উইন্টার প্রুফ
তমাল সাহা
বড়দিনের সঙ্গে শিশুদের একটা সম্পর্ক আছে বলে কেন যেন মনে হয় আমার।
মেষপালক যিশু শিশুদের সঙ্গে খেলছে, একটা বিশাল ওয়াল পেইন্টিং দেখেছিলাম।
বা সান্তাক্লসের পিঠে শিশুদের জন্য খেলনা কেক লজেন্স ভর্তি ঝোলা দেখেও এসব আমার মনে হতে পারে।
যাই হোক আমি বড়দিনও শিশু এই দুটি শব্দ নিয়ে খেলবার জন্য বড়দিনের সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ি।
কেক রুম, পিঠে ঘর, পিঠে বাড়ি, কেক বাইট– এমন সব নামের কিছু দোকান আমাদের এখানে আছে।
সেখানে বড়লোকেরা কেক কিনতে যায়। বাইরে বেশ কিছু শিশু দাঁড়িয়ে থাকে, হাত পাতে, কিছু চায়।
আমি গোটা দশেক সস্তার বাপুজী কেক কিনে নিয়ে কাঁধের ঝোলায় ভরে ফেলি এবং হাঁটতে থাকি। বড়দিনের টাইমপাস আর কী!
যেখানে হাভাতে শিশুদের দেখি তাদের হাতে তুলে দিই এবং গল্প করতে থাকি।
আরে তোরা তো খুব দরিদ্র!
ওরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
বুঝতে পারি দরিদ্র বললে কি বোঝায় ওরা বোঝে না।
তারপর বলি, তোরা তো খুব গরিব!
ওরা বলে, হ্যাঁ গরিব। আমরা সূর্যনগর কলোনিতে ওই ঝোপড়িতে থাকি। আমার মা-বাবারা মহল্লার লোকেরা তো সকলে এমনই বলে। এখানে যারা থাকে সবাই নাকি গরিব!
তা! গরিব মানে কী তোরা কি জানিস?
সে আমরা কী জানি! সবাই বলে গরিব। তাই আমরাও বলি গরিব।
কিভাবে গরিব হতে হয়, কিভাবেই বা বড়লোক,
আমরা কী তার কিছু জানি নাকি?
এবার বুঝি ওরা দরিদ্র, না গরিব,
এসব ওরা কিছুই জানে না। কে দরিদ্র বলল, কে গরিব বলল তাদের তাতে ওদের কিছুই আসে যায় না।
আমি ওদের বলি,
তোদের এইতো ঢলে ঢলে জামা, কারো জামার পিঠ ছেঁড়া, হাতা ছেঁড়া, তোদের ঠাণ্ডা লাগে না, শীত লাগে না?
ধুর! শীত ঠাণ্ডা এসব কিছুই না। থাকলেও ওসব আমাদের কিভাবে যেন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে, কে জানে!
এই দ্যাখ, আমি সোয়েটার পরেছি, উইন্ড চিটার পরেছি মাথায় টুপি দিয়েছি।
এই দলের মধ্যে কম বয়সের একটা শিশু বলে ওঠে, শীত ঠাণ্ডি এসব ফালতু কথা।
কুকুর বেড়ালেরা কী শীতকালে গরম জামা প্যান্ট পরে নাকি? ওই দেখো, রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদেরও তেমন শীত লাগেনা!
ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া একটি শিশু তার মার হাত ধরে ওই দোকান থেকে কেক কিনছিল।
দোকান থেকে বেরিয়ে আমার এই কথা শুনে ছেলেটি সুন্দরভাবে বলল,
কাকু! ওদের বডি না উইন্টার প্রুফ।
আমার এক বন্ধু চলতি পথে আমাকে দেখে হেঁটে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।