হায়, স্বাধীনতা! স্বাধীনতা সংগ্রামের নামে খাবার!

হায়, স্বাধীনতা! স্বাধীনতা সংগ্রামের নামে খাবার!

এই দেশে সব হয়। নেতাজির নামে সেলুন, বিবেকানন্দের নামে রেডিমেড সেন্টার, রবীন্দ্রনাথের নামে মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নিবেদিতার নামে বিউটি পার্লার আর বিপিন বাবুর কারণ সুধা তো গানই হয়ে গেছে!

খাবে নাকি বিপ্লবী খাবার! বিপ্লবীকে খেতে চাও তুমি? জানাও রেস্তোরাঁয় 

তমাল সাহা

গ্রহণ লাগা বিস্তীর্ণ আকাশ দেখবো বলে দাঁড়িয়েছিলাম ভাগীরথী পারে নটবর চিতা ঘাটে। দেখি শ্মশান কলস ও অন্তিম গাঁদা ফুলের মালা ভেসে যায়।

মাথার উপরে আকাশে চন্দ্রকে কে যেন ক্রমাগত খায়। আমার পাশে কাঠের চিতা জ্বলে, দাউ দাউ লেলিহান শিখায়। আমি দেখি কার মরদেহ কিভাবে কতক্ষণে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায়…..

ঠিক সেই মুহূর্তে আরেকটি আলো দপ করে জ্বলে ওঠে আমার এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে। কী দেখি!তাতে দেখায় ইন্ডিপেন্ডেন্স কিচেনের মেনু কার্ড‌‌। স্থানঃ আলিপুর জেলখানা মিউজিয়াম। রেস্তোরাঁঃ একান্ত কিচেন।

৭৫ বছরের স্বাধীনতা কতদূর যায়!

এখানে বিপ্লবী সংগ্রামী খাবার পাওয়া যায়। চার ধরনের ভোজথালি। ইংরেজিতে একে বলে প্ল্যাটার– আইএনএ স্পেশাল প্ল্যাটার, সাঁওতাল বিদ্রোহ প্ল্যাটার, সিপাহী বিদ্রোহ প্ল্যাটার আর বিবিডি প্ল্যাটার। এই প্ল্যাটারটি পুরো নিরামিষ, অহিংস আন্দোলনের প্রতীক বোধ করি।

বিবিডি প্ল্যাটার খেতে খেতে অলিন্দ ব্যাটেল, রাইটার্স বিল্ডিং, বিনয় বাদল দীনেশ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠে চার্লস টেগার্টের জান্তব মুখ। কানে তুমি শুনতে পাও বিপ্লবী পিস্তলের আওয়াজ। ততক্ষণে গলদেশ বেয়ে বিনয় বাদল দীনেশ ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে পাকস্থলীর দিকে!

আজাদ হিন্দ ফৌজ স্পেশাল প্ল্যাটারের দাম মাত্র ৩৯৯ টাকা। টেবিলে প্লেট , পর পর ডিশ সাজানো। তুমি খেয়ে যাও ফৌজ, নেতাজি এবং আরো কত কত সেনানী। পেয়ে যাবে সেখানে লক্ষ্মী সেহগাল, নীরা আর্যকেও।

সাঁওতাল বিদ্রোহ প্ল্যাটারের অর্ডার দাও তুমি জনজাতি আরণ্যক মহিমায়।

কার কার মুখ ভেসে উঠবে তোমার চোখের তারায়!

সিধু কানু চাঁদ ভৈরব বিরসা মুন্ডা ফুলো মুর্মুর গুলিবিদ্ধ অথবা ফাঁসিতে ঝোলানো শরীর।

ভোজনের সঙ্গে ফাউ পেয়ে যাও তুমি সংগ্রাম, বিদ্রোহ, শহীদদের মুখ।

আহা, ৭৫ এর বছরের স্বাধীনতা!

অমৃত উৎসব কী দারুণ সুখ!