৩১ আগস্ট-এর ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন এবং কাঁচরাপাড়া 

তমাল সাহা

স্বাধীন ভারতের ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন ৩১শে আগস্ট ১৯৫৯। দীর্ঘ কয়েকমাসের প্রস্তুতি নিয়ে আন্দোলন‌ শুরু।

এই আন্দোলনের প্রতীক ছিল পেট।

এই আন্দোলনের প্রতীক ছিল ক্ষুধা।

শেষ পর্যন্ত ৩১শে আগস্ট যে হত্যাকাণ্ড ঘটে তাতেও মানুষ পিছু হটেনি। পরবর্তীতে এই আন্দোলন বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে— দাশনগর, গঙ্গারামপুর, মেদিনীপুর, বহরমপুর, বর্ধমান। সরকারি হিসেবে নিহত ৮০ জন,বহু নিখোঁজ আর গ্রেপ্তার? অগণন।

দুর্বার ছিল সেই আন্দোলন। এই আন্দোলনে কাঁচরাপাড়া বিড়ি শ্রমিক সুধীর শর্মা পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন। এতে অংশ নিয়েছিলেন বামপন্থী নেতা অমূল্য উকিল,ননী সেন,সত্যরঞ্জন দাশগুপ্ত, ইন্দ্রজিৎ মল্লিক, দীনেশ চৌধুরীরা।

সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শহীদদের স্মরণে ২৬শে সেপ্টেম্বর সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে শহীদ স্তম্ভ নির্মিত হয়।

পেট ও ক্ষুধা

তমাল সাহা

 

পেট ও ক্ষুধা—

দুটি শব্দই দুটি অক্ষর নিয়ে তৈরি।

এখনও আমি জানিনা পেটের জন্ম আগে, না ক্ষুধার জন্ম আগে।

অথবা পেট ও ক্ষুধা পরস্পরের বৈরী।

সবাই তো বলে একে অপরের পরিপূরক।

এই প্রৌঢ় বেলায় এখনও আমার কাছে এ এক আশ্চর্য চমক।

দুটি অক্ষরের একটি শব্দ ক্রমাগত লিখে চলে ইতিহাস।

চলমান এই বিশ্বেই তো আমাদের বাস,না উপহাস!

সেই দ্বি-অক্ষর শব্দ থেকে জন্ম নেয় লড়াই, মৃত্যু সেখানে পরাজিত।

শহীদ সম্মান সেখানে অর্ধপতাকায় নমিত নয়, বিজয় উল্লাসে উচ্চকিত।

দুই অক্ষরের একটি শব্দ—

পেট কতদূর যায়, কতদূর গেলে পরে

৩১শে আগস্ট অন্তত তার মনে পড়ে।

‘সস্তা দরে খাদ্য চাই’ স্লোগানটি যদি হয় অপরাধী– ধ্বংসাত্মক স্লোগান।

তাহলে রাইফেল ও মেশিন গান নিয়ে মসনদে বসে থাকা সেটা বড় বেমানান।

পিটুলি গোলায় সারি সারি লক্ষ্মীর পায়ের পাতা আঁকা উঠোনে

নবান্নের এই দেশ মন্বন্তর নামে—

ভাতের হাঁড়ি শূন্য হয়ে পড়ে

থাকে উনুনে।

৩১শে আগস্ট গ্ৰাম বাংলা উঠে আসে প্রিয় শহর কলকাতায়,

উদ্বাস্তু ও নিরন্ন মানুষ দুরন্ত পায়ে হেঁটে যায়…

দুর্বার মিছিল জমায়েত হয় মনুমেন্ট ময়দানে।

সেখানে তো শুধু স্লোগান ওঠে ক্ষুধার জয়গানে।

ক্ষুধিতের মিছিল কাঁপায়

কার্জন পার্ক ডালহৌসি চত্বর।

কাঁপতে থাকে পথের প্রস্তর।

মিছিল তো এগোবেই সে তো মিছিল।

তার পেটে আছে সেই আদিম ক্ষুধা।

প্রতিপার্শ্বে দাঁড়াবেই বন্দুক বেয়নেট,

তার মুখে পোরা আছে বারুদ সুধা।

তুমি কার?

২৬শে আগস্ট মাঝরাত থেকে শুরু হল লড়াকু গ্ৰেপ্তার।

দুই সপ্তাহে আটক

দু হাজার ছয়শ চৌত্রিশ জন।

স্বতঃস্ফূর্ত ক্রোধে ফুঁসে ওঠে আন্দোলন।

২৭ আগস্ট বেড়ে যায় জোয়ার।

সাত হাজার নরনারী গ্ৰেপ্তার।

অপরাধ,পেটে নেই আহার।

এবার চলল মিছিল—

মিছিল তো নয় সার সার মাথা,

চল রাইটার্স বিল্ডিং করি তার সঙ্গে দেখা।

পুলিশও খাদ্য চায়,

মিছিলকারীরা খাদ্য চায়।

দুই বুভুক্ষু মুখোমুখি,

পড়ে আছে শুধু নিহত মুখগুলি।

পুলিশ খেলো মানুষ, মানুষ খেলো গুলি।

কার কতটা পেট ভরল কে জানে?

চারিদিক শব্দময় হয়ে উঠল

কলরবে-স্লোগানে।

ওই দেখো সুবোধ মল্লিক স্কোয়‍্যার

৩১ আগস্ট নিরন্ন শহীদেরা আজও জাগে!

কেন জাগে ?

তুমি আবার কবে যুদ্ধে যাবে, ক্রোধে অনুরাগে।