বিচার না প্রহসনঃ হে বালিকরা! মনে রেখো যারা বৃষ্টি ভালোবাসো সেদিনও এমন বৃষ্টি হয়েছিল!
দশ বছর পর বিচারের রায়, হায়! নারী সুরক্ষা বিল কতদূর যায়….
সাদা কাশ আর নীল আকাশ দেখে এখন অনেকে ভুলে যেতে পারে। স্মৃতি ভ্রম ও স্মৃতি বিভ্রম হতে পারে। কিন্তু আমার দৃঢ় মনে আছে। বীভৎস পৈশাচিক সেই গণধর্ষণ। ধর্ষণের পর নিম্ন প্রদেশ থেকে বুক পর্যন্ত প্রায় চিরে ফেলা হয়েছিল। লেডি ম্যাকবেথ অনেক পরে কামদুনি এসেছিলেন এবং মাওবাদী প্রতিবাদের গন্ধ পেয়েছিলেন। তার মুখের সামনে চুপ! শব্দটি সশব্দে উচ্চারণ করেছিলেন এক প্রতিবাদী নারী।
পৃথিবীর ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। সবাই যখন ভীত সন্ত্রস্ত্র তাঁর নেতৃত্বে কামদুনির প্রতিবাদে একটি বিশাল মিছিল সংঘটিত হয়েছিল।
কবির নেতৃত্বে মিছিল– ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে।
ধর্ষণ কাণ্ডটি ঘটেছিল ৭ জুন ২০১৩। সময়খোর কবি কবিতাটি লিখেছিল ৮ জুন ২০১৩ রাতে। ইতোমধ্যে এই লেখাটি অন্ততপক্ষে পাঁচটি জায়গায় প্রকাশিত। এবার ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত ‘মৃদঙ্গ পড়ে আছে’ পুস্তিকাটিতে অসংখ্য ধর্ষণলিপির মধ্যে এই লেখাটিও জীবিত!

আমার কথা
তমাল সাহা

এই পড়ে রইল আমার অন্তর্বাস
ভেড়ির জলে ভেসে থাক তুই
এই পড়ে রইল আমার অসহায় ভাঙচুর যোনি-স্তন,
খোবলানো মুখ আর ধ্বস্ত নগ্ন শরীর।

এমন সৌন্দর্য বড়ই দুর্লভ!
এই বেলা দেখে নে দুচোখ ভরে, দেখে নে।
কামদুনি মোড়।এই পাড়ার মেয়ে আমি
পড়ি ডিরোজিও কলেজে।

হায় ডিরোজিও!
বড় হয়ে ডিরোজিও হবো, বলেছিলাম বাবাকে।
শুক্রবার এই ভর দুপুরবেলা
একটি মেয়ের সবকিছু রেখে গেলাম।
এবার তোরা আরও ছিঁড়েখুঁড়ে খা।

ইটের গাঁথুনি ঘেরা টালির চাল
তবু কেন স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল!
বাবা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে,
মা বিক্রি করে ছাতু-মুড়ি।
কী হবে এখন আমার মা ও বাবার?
গরিবের মেয়ের দিদিমণি হওয়া
সত্যিই কি জরুরি?

কোনদিন লিখেছিলাম খাতার পাতায়,
রইল আমার কথা, লোকে বলে আমি খুব ভালো মেয়ে
এই রেখে গেলাম আমার ফাঁকা কথা—
ছেঁড়াখোঁড়া লাশ! নগ্ন দেহ!
তোমরা দেখো চেয়ে চেয়ে
ওই তো ডিরোজিও সামনে দাঁড়িয়ে।

আমার দু-পা দুদিক থেকে টেনে চেরা
রক্তের দাগ, কেরোসিন, জেরিকেন
তিনি কি দেখতে পেলেন?
এই টিপটিপ বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ
ব্যাগ, কাগজপত্র, ক্লিপবোর্ড, বই
আমাকে মনে রাখবি কি তুই?

খাতার উপরে লিখে রেখেছি নাম
তারও উপরে লিখেছি– ভগবান সহায়!
তখন কি জানতাম ধরলে লোচ্চা মস্তান,
ভগবান তো ভেড়ুয়া, চোখ বুজে ঘুমায়!

ছবি কৃতজ্ঞতা আনন্দবাজার পত্রিকা