এখন সকলের হাতে ক্যামেরা।তার হাতে কোন ক্যামেরা নেই। বলুন তো কে? কার ছবি ক্যামেরাম্যানেরা তুলছে? শুনুন।
ডেডবডি
তমাল সাহা
এটা কি ডেড বডি নাকি
শায়িত রাখতে হবে রবীন্দ্রসদন কিংবা নন্দন চত্বরে?
যার ইচ্ছে সেই মালা,পুষ্পস্তবক দিয়ে যাবে
নোংরা হাতে, আর তার বডিটাকে
পাথরের মতো ভারী করে তুলবে?
বডির চেয়ে মালার ওজন হবে বেশী?
সে এতক্ষণ শুয়ে থাকবে মালার প্রত্যাশায়?
রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিক ছায়া
পড়বে তার শরীরের ওপর?
বাতাস বলে উঠল,
না! তা হতে পারে না।
এতে কলুষিত ও
কলঙ্কিত হবে তার বডি।
কারণ এ বডিতে এখনও
প্রাণ আছে, জীবন আছে—
জাগরণের চেতনা লুকিয়ে আছে।
সুকান্ত, মানিক বাড়ুজ্জে
যখন আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তখন রবীন্দ্রসদন বা নন্দন চত্বর কোথায় ছিল?
তখন তো এসব কথা ওঠে নি!
এই এক কৌশল হয়েছে।
কাগজগুলো পরদিন লিখবে–
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুটের পর
তার দেহ চলে গেল লেলিহান
পাবক শিখার ভেতর।
সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে দাহকার্য দেখভাল করলেন
পৌরমন্ত্রী এবং মেয়র—
দুনিয়ায় যেন আর মানুষজন নেই!
সে কি বলে গিয়েছিল নাকি
আমার দাহপর্ব তোমরা মশাই
দেখাশোনা করো?
কত মণ লাগবে চিতাকাঠ,
ঘি, মধু, অগুরু, চন্দন এসব
তোমরা জোগাড় কোরো!
কর্তাভজা সম্প্রদায়রা তখন দূরে দাঁড়িয়ে।
সামনে আসার সাহসটুকু পর্যন্ত তাদের নেই।
কয়েকজনকে দেখলাম আবার
পিঠের মাঝামাঝি হাত দিয়ে দেখছে।
বুঝলুম না—অনেক চিন্তার পরে বুঝলুম, পরীক্ষা করে দেখছে নিজেদের মেরুদন্ড ঠিক আছে কি না!
একজন বলে উঠলো,
রানিমা! ফস্কে গেল এই শিকারটা!
এইটা যদি কব্জা করতে পারতুম,
তবে তো মার দিয়া কেল্লা!
ইন্টারভিউয়ে
ম্যানিকিন ভেঙেছে সে।
কলকাতা ৭১-এ
গুলি খেয়েছে।
পদাতিক হয়ে
একদিন প্রতিদিন
হেঁটেছে রাস্তায়।
আকালের সন্ধানে বেরিয়েছে।
কোরাসে কথা বলতে চেয়েছে—
কাকে ছেড়ে কাকে মারবেন স্যার?
পেটাতে গেলে তো গোটা দেশটাকেই
পেটাতে হয়!
ঋজু সরলবর্গীয়
বৃক্ষের মতো দীর্ঘ ছিল সে।
মৃত্যুর পরেও আমি তার পেছনের হাড়ে
হাত দিয়ে দেখেছি, অত দীর্ঘ
দেহ হলে কি হবে, একটুও
ক্ষয়িষ্ণু হয় নি,
বেঁকে যায় নি মেরুদন্ডটি।
শিরদাঁড়া সোজা রেখে
রাষ্ট্রের গালে সপাটে চড় মেরে
চলমান ভিড়ের মধ্য দিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল—
এটাও কি রাষ্ট্রকে ভাঙার
একটা পদ্ধতি!
তখন তাঁর হাতে কোন ক্যামেরা নেই।
অজস্র হাতে ক্যামেরা—
শুধু তার ছবি তুলেই চলেছে…