অবতক খবর,৯ জানুয়ারি: টেক ফগ-এর কুয়াশা ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে দেশীয় রাজনীতিতে। আজ, শনিবার এ নিয়ে একটি টুইটও করেছেন রাহুল গান্ধী। বিষয়টি নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছে। কীভাবে কাজ করে ‘কারচুপি’র এই নয়া অস্ত্র? এই প্রেক্ষিতে সাইবার এক্সপার্ট সন্দীপ সেনগুপ্ত যা বলছেন:

‘টেক ফগ’ টুইটারের ‘ট্রেন্ডিং’ সেকশনকে হাইজ্যাক করে নেয়:

‘ট্রেন্ডিং’ সেকশনে সাধারণত কোনও একটি টপিককে কেন্দ্র করে চালাচালি করা জনপ্রিয় কনভার্সেশনগুলিই থাকে। কথা হল, Tek Fog তার ‘অটো-রিটুইট’ বা ‘অটো-শেয়ার’ ফিচারের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে এই সব টুইট-বক্তব্যকে ‘রিটুইট’ বা ‘শেয়ার’ করতে পারে। অর্থাৎ, এর মধ্যে দিয়ে এটি একটা নকল ট্রেন্ড বা ‘আর্টিফিশিয়াল ট্রেন্ড’ তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়, নানা রকম টুল ব্যবহার করে এটা করা সম্ভব।

যে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট এখন ততটা সক্রিয় নেই, যাকে ‘ডরম্যান্ট’ বলা চলে, এই প্রযুক্তির মধ্যে দিয়ে সেই অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে বাইপাস করেই সেটিকে ‘ফ্রিকোয়েন্টলি কনট্যাক্টটেড’ দেখানো চলে। এটা ম্যানুয়ালিই করা চলে।

তথ্যের ওলটপালট ঘটিয়ে এক ধরনের ‘টার্গেটেড হ্যারাসমেন্ট’ ঘটাতে সক্ষম টেক ফগ:

ধর্ম ভাষা, লিঙ্গ, রাজনৈতিক অবস্থান, বয়স ইত্যাদির ভিত্তিতে সমাজে পরস্পর আলাদা থাকা সেগমেন্টগুলির বিপুল তথ্য জেনে ফেলা চলে। এবার এই প্রযুক্তির মরফত ‘অটো-রিপ্লাই’ সক্রিয় করা যায় বলে তথ্যের আদান-প্রদান স্বাভাবিক দেখায়। আর অধিকাংশ সময়েই এই সব উত্তর-প্রত্যুত্তরে অপভাষার চর্চা দেখা যায়।

মাত্র একটা ক্লিকেই সমস্ত সাক্ষ্য মুছে ফেলা সম্ভব:

যদি ধরা যাক, সংশ্লিষ্ট ব্য্তি কিছু একটা আঁচ করলেন। টেক ফগ কী করছে, কী করে চলেছে তা নিয়ে তিনি বিন্দু মাত্র মাথা ঘামানোর আগেই সব তথ্য নিমেষে মুছে ফেলা সম্ভব। এবং সেখানে চলে আসতে পারে একরাশ অন্য নতুন তথ্য। তবে এখানে একটা কথা আছে। ঠিকঠাক ফরেন্সিক টুল ব্যবহার করে পুলিস কিন্তু এই ধরনের সফ্টওয্যারকে ট্রেস করে পারে।

শনিবার রাহুল গান্ধী এ বিষয়ে একটি টুইট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, গোটা দেশ জানতে চাইছে, কোথা থেকে এত ঘৃণা জন্মাচ্ছে? বিজেপি আসলে ঘৃণার কারখানা বসিয়েছে। টেক ফগ সেই রকমই এক কারখানা!

প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই সোশ্য়াল মিডিয়ায় ‘কারচুপি’র এই নয়া অস্ত্র ‘Tek Fog’ অ্য়াপ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানকে চিঠিও দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদেরা। একটি ইংরেজি পোর্টালের খবরকে ভিত্তি করেই ওই চিঠিটি লিখেছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। ওই খবরে দাবি করা হয়েছিল, বিজেপির আইটি সেলের এক কর্মীর ইঙ্গিতকে হাতিয়ার করে তাঁরা তদন্ত করেছে। অভিযোগ, ‘Tek Fog’ নামে একটি সফ্টওয়্যারকে ব্যবহার করে বিজেপির আইটি সেল। যে সফ্টওয়্যারের দ্বারা বিভিন্ন টুইটার বা ফেসবুকে কোনও স্টোরিকে ‘টপ ট্রেন্ডিং’ তালিকায় নিয়ে আসা যায়। কত মানুষ কোনও স্টোরিকে কত বেশি শেয়ার করছেন বা রিটুইট করছেন, সেই ব্যাপারটিকে এর দ্বারা প্রভাবিত করা যায়। এবং স্বভাবতই এর ভিত্তিতে একটা জনমতও তৈরি হয়ে যায়।

অভিযোগ ছিল, এই ‘Tek Fog’ অ্যাপের মাধ্যমে কোনও অচল টুইটার বা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টকে ব্যবহার করা যায়। এবং সেই অ্যাকাউন্টের আসল মালিককে বাইপাস করেই এই কাজটি করা যায়। এই বিষয়ে তদন্তের জন্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখেছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সংসাদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।