অবতক খবর, উত্তর দিনাজপুরঃ  স্কুলছুটদের ফেরাতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের একটি গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষকরা ৷ স্কুল প্রাঙ্গণে তৈরি করে ফেলা হয়েছে চিড়িয়াখানা ৷ বানানো হয়েছে ফুল-ফলের বাগান ৷ পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক জিম ৷

চার-পাঁচ বছর আগেও স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা ৷ কিছুতেই স্কুলের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে পারছিলেন না শিক্ষকরা ৷ তারপরই অভিনব উদ্যোগ নেয় উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া ব্লকের শকুন্তলা হাই স্কুল ৷ স্কুল প্রাঙ্গণেই বানিয়ে ফেলেছেন ছোট্ট চিড়িয়াখানা ৷ আনা হয়েছে রং-বেরঙের বদ্রি পাখি ৷ রয়েছে বিভিন্ন জাতের খরগোশ ৷ অ্যাকোরিয়ামে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রঙের মাছ ৷ তৈরি করা হয়েছে জিমও ৷ ফাঁকা সময়ে এসব নিয়ে সময় কাটাতে উৎসাহ দেখা যায় পড়ুয়াদের মধ্যে ৷ ফের স্কুল ভরে উঠতে থাকে কচিকাঁচাদের দলে ৷

২০১৩ সালে স্কুলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন নবকুমার শাকারি ৷ দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি লক্ষ্য করেন, পড়ুয়ারা স্কুল বিমুখ হয়ে যাচ্ছে ৷ কোনও বুদ্ধি খাটিয়েও ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না তাদের ৷ দ্রুত এই অবস্থার পরিবর্তন করতে উদ্যোগ নিতে শুরু করেন নবকুমারবাবু ৷ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য নিরাপত্তা রক্ষী রাখা হয় ৷ স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয় CCTV ক্যামেরা ৷ স্কুল গেট দিয়ে ঢুকেই দু’দিকে খাঁচা তৈরি করে রাখা হয় খরগোশ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ৷ স্কুল প্রাঙ্গনে লাগানো হয় নানা প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ ৷ স্কুলের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষকে মনীষীদের নামে নামাঙ্কিত করা হয় ৷ শুধু মনোরম পরিবেশ নয়, পড়ুয়াদের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখারও সিদ্ধান্ত নেন নবকুমারবাবু ৷ ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে কথা বলে অত্যাধুনিক জিমেরও ব্যবস্থা করেন তিনি ৷ ব্যবস্থা করা হয় একাধিক খেলার সরঞ্জামের ৷ পানীয় জল থেকে শুরু করে খাওয়ার ব্যবস্থা, দূর থেকে আসা পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলের ব্যবস্থা করা হয় ৷

এত কিছুর ফলে বর্তমানে পড়ুয়াদের সংখ্যা স্কুলে অনেক বেড়েছে বলে জানালেন বর্তমানে স্কুলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক খগেন্দ্রনাথ সিংহ ৷ তবে, সব কৃতিত্ব নবকুমারবাবুকেই দিলেন তিনি ৷ পড়ুয়াদের মন ধরে রাখতে স্কুল প্রাঙ্গণেই চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলেছেন  শিক্ষক খগেনবাবু বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে আমাদের স্কুলের তরফে এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ৷ বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি ৷ তবে সব উদ্যোগ নিয়েছিলেন নবকুমারবাবু ৷”

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির তরফে জানান হয়, স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল বলে আলোচনা করে এই অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয় ৷ নবকুমারবাবু বলেন, “আমি শুধু একা নয় ৷ স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকমণ্ডলী ও স্থানীয়রা এই ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছে ৷ দারিদ্রের কারণে এই ধরনের ঘটনা ৷ তারপরই আলোচনা করে স্কুলকে নতুন রূপে তৈরি করা হয় ৷”