অবতক খবর, বারাকপুর: মেয়ে মানেই জন্মানোর পর হতাশ। কালো হয়েছে না ফর্সা হয়েছে তা যাচাই করা। যদি কালো হয় তাহলে বাড়ির লোকের থেকে পাড়ার লোকের বেশি কষ্ট হয়! কারণ ওরা ভাবে মেয়ে কালো হয়েছে ওর বিয়ে হবে না, ওকে কেউ পচ্ছন্দ করবে না, পছন্দ হলেও বাবার অনেক টাকা পয়সা যৌতুক দিতে হবে। এবং কালো হলেও বাবা-মায়ের রাতের ঘুম হারাম হবে। আগেই বিয়ের দুশ্চিন্তা করবে। মেয়ে যখন ছোটবেলা থেকে একটু বড় হয়ে ওঠে তখনই তার মা বাবা চিন্তা করে আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করবো, অনেক শিক্ষিত করবো, যাতে নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই তৈরি করতে পারে । মেয়েটি যখন স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় ভাবে তখন প্রথম সিঁড়ি কি করে পার করবো? তার অনেক চিন্তা থাকে! এবং সেই মেয়েটি যখন পরীক্ষায় পাশ করে যায় আবারও তার চিন্তা থাকে আমি দ্বিতীয় সিঁড়ি পাড় হবো কি করে? সেই মেয়েটি ভাবে আমি যদি পাশ করতে না পারি তাহলে আমার বাবা মা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। এই ভাবতে থাকে মেয়েটি । অনেক ছোট থেকে কষ্ট পেয়ে মেয়েটি বড় হয়। সে ভাবতে থাকে রোজকার এই অশান্তির চাইতে একটু শান্তি পেতে চাইতো। কিন্তু মেয়েটি ভাবতো কবে পাবো সুখের দেখা! সে জানতো না তার ভাগ্যে কি লেখা রয়েছে? কিন্তু অনেক কষ্টে দিন কাটে তার । নেমে আসে তার জীবনে শুধুই অন্ধকার! সে এখনও বেঁচে আছে পৃথিবীর এককোণে, শুধু একটু আলোর আশাতে। বসে বসে সে দিন গুণে যায় কিন্তু সে তো বুঝলো না তার কপালে তো সুখই নেই, শুধু আছে তার একরাশ বুকভরা দুঃখ।  ওই মেয়েটি যেটুকু আশা ছিল সব ধুয়ে মুছে শেষ হয়ে যায় । সে সবাইকে ভালবাসতে চায় । কিন্তু ওর ভালবাসা বা ওকে কেউ বুঝতে পারতো না , কেউ ওকে দাম দিত না। সবাই ওকে অবহেলা করতো। লাঞ্জনা আর বদনাম দিতো। তবুও সেই মেয়েটি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতো, ঈশ্বরকে ডাক দিত দিন রাত, তার কাছে প্রার্থনা করতো। কিন্তু ভগবানও তার কথা শুনতে পেতো না এবং বিনিময়ে তাকে বুকভরা বেদনা দিতো, আর এই বেদনা নিয়েই দিনগুজরাল করে যেতো ওই মেয়েটা ।

ওই মেয়েটার একদিন বিয়ের সম্বন্ধ এলো! মেয়েটিকে দেখে ছেলের বাড়ির সকলের পচ্ছন্দ হলো এবং বিয়ের কথা পাঁকা করে গেল। মেয়েটির বিয়েও হয়ে গেল খুব ধুমধাম করে । এরপর ওই মেয়েটি যখন বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি গেল তার মা বাবাকে ছেড়ে সে এই কষ্টতা কোনভাবেইও মেনে নিতে পারছিলো না, এই ভেবে যে তার মা বাবা তার কাছে থাকতে পারবে না। বিয়ে করে যখন মেয়েটির স্বামী বাড়িতে নিয়ে এলো ওই নববধূ মেয়েটিকেই শাশুড়ি হেঁশেলের হাঁড়ি চড়াতে বলে এবং উপদেশ দেয় ‘তোমার সংসার তুমি সামলাও’ । এইভাবে শুরু হয়ে গেল মেয়েটির ওপড় অত্যাচার । সবার ভাল মন্দের খবর নেবে, রাত পর্যন্ত সকলের দেখাশুনো করবে। সারাদিন ঘরের সব কাজ করবে । মেয়েটিক মুখ বুঝে সব সহ্য করে নিতো, এটাই নারীর ধর্ম । এবং যদি স্বামী যদি গায়ে হাত তোলে তাহলে এটাকেও আর্শীবাদ বলে ভেবে নিতে হয় । ওই মেয়েটি প্রতিবাদ করলে সে কালনাগিনী হয়ে যায় । কিন্তু ওদের বাড়ির লোক ভাবতে চায় না ওই নববধূ মেয়েটিরও নিজের একটা পরিবার আছে । ওই মেয়েটি নিজের বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে এসে মুখ বুঝে সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় । কিন্তু শ্বশুর বাড়ির কাছে ওই নববধূ মেয়েটি যে একসময় ওই মেয়েটি মা বাবার কাছে ছিল ‘রাজকন্যা্র’ মতো, এখন ওই নববধূ মেয়েটি  হয়ে উঠলো ‘বিনি পয়সার কাজের ঝি’ ।