আজ ব্রতচারী আন্দোলনের নেতা গুরুসদয় দত্তের প্রয়াণ দিবস। তিনি কাঁচরাপাড়া ব্রতচারী পার্ক উদ্বোধন করেছিলেন।

অবতক -এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ ব্রতচারী আন্দোলনের নেতা গুরুসদয় দত্ত কাঁচরাপাড়া হার্ভে ব্রতচারী পার্কের উদ্বোধন করেছিলেন

তমাল সাহা।

কাঁচরাপাড়া থানার মোড় থেকে সোজা পূর্ব দিক ধরে বনগাঁ রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তুমি চলে যাবে ডাকাতে কালীবাড়ি,তারপর পেরিয়ে আরো কিছুদূর গেলে পেয়ে যাবে ব্রতচারী পার্ক। সেই পার্কের এখন কি অবস্থা কে জানে,সেটা এখন কিসের চারণভূমি দেখলেই তুমি বুঝতে পারবে। একদিন এখানে ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য শৈলীর প্রসার, ফুটবলে পায়ের নৈপুণ্য সেসব এখন ইতিহাস। তার চেয়েও আরো আগে আছে দেশপ্রেমের ইতিহাস। সে তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কাল। দেশপ্রেমের এক নতুন মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছিলেন গুরুসদয় দত্ত। ‌দেশের জন্য শরীর গঠন স্বাস্থ্য তৈরি করো। সে তো বর্তমান প্রজন্মের কাছে অভাবনীয়।

১৯৩৭ সালে কাঁচরাপাড়ার এই ব্রতচারী পার্ক এখন এক পুরাতনী গাথা। সেই ঘটনার কথা আর কতজন মনে রাখে! ১৯৩৭ সাল,এবছর ই শুরু হয়েছিল রেলওয়ে ওয়েলফেয়ার উইক। তার সঙ্গে জড়িত ছিল বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা, সাহিত্য সাধনা ক্রীড়াশৈলীর এক পরম্পরা। ব্রিটনরা তখন এই শহরে খোশমেজাজে হাভানা চুরুট টানছে। কাঁচরাপাড়ায় তখন তাদের খুব দাপট। গোরা সেপাইরা রীতিমতো মার্চ পাস্ট করে চলেছে বীজপুরের রাস্তা দিয়ে। সেই সময়েই তিনি এসেছিলেন, তিনি মানে ক্রীড়া সংস্কৃতির নতুন দিশারী গুরুসদয় দত্ত। কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপে তখন তো ব্রিটিশদেরই মাতব্বরি। দেশ পরাধীন, সে বুঝলো এখনই তো দিতে হবে দেশপ্রেমের জল আর সার। সে তো দেশপ্রেমে উৎসর্গ করেছিল তার জীবন। সে কিনা এসডিও সাহেবের পোশাক ছেড়ে পরল মালকোঁচা মারা ধুতি। দেশজ ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে দেশপ্রেমের বীজ। এ বীজ তো জাতীয়তাবাদের।

ছবিঃ বসে আছেন উইলিয়াম হার্ভে , বক্তৃতা দিচ্ছেন গুরুসদয় দত্ত

সেইতো গাইলো কোদালের গান। ছড়ার গান এসে নাচলো কাঠি নাচ । তারপর সে এসে পড়ল কাঁচরাপাড়ায়। আমাদের তো নিশ্চয়ই খুবই ভালবাসত। না হলে কি কেউ আর এই গন্ডগাঁয়ে কাঁচরাপাড়ায় আসে?

উইলিয়াম হার্ভে তখন ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলের ম্যানেজার। তার সঙ্গে যোগাযোগ করল সে। সাহেবকে বুঝিয়ে নিজের আয়ত্তে এনে ফেললো। তার সহজ সরল অমায়িকতার কথা কে না জানে! হার্ভে সাহেবও তার কথায় পটে মজে গেল।‌ কাঁচরাপাড়ায় তৈরি হলো নতুন ক্রীড়াঙ্গন। যেখানে কিশোর থেকে যৌবন প্রদীপ্ত প্রজন্মকে দেওয়া হবে লোকসংস্কৃতির শিক্ষা। লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে ক্রীড়াশৈলী শরীর গঠনের এক অন্যতম পদ্ধতি।

১৯৩৭-এ হার্ভে ব্রতচারী পার্কের উদ্বোধন করেন গুরুসদয় দত্ত। তখনকার দিনে যারা এই সমস্ত সংস্কৃতির আয়োজনে মান্যতা দিতেন,নামকরণে তাদের মান্যতা দেওয়া হতো। ফলে এই পার্কটি উইলিয়াম হার্ভে ব্রতচারী পার্ক নামে নামকরণ করা হয়। এর উদ্বোধন করেন গুরুসদয় দত্ত। যদিও এর পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এই পার্কের সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের যাতে নাম জড়িয়ে থাকে সেই জন্য এই পদ্ধতি নেওয়াও হতে পারে। কারণ তখন সমস্ত ক্ষমতা ছিল ব্রিটিশদের হাতে। আমরা ছিলাম পরাধীন।

সেই গুরুসদয় দত্ত এসেছিলো গো এই কাঁচরাপাড়ায়। চল কোদাল চালাই ভুলে মানের বালাই– মনে আছে সেই গান?