অবতক খবর, কলকাতা: শুক্রবার রাজ্য বিধানসভার গেটের বাইরে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল PTTI শিক্ষকেরা। বঞ্চিত PTTI শিক্ষকদের নিয়োগ এবং চাকরী ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ দাবি পূরণের লক্ষ্য নিয়ে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি।

ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারী ট্রেন্ড টিচার্স এসোসিয়েশন(WBPTTA) তরফ থেকে শুক্রবার বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল, বঞ্চিত PTTI শিক্ষকদের দাবি পূরণের জন্য। বিক্ষোভকারিদের জমায়েত বাড়তে থাকলে পুলিশ বিক্ষোভকারিদের গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায়।

এই বিক্ষোভ প্রসঙ্গে WBPTTA রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই বলেছেন,’ ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২০০৫-২০০৬ সেশনে PTTI শিক্ষকদের ৩ বছরে মধ্যে ধাপে ধাপে নিয়োগ করা হবে এবং রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া একটিও প্রতিশ্রুতি রুপায়িত হয়ে ওঠেনি।’

পিন্টু পাড়ুই দাবি করেছেন,’২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় WBPTTA সঙ্গে এই বিষয়ে বৈঠকে বসেন এবংবঞ্চিত PTTI শিক্ষকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিষয়টিকে স্বীকার করে নেন, সঙ্গে দ্রুত নিয়োগের আশ্বাস দেন।

WBPTTA রাজ্য সভাপতির দাবি, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বিধানসভার ওই বৈঠকে বঞ্চিত PTTI শিক্ষকদের একটি তালিকা চেয়ে পাঠান, আর সেইমতো ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বঞ্চিত PTTI শিক্ষকদের তালিকা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়। WBPTTA এর রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই অভিযোগ করে বলেছেন, ‘ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বঞ্চিত PTTI শিক্ষকদের তালিকা তুলে দেওয়ার পরেও নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে কোন অগ্রগতি হয়নি।’

এখানেই থেমে না থেকে বঞ্চিত PTTI শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া আরোও জটিল হয়ে উঠেছে এমন অভিযোগ তুলেছেন রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই। ১৭ জন বঞ্চিত PTTI আন্দোলনকারি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।

এরই সঙ্গে পিন্টু পাড়ুই এর অভিযোগ, ‘জানুয়ারি ২০২০ সাল থেকে ষষ্ঠ পে কমিশন লাঘু হয়েছে। কিন্তু রোপা ২০১৯ পে ফিক্সেশনের বিঞ্জপ্তি বলছে সিনিয়র শিক্ষক এবং যেসমস্ত শিক্ষকেরা সদ্য নিয়োগ হয়েছেন তাদের দুই পক্ষের বেতন প্রায় সমান হয়ে গিয়েছে। ফলে ১০-২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে যে ইনক্রিমেন্ট বা ভাতা পেয়েছিলেন তা ধূলিসাৎ হচ্ছে। এই ঘটনা সারা পৃথিবীতে নজিরবিহীন।

একইভাবে WBPTTA রাজ্য সভাপতির দাবি, প্রধান শিক্ষকদের জিপি ২৬০০ টাকার সঙ্গে ২০০ টাকা এডিশনাল গ্রেড পে (এজিপি) যোগ করে অর্থাৎ ২৮০০ টাকা হওয়ার কথা। যার সঙ্গে পে ব্রান্ড যোগ করে বেসিক পে প্রস্তুত হত। সেই অনুসারে গ্রেড পে ১০০০ টাকা বাড়ার ফলে অর্থাৎ পিবি-২ থেকে পিবি-৩ যাওয়ার ফলে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকেরা ৩৮০০ টাকা হিসেবে পাচ্ছে। কিন্তু রোপায় দেখা যাচ্ছে ২০০ টাকা এজিপি তুলে দিয়ে প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড পে কেও ৩৬০০ টাকা করে দেওয়া হল।

শেষে গ্রস স্যালারিতে ৪০০ টাকা বেশি দিচ্ছে। যা একজন ঝাড়ুদারের থেকেও কম। অথচ দিনের পর প্রধান শিক্ষকদের ওপর কাজের চাপ বেড়ে চলেছে। ফলে আর্থিক ভাবে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের সম্মানহানিও ঘটছে।

পিন্টু পাড়ুই দাবি করেছেন, এইচআরএ ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই ধরনের বঞ্চনা অতীতে কখনো হয়নি। অন্যদিকে ডিএ শূন্য বাজেট সহ নানাভাবে শিক্ষক সমাজকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

WBPTTA রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেছেন,’ এই সমস্ত সমস্যা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আলোচনায় বসার সময় বরাদ্দ করলেও তা বাতিল করে দিচ্ছেন এবং বিষয়টা নিয়ে টালবাহানা করে চলেছেন।’ এরপরে পিন্টু পাড়ুই জানিয়েছেন, আগামি ৪ মার্চ থেকে WBPTTA বঞ্চিত PTTI শিক্ষকদের দাবি পূরণের লক্ষ্য নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসতে চলেছে।