ভোট এলে মৃণাল সেনকে মনে পড়ে
তমাল সাহা
ভোট এলে আমার মৃণাল সেনের কথা মনে পড়ে।
তালডাঙা গ্রামে গিয়ে আমি ঘিনুয়াকে দেখি আর ডুংরির দিকে তাকিয়ে থাকি।
মহাজনি সুদ শব্দটি আমার মনে পড়ে যায়।
ঘিনুয়া শিকারী বুটে! হরিণ শিকার করে ঘিনুয়া রাজাকে উপঢৌকন দিয়েছিল।
ঘিনুয়া আর ডুংরির সেই ফুলশয্যার রাত্রি দেখে আমার ভিতরেও উষ্ণতার প্রস্রবণ দুর্বার বেগে ছুটেছিল।
ঘিনুয়া যখন সাহেবের কুঠিতে ঝুলন্ত বোতলটাকে চাঁদমারি করে লক্ষ্যভেদ করলো, আমি বলে উঠলাম, নিষাদ বটে! একেই বলে ব্যাধ তীরন্দাজ! সঙ্গে সঙ্গে আমার বুকে ইন্টারভিউয়ের পাথর ছুড়ে ম্যানিকিন ভাঙার শব্দ বেজে উঠলো।
অন্ধকারের হুকুমকে তালিম করতেই হয়। সন্দেশখালির নারীরা রাত্রির নিস্তব্ধতাকে মাড়িয়ে ছুটে যায় পার্টির দপ্তরের দিকে। তখন আমি দেখতে পাই ডুংরিকে তুলে নিয়ে গিয়ে গোবিন্দ সর্দার নষ্ট করছে ডুংরির সোমত্ত শরীর।
ঘিনুয়া বাপের বাটা বটে! খুন কইরে ফেললো গোবিন্দ সর্দারকে নারীর ইজ্জতের বদলা নিতে।
ঘিনুয়ার ফাঁসির আদেশের সঙ্গে সঙ্গে ওই যে বিশাল কামানটি পর্দায় ভেসে উঠেছিল, কামানটি আমার সঙ্গে কথা বলতে থাকে।
ভোট এলে নীলাম্মার চিতার আগুন আমি দেখতে পাই। গনগনে শিখা আকাশের দিকে উঠতে থাকে। আমার সামনে ভেসে ওঠে বেঙ্কাইয়ার মুখ। বলিরেখাময় অবয়ব আর সেই দুর্ধর্ষ চিৎকার– মুদের ভাত দাও, কাপড়া দাও, মকান দাও!
গাছতলা থেকে সেই তেজীয়ান আবহাওয়ায় বাতাস ছুটতে থাকে উথাল-পাথাল বেগে দিগন্তের দিকে।
আর পরশুরাম? তার মূক নীরবতায় মুখর সরবতা আমি দেখতে পাই তার অঙ্গে বিভঙ্গে।
রাজমিস্ত্রি মইরে গেল! হারান খুড়ো ঘোষণা করে দেয়, ই কুনো বস্তি-ঝুপড়িবাসির লাশ লয় রে বাপ! এ মাইনষের বিশাল মৃতদেহ।
শহুরে বাবুদের ফ্লাটে চাপাপড়া তেরোটি মানুষকে আমি দেখতে পাই পরপর ঢেকে রাখা হয়েছে সাদা কাফনে গার্ডেনরিচে।
আর সেই নকশাল তরুণটি চিবুকে আচ্ছাদিত দীর্ঘ বল্লমের মতো রোমরাশি আন্দোলিত করে বলে ওঠে, আমি জানি কে খুন করেছে কিন্তু আমি বলব না আপনারা সাফার করুন। আমি রিয়েক্ট করেছি আপনারাও রিয়েক্ট করুন।