অবতক খবর,নিজস্ব প্রতিবেদন,৪ নভেম্বর :

কাট-শট

তমাল সাহা

এমনভাবেই শুরু করা যাক তবে,
এঁকে ফেলা যাক একটি মানুষের পোর্টট্রেইট।
কালো ফ্রেমের চশমা বসিয়ে দিলাম তার নাকের উপর।
তাকিয়ে থাকলাম দুটি চোখের অতলান্ত গভীরে।
আ-কাটা দাঁড়ির মুখটি এলোমেলো করে দিলাম
গায়ে চড়িয়ে দিলাম একটি পাঞ্জাবি এবং
পরিয়ে দিলাম একটি পাজামা।
এবার বিষয়টি হয়ে পড়ল বেশ কঠিন।
কাঁধে ঝুলিয়ে দিলাম একটি সাইড ব্যাগ
আর তাতে ভরে দিলাম
এক বোতল তরল গরল।
বাংলাদেশ নেচে উঠল বুকের বারান্দায়।

সময়কে খেয়েছিল সে
সময় তাকে খায়।
পোস্টমর্টেমে দক্ষ চিকিৎসক ছিল সে,
হাতের কলমে এবং ক্যামেরায়।
নিজের মস্তিষ্ক মননের কাটাছেঁড়া হয়ে গিয়েছিল তখনই
যখন সীমান্তে ওরা তৈরি করছিল কাঁটাতারের বেড়া।
সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে রূপসী মায়ের দেহ ব্যবচ্ছেদ।
তাই বাংলার মাঠ ঘাট নদী
অরণ্য লোকশিল্প জলজজীবন
আজও তাকে খুঁজে পায়।

নগর যন্ত্রণার সংগ্ৰাম
মুক্ত জীবনের আহ্লাদ
যন্ত্র ও মানবতার অভিঘাত ভিটেমাটি হারানোর অস্ফুট আর্তনাদ
বাঁচার চরম আকুতি স্পর্ধা দেখিয়ে জীবন শিল্প হয়ে ওঠে
আলোছায়ায় সে তো বাস্তব দৃষ্টিপাত।
সামনে দিয়ে সে
দীর্ঘ পদক্ষেপে লঙমার্চ করে যায়।

বাংলা বর্ণমালার সপ্তম স্বরবর্ণে কোনো প্রতারণা নেই।
সেই বর্ণটি হাতে তুলে নিয়েছিল সে।
দেখলাম কালযজ্ঞের পুরোহিত হতে হতে
সে মহান ঋত্বিক হয়ে যায়।

এমন একটি মানুষ কোনোদিন এসেছিল, জীবনকে দেখিয়েছিল আমাদের গ্ৰামগঞ্জ এই বাংলায়।

আকাশে সেদিন উঠেছিল
খড়্গের মাথার মতো বাঁকা চাঁদ
শ্মশানে গিয়ে দেখি
স্পর্ধার আগুন দেখিয়ে
দাউ দাউ জ্বলে যায় চিতা।
জ্বলন্ত অঙ্গার, মাটির দিকে মুখ রেখে পুড়ে যায় নীলকন্ঠ ঋত্বিক নিজেই তখন—
আমাদের শিল্পজনক মহান পিতা।