স্বাধীনতার ৭৫ বছরঃ আগস্টের শুরুতেই এক দুঃসাহসিনি।

অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ দুঃসাহসিনী

পদাতিক নারী খালি পায়ে হেঁটে যায়

শিক্ষা মহাজনী কারবার নাকি? শিক্ষা কি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়? ঝড়-বৃষ্টিতে জলে ভিজবে রোদে পুড়ে মরবে ঘরের ছেলেমেয়েরা–এ আবার হয় নাকি? পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক সংগ্ৰাম লড়াই হয়েছে। কিন্তু এমন ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেনি। ৫০০ দিন পেরিয়ে গেছে ভাবতে পারেন রাস্তায় বসে একটা বছরের সবকটা ঋতু– গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত বসন্ত ওরা কাটিয়ে দিল মেধা সম্পন্ন যোগ্য তরুণ-তরুণীরা? রোদে ঘেমে নেয়ে জল। বর্ষায় ভিজলো। শারদ উৎসব মাঠে মারা গেল। হেমন্তের শীত-কাতুরে ভাব সহ্য করল। শীতের হাড় কাঁপুনি ঠান্ডায় শীতার্ত হয়ে উঠলো। বাসন্তিক লালের উল্লাসের দিনে ফেললো শুধু চোখের জল।

অপরাধ? মেধায় উত্তীর্ণ হয়েছে চাকরির পরীক্ষায়। তারা বঞ্চিত রাষ্ট্রের কাছে। আর শিক্ষাকে বাজারে মাল মনে করে শাসক বেচে দিল, হাত পেতে কোটি কোটি মুদ্রা নিল অযোগ্য অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাছ থেকে। পৃথিবীতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? ঘটতে পারে এই বাংলায় যে বাংলা ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকীর দেশ, রবীন্দ্রনাথ নজরুলের দেশ! এক নাগাড়ে বলে গেলেন শুভ্রা ঘড়ুই গৃহবধূ। আমতলা থাকেন জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগণা। স্বামী সমীর ঘড়ুই। ছোট্ট একটা প্লাইউড কারখানায় কাজ করেন। দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে তাদের।

রাগ ক্ষোভ ঘৃণা ক্রোধ এইভাবে ‘চটি’ হয়ে যায়।

আমি তো তীরন্দাজ নই, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। চাঁদমারি ছিল মন্ত্রীর টাক।

আমি বলি টাক কেন?

শুভ্রা দেবী বলেন,ওই টাক থেকেই তো এত কোটি কোটি টাকার গল্প! আমাদের মতো মানুষের রক্ত শোষণের গল্প। উনি এসি গাড়িতে চলে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন, আমাদের অসুবিধে করবেন। ফ্ল্যাটে কোটি কোটি টাকা মজুত করবেন আর আমাদের ছেলেপুলেরা অসহায় ভাবে আকাশের দিকে অতল দুঃখ বুকে নিয়ে তাকিয়ে থাকবে? এই নর হন্তারককে দেখে রাগ চড়ে গেল। মাথাটা দপদপ করতে লাগলো। যোগ্যরা বসে আছে অযোগ্যরা চাকরি পেয়ে গেছে!তার চোখে তখন ভাসছে টিভিতে দেখা– ফ্ল্যাটের পর ফ্ল্যাট, বাগান বাড়ি, টাকার পাহাড়, মজুত সোনা গয়নার স্তূপ।

মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। নার্সিং পড়তে চায়। পড়তে লাগবে ৮ লক্ষ টাকা! কোথায় পাবো আমরা?

চটিই একমাত্র অস্ত্র। আমি তো দ্রৌপদী নই।শ্রীকৃষ্ণ বিবেক হয়ে বুকের মধ্যে জেগে উঠলেন। কহিলেন, এইতো সময়, নিক্ষেপ করো চটি বাণ, ধ্বংস করো মন্ত্রীর মান সম্মান।

যুদ্ধের পর দুঃসাহসিনী ফিরলেন খালি পায়ে। হাজারো জনতা প্রশ্ন করেন, খালি পায়ে কেন?

নিবেদিত চটি ফিরিয়ে নিই না আমি।

মেরুদণ্ডভাঙা বাঙালিকে কষাঘাত করে মাটির সঙ্গে সরাসরি সংযোগে দৃঢ় পদক্ষেপে হেঁটে গেলেন নারী।