চক্ষুষ্মান/তমাল সাহা

বৈশাখের এই প্রহরে
বুভুক্ষার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিতে আমি সফর করি ভারতীয় পথঘাট….

চক্ষুষ্মান
তমাল সাহা

চৈত্রের চিতা ভস্ম উড়ে যায় অনন্ত প্রহরে
বৈশাখ চলে আসে
তাহাতে নাহি আর নতুনের ঘ্রাণ।
পাখির গানও স্তব্ধ হয়
শহরে গাঁয়ে গঞ্জে নিস্তব্ধ প্রাণ।
আমি হাঁটিতেছি অসীম অন্ধকারে
নিরুদ্দিষ্টের মতো
আকাশের তারাগুলি জ্বলে আর নেভে
এই প্রক্রিয়া ভুলিয়া যায়,
স্থির চোখে আমার দিকে তাকায়।

মানুষ দেখিব বলিয়া
বড় আকাঙ্খা ছিল আমার!
এখন নিরন্ন বুভুক্ষু মানুষ দেখি
বহরমপুরের ডোমকলে
কাজ নাই, খাবার নাই
নারী পুরুষ শিশু সব আর্তরবে চিৎকার করে কুঠিয়া মোড়ে বড় রাস্তায়।
এইসব শাঁখা শিল্পের পরিবারদের
হা-হুতাশে বাতাস ভরিয়া যায়।

আমি পরিব্রাজক নই,
পদাতিক পথচারী এক
ক্রমাগত হাঁটিতেছি হাসনাবাদের পথে
শূন্য থালা হাতে রমণী নয়, নারীরা সব
মুড়াগাছা দাসপাড়ায় হাসনাবাদ-মালঞ্চ রোড অবরোধ করে।

এইসব কাজের মাসিরা লক ডাউনে
বাড়ি বাড়ি কাজ হারায়
রেলপথ ধরে সড়ক ধরে
কারা ফিরিতেছে রাতের অন্ধকারে
নিশিচোরের মতো নিঃশব্দ হাওয়ায়।

বারাসাত রেল সাইডিংয়ে মালগাড়ির
ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ঝরে পড়ে চাল
ক্ষুধা নিবৃত্তির পেটের অনল নিভাবার তরে
মা ও মেয়ে নিখুঁত ভাবে
কুড়াতে থাকে ক্ষুন্নিবৃত্তির শস্যদানা।
প্রতি মুহূর্তে ভয় করিয়াছে জয়—
জিআরপি পুলিশের হানা।

খিদে কি পুলিশকে ভয় পায়?
পেট না পুলিশ বড়
কে কার দিকে তাকায়!
কাকদ্বীপ নামখানা ফ্রেজারগঞ্জ পাথরপ্রতিমা থেকে জাল গুটিয়ে
ধীবরেরা ফিরিতেছে ঘরে।
সামুদ্রিক মাছেরা মুক্ত এখন জলের গভীরে।

কী হইবে পৃথিবীর এখন
কে জানে! কে জানে!
শুনশান রব এখন।
বাতাস এখন যমুনা তীরে
বিষাক্ত হয় মানুষের ভিড়ে।

দিল্লির পথে হাঁটি আমি,
দেখিনা রাজধানীর উল্লাস।
পার্লামেন্ট ভবন, লালকেল্লা
ফেলিতেছে দীর্ঘশ্বাস।
উড়ন্ত জাতীয় পতাকা বেপথুমনা হয়ে পড়ে।
ঐতিহাসিক কুতুব মিনার,
দেওয়ান-ই-আম ইজ্জত হারায়।
কোথা থেকে জড়ো হয় হাজার হাজার শ্রমিক যমুনানদীর পারে।
সেতুর স্তম্ভগুলি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়ায়।

নারী পুরুষ শিশু পথ-কুকুরেরা
একসাথে শুয়ে থাকে
শুধু নদীর বাতাস খায়।
শ্রমজীবীর চোখের জলে
যমুনা নদীর জল আরও পরিপূর্ণতা পায়।

আমরা কোথায় আছি?
কোথায়! কোথায়!
রাত্রির চন্দ্রালোকে এইসব মুখ
ছায়ামূর্তির মতো ভৌতিক দেখায়!