অবতক খবর,২৪ নভেম্বরঃ শুধুমাত্র অর্থাভাবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ অনিশ্চিত যোগাসনে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সব্জি বিক্রেতার সন্তানের। ইতি মধ্যেই সব রকম প্রতিকূলতাকে দুরে সরিয়ে রেখে পাঁচ পাঁচটি স্বর্ণ পদক জয় করে ফেলেছেন কোন্নগরের এক সব্জি বিক্রেতার সন্তান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তারপরেও অর্থাভাবের কারণে এবার থাইল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে দেখা দিয়েছে প্রবল অনিশ্চয়তা।

তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় দিদিমার হাত ধরে যোগাসন শেখার শুরু হয়েছিল কোন্নগরের সোমনাথের। এরপর একে একে রাজ্য এমনকি জাতীয় স্তরেও শতাধিক পদক ও পুরস্কার প্রাপ্তি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে এই সম্ভাবনাময় যোগাসনের অন্যতম প্রতিভার। যাঁর আগামী লক্ষ্য থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক যোগা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা। কিন্তু এখানেই প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে অর্থ। গত ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর হরিয়ানায় অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় যোগাসন প্রতিযোগিতা। জাতীয় স্তরের ওই প্রতিযোগিতার পাঁচটি ইভেন্টে নেমে সবকটি ইভেন্টেই স্বর্ণ পদক জিতে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়নও হন বাংলার এই প্রতিভাবান যুবক সোমনাথ।

মামার বাড়িতে থাকার সুবাদে দিদিমা সোমনাথকে স্থানীয় এক ক্লাবে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সেই শুরুর দিন থেকেই যোগাসনকে খুব ভালবেসে ফেলেছিলেন বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র সোমনাথ। কোন্নগরের এক কামরার মামার বাড়িতেই আজও থাকে সোমনাথরা। সেই একমাত্র ঘরও ইতিমধ্যেই প্রায় কানায় কানায় ভরে গিয়েছে সোমনাথের পাওয়া হাজারো পুরষ্কারে। সোমনাথের বাবা রাজু মুখোপাধ্যায় সব্জি বিক্রি করেন আর তাঁর সেই রোজগারেই কোনওক্রমে অতিকষ্টে চলে তাঁদের সংসার। পড়াশোনার পাশাপাশি যোগাসন করেই নিজের ভবিষ্যত গড়তে চায় সোমনাথ।

আগামী জুন মাসে থাইল্যন্ডে বসতে চলেছে আন্তর্জাতিক যোগাসন প্রতিযোগিতার আসর। সেখানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতামানও ইতিমধ্যেই অর্জন করে ফেলেছে সোমনাথ। কিন্তু তারপরেও তাঁর থাইল্যান্ড যাত্রা নিয়ে দেখা দিয়েছে বেশ বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন। এক্ষেত্রে মূলত অর্থাভাবই ভাবাচ্ছে সোমনাথ ও তাঁর পরিবারকে। এর আগেও একবার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া হয়েছে এভাবেই আর্থিক অসংঙ্গতির কারণে। এক্ষেত্রে সোমনাথের মা পিঙ্কি দেবী বলেন, ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে অত্যন্ত ভাবনার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। এর আগে হরিয়ানার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে যাওয়ার জন্যও সুদে টাকা ধার নিয়েছিলেন সোমনাথ। কিন্তু ধার করে দেশের মাটিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারলেও বিদেশে অর্থাত থাইল্যান্ডে যাওয়ার খরচ অনেকটাই বেশি। যা সোমনাথ বা তাঁর সব্জি বিক্রেতা বাবার পক্ষে যোগাড় করাটা প্রায় অসম্ভব। এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আপাতত পুরো বিষয়টাই তাঁরা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।

এক্ষেত্রে কোন্নগর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন দাস বলেন, শুনেছি ভালো যোগাসন করে ছেলেটি। আমার শহরের গর্ব। অনেক পদক পেয়েছে। আগামী দিনে ওর পাশে থাকার সবরকমভাবে চেষ্টা করবে কোন্নগর পুরসভাও।

এই মুহূর্তে সোমনাথের থাইল্যান্ড যাওয়ার স্বপ্ন সত্যি হতেই পারে যদি কোনওরকম সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, অথবা যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সোমনাথকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে সোমনাথ ও তাঁর পরিবার।