অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ

অবতক খবর,৩০ জুলাই: করোনাকাল, লকডাউনকে তুড়ি মেরে চলে গেলেন বীজপুরের অতি পরিচিত মানুষটি সোমেন মিত্র, আজ ৩০ জুলাই।

রাজনীতি এমন এক বিষয় যেখানে উত্থান পতন অনিবার্য। কিন্তু কিছু মানুষ মানুষের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে পড়েন। আদতে কংগ্রেসম্যান তিনি। একসময়ের দাপুটে কংগ্রেস নেতা।‌ শিয়ালদহের অনতিদূরে ৪৫ নংআমহার্স্ট স্ট্রিটে তাঁর বাড়ি। ওই এলাকায় তাঁর আধিপত্য কিংবদন্তি।

আসলে তিনি ছিলেন সৌমেন্দ্র নাথ মিত্র। জনপ্রিয়তার কারণে তিনি হয়ে গেলেন সৌমেন দা। সৌমেন দা থেকে ছোড়দা। রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে ১৯৭২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত শিয়ালদহ বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন তিনি। বর্তমান এই যে শাসক দল তৃণমূল দল, এই দল গঠনের পেছনে নিশ্চিত সোমেন মিত্রের প্রত্যক্ষঅথবা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। ‌মমতা বন্দোপাধ্যায়কে দলে গুরুত্ব দেবার প্রশ্নেই মন কষাকষি, গোঁসা এবং ক্ষোভ।
পরবর্তীতে তৃণমূল দলের গঠন।

তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন। তিনি একসময়ে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস দল গঠন করেন।পরবর্তীতে তিনি আবার তৃণমূল কংগ্রেসের চলে যান এবং ২০০৯ সালে পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ডহারবার থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবেই জয়ী হন। পরবর্তীতে তিনি অনিবার্য কারণে তৃণমূল দল ত্যাগ করে আবার কংগ্রেসে ফিরে আসেন। ‌

স্থানীয় প্রসঙ্গে বলা যাক এবার।
আবু মৃণাল সিংহরায়ের কংগ্রেস রাজনীতিতে উত্থানের মূলে সৌমেন দা, এই ছোড়দা। আবুর সমস্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই সৌমেন দাকে জানিয়ে। সৌমেন দা তাঁর ফ্রেন্ড ফিলোসফার এন্ড গাইড ছিলেন। রীতিমতো যোগাযোগ এতই ঘনিষ্ঠ ছিল যে পারিবারিক সখ্য গড়ে উঠেছিল আবুর সৌমেন দার সঙ্গে। বর্তমান ভারতীয় রাজনীতিতে আবর্তিত আরেকটি নাম মুকুল রায়। যিনি তৃণমূল সংগঠনটি নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং ভারতীয় রাজনীতিতে কূটনৈতিক অভিজ্ঞতায় দক্ষ বীজপুরের ভূমিপুত্র এই মানুষটি। মুকুল আর আবু দুটি নাম এক সময় এক সঙ্গে উচ্চারিত হত। মুকুল রায়ও সোমেন মিত্রের সান্নিধ্য পেয়েছেন।

১৯৮৪ সাল– কাঁচরাপাড়া রেল ওয়ার্কশপের একটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ঘটনা। কাঁচরাপাড়া রেল কারখানায় ৩৬০০ যুবকের প্যানেল যার অর্থ বেকারের পেটের দানাপানি, মুখের ভাত তার সংস্থান করেছিলেন মৃণাল সিংহরায়। হিম্মত ও রোয়াব দেখিয়ে হাজার হাজার যুবককে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছিল একটি রিভলবারের মুখ— মৃণাল সিংহরায়। এর পেছনে নিশ্চিত মদত ছিল সৌমেন মিত্রের এবং গণিখান চৌধুরীর নিশ্চিত ভরসা।

মৃণাল সিংহরায়ের মৃত্যুর পরদিন ২০ জানুয়ারি, ২০১৫ তাঁর বাসস্থানে এসে পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে যান। একমাস বাদে ক্ষুদিরাম বোস ইনস্টিটিউট মাঠে অনুষ্ঠিত মৃণাল সিংহরায়ের স্মরণসভায় মূল বক্তা ছিলেন সোমেন দা। সেই বক্তব্যে উঠে আসে আবুল সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, আবুর সেবাপরায়ণতা, কর্তব্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও আবুর সেই দুঃসাহসিক লড়াইয়ের কথা,মা কয়েক হাজার যুবকের ভাতের আয়োজন করে দিয়েছিল।১৯৯১ সালে আবুর মা এবং ১৯৯৭ সালে বাবার পারলৌকিক ক্রিয়ায়ও উপস্থিত ছিলেন সোমেন দা।

একথা বলা যায় একসময়ে গণিখান চৌধুরী, সৌমেন মিত্র এবং বীজপুরের মৃণাল সিংহরায় ছিলেন ত্রয়ী — থ্রি মাস্কেটিয়ারস।

কংগ্রেসের ২০ দফা কর্মসূচি পালনে মৃণাল সিংহরায় বক্তা হিসেবে সৌমেন মিত্র এবং গণিখান চৌধুরীকে নিয়ে এসেছিলেন কাঁচরাপাড়ায়। কংগ্রেস ভবন সংলগ্ন অঞ্চলে সেই সভা হয়েছিল। সৌমেন মিত্রের বক্তব্য শুনেছিল মানুষ অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে।
আর যেবার আবুর নেতৃত্বে শেষ দুর্গাপুজোয় বেলুড় মঠের আদলে প্যাণ্ডেল হয়েছিল, সেবার সেই মণ্ডপ উদ্বোধন করেছিলেন সোমেন মিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সোমেন মিত্রের প্রস্থান মানে কংগ্রেসের একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি।