মন্দির হচ্ছে পেটের জন্য বুড়িমা হেঁটে চলেছে।
পাঁচ বছর আগের একটি পুরনো লেখা

চাষাড়ে মিছিল- মার্চ,২০১৮।হাঁটলো ১৮০কিমি পথ,টানা
৬ দিন।বুড়ি ঠাকুমা। এবার শুনুন

বুড়ি ঠাকুমা, তুঝে সেলাম
তমাল সাহা

আমার মেয়ে টুকুন। এবার সেভেনে উঠলো।
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সব খবর সে জানে।
স্মার্ট মোবাইল ঘাঁটতে সে পটু। দুনিয়ার সব খবর সে আমার হাতে তুলে দেয়।

বাবা, এই খবরটা দেখো! ওই খবরটা দেখো!
এবার সে দাবি করে, বাবা!প-দিয়ে ছটা শব্দ
তৈরি করো তো দেখি! চটপট বলতে হবে।

আমি বলি প-এ প্রিয়, প-এ পাগল, প-এ প্রেম। এই তিনটেই তুই।

আমি বলব বাবা?

বল্, আমার চেয়ে ঝটপট বলতে হবে কিন্তু!

শোনো, পার্টি, পেশী,পয়সা— বলে একটু থামলো সে।
তারপর বলল—পা, পেট, পদাতিক।

ওই দেখো এক বৃদ্ধার মুখ। মুখের দাগগুলোকে বলে বলিরেখা।
ইংরাজিতে কি বলে জানো? রিংকল।
বুড়ি ঠাকুমা। চাষি বউ।

তাই কি?

শোনো, মার্চ মাস। দু হাজার আঠারো।
মার্চ সম্বন্ধে পরে বলছি।

চল্লিশ ডিগ্রি উত্তাপ ছড়াচ্ছে দিনের সূর্য।
নাসিক থেকে মুম্বাই টানা ছদিন হেঁটেছে বুড়ি ঠাকুমা। কত দূরত্ব জানো? ১৮০ কিমি!

চাষিদের দুঃসময়। দেশজুড়ে চাষিরা আত্মহত্যা করছে। দেনার দায়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে চাষিরা।

তোমরা পন্ডিতেরা বলো শস্যজীবী। শুনতে ভালো। প্রতিবাদে হেঁটেছে বুড়ি ঠাকুমা। হাঁটতে হাঁটতে চটি ছিঁড়েছে। উত্তপ্ত রাস্তা। খালি পায়ে হাঁটা থামেনি। হেঁটেই চলেছে।

সেই পা উত্তাপে, ঘর্ষণে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। ফোস্কা পড়েছে। রক্তাক্ত। তবুও থামেনি।
বুড়ি ঠাকুমা হেঁটেই চলেছে।

শোনো, পত্রকারেরা জিজ্ঞেস
করেছে বুড়ি ঠাকুমাকে, “হাঁটলেন কেন?”
ঘোমটা তোলা নিচু মাথায় তার একটাই
ছোট্ট জবাব–পোটা সাথে।
পোটা সাথে মানে জানো বাবা?

এটি মারাঠি শব্দ। বাংলা মানে পেটের দায়ে।
চাষি বউ পায়ের চিকিৎসার জন্য বেচে দিয়েছে সোনার নথ, একমাত্র সম্বল। তার বর, মানে স্বামী নাকি কোনোদিন এটা গড়ে দিয়েছিল।

বাবা! ভালোবাসা এভাবেই নিক্তির ওজনে বিক্রি হয়ে যায় এই দেশে,বাবা!

মেয়ে আমার এক নাগাড়ে বলে যায় এসব, আমি শুনে যাই।

বাবা, চাষি বুড়িমা বলেছে প্রয়োজনে আবার হাঁটবে।

বাবা!পেট,পা শব্দ দুটিটি কেমন রাজনৈতিক হয়ে গেল, দেখলে তো! পদাতিক শব্দটি তো
পুরোপুরি রাজনৈতিক।

কেন, শব্দগুলি রাজনৈতিক কেন?

পা,পেট, পদাতিক–লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল যে!
আর মার্চকে কি বলবে তুমি? সেটা কি শুধুই মাসের নাম!
মার্চ মানে তো কুচকাওয়াজ।

বুড়ি ঠাকুমা!
শেখু বাই ওয়াগলে,
তুঝে সেলাম।