে দুটি কবিতাঃ
তমাল সাহা
এক
খামু কি
রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাচ্ছে
লক্ষ লক্ষ ঘুমকাতুরে চোখ—
সূর্য ওঠার আগে পেরোতে হবে সীমান্ত,
না হলে চিনে ফেলবে তাদের—
উঠবে রব,ঐ তো মানুষ পাইল্যে যায়!
হায়রে আমার মানুষ!
মুখ দেখাতে ভয় পায়।
আলোর কাছে হার হবে জেনে
মুখ লুকায়।
ক্ষমতার দাপট দেখো, মানুষ পালায়!
মাথায় বাক্স-পেটরা,বগলে গোটানো মাদুর
মায়ের বাঁ-কোলে শিশু, ডানহাতে পোঁটলা
সাত পুরুষের ভিটে, মাঠঘাট, বাঁশবাগান, পদ্মপুকুর, তুলসী মঞ্চ, মন্দির,দরগা,মাজার,
মরা-নদী পিছনে পড়ে থাকে।
ফিরে ফিরে দুটি চোখ কাকে যেন খোঁজে,
অথচ মাথায় ঘোরে কতো দ্রুত সীমান্ত পেরোনো যায়!
অনন্ত পৃথিবীতে কারা সীমান্ত বানায়?
অন্ধকারে ফিসফিস শব্দ শোনা যায়…
আমাগো কই লইয়া যাও?
যামু কোনখানে?গিয়া খামু কি?
অখণ্ড পৃথিবী খণ্ড খণ্ড হয়ে যায়…
খামু কী? খামু কী?—
প্লুতস্বর হয়ে ভাসতে থাকে,
উড়ে যায় হাওয়ায় হাওয়ায়…
দুই
পরিচয়পত্র
একটা পেট
তার জন্য মানুষকে
এতো মাথানিচু করতে হয়!
মানুষকে এতো অপমান?
এই তো ছোট্ট একটা মাথা!
একটু মাথাগোঁজার ঠাঁই—
এই বিশাল পৃথিবীতে জায়গার
এতোই অভাব?
তুমি দেখেছো
ডিটেনশন ক্যাম্পের খোঁয়াড়!
ছেলেপুলে নিয়ে অসহায় মা-বাপ
কেমন গাদাগাদি করে
তাকিয়ে আছে তোমার আমার দিকে!
প্রতীক্ষা শিবির!
কার প্রতীক্ষা?কিসের প্রতীক্ষা?
দয়ার দান ভিক্ষের ভাতের জন্য থালাহাতে কেমন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে
হা ভাত! তোর জন্য মানুষের আজন্ম লাইন
শিশুদের চোখমুখগুলো একবার দেখো
ঠিক তোমার নিজের সন্তানের মুখের আদল।
তোমার বৃদ্ধা মায়ের বেশভূষা না হয় আরো একটু ভালো কিন্তু মুখের ঐ বলিরেখায় কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছো?
শূন্য থালাহাতে হাঁটুমুড়ে ফ্যালফ্যালে চোখ—
দুকোণ বেয়ে গড়িয়ে যায় নীরব জল
তুমি কাকে শনাক্ত করতে চাও?
এ কি কোনো বেওয়ারিশ লাশ!
অজ্ঞাত মৃতদেহ!
মানুষের আবার পরিচয়পত্র লাগে নাকি?
সে তো মানুষ!
আর তার ঠিকানা?
প-য়ে পৃথিবী! পৃথিবী! পৃথিবী!
রাষ্ট্র! তুমি আজ খুব হিম্মৎ দেখাও
কার হিম্মতে তুমি হিম্মতওয়ালা?
এই পৃথিবী মানুষের
এই জল স্হল অন্তরীক্ষ মানুষের
রাষ্ট্রের ক্ষমতা নেই
পৃথিবী থেকে মানুষকে হটাবার…