সিএএ- এর বিরুদ্ধে সোচ্চারঃ দিল্লির শৈত্য প্রবাহকে রুখে দিয়েছে এইসব মায়েরা

অবতক খবর,4 জানুয়ারি: শীতের শৈত্যপ্রবাহ গ্রীষ্মের দাবদাহ, বর্ষার অঝোর বারিপাতকে রুখে দিতে পারে কে? রুখে দিতে পারে মায়েরা,এইসব দুর্ধর্ষ দুর্দান্ত মায়েদের মুখ। এইসব মায়েদের কাছে বয়স কোন বয়সই নয়। ৮০-৯০ বয়স পেরিয়ে যায় মায়েদের। কিন্তু লড়াকু মায়েরা কনকনে ঠান্ডার এই শৈত্যপ্রবাহকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। শত শত মা বসে আছে দিল্লির শাহিনবাগ চত্বরে।

দেখো এইসব মায়েদের মুখ। খরশান রৌদ্রে কেমন ঝলসে উঠেছে এই শীতের মধ্যেও। এত বছর ধরে বৈচিত্রের দেশ, মহামানবের দেশ এই ভারতবর্ষে পড়ে আছি আমি। তুমি কোন ফরমানদার জানতে চাও আমার পরিচয়? অতি প্রাচীনকাল থেকে আমি এই দেশে আছি। ৮০-৯০ বছর পেরিয়ে যায়, তোমার বয়স কত হে ছোকরা রাষ্ট্র নায়ক! দেশ তো মাত্র ৭২ বছরের স্বাধীন? আর আমি ৮০ থেকে ৯০বছরের বুড়ি মা, আর তুমি আমার পরিচয় জানতে চাও? জানতে চাও আমার নাগরিকত্ব? কাগজে লেখা থাকলেই সেটা প্রমাণপত্র হয়ে যায়?

ভারতবর্ষের এই মাটি আমাকে, আমার পিতৃপুরুষ পিতা প্রপিতামহদের
ধারণ করেছে, লালন পালন করেছে। জল বায়ু দিয়েছে দিয়েছেশ্বাস প্রশ্বাস নিতে। তুমি আমার কাছে কিসের কাগজ চাও?

এই রাষ্ট্রের মালিক তূমি, সরদার তুমি!তোমার বয়স কত? তুমি এই ৮০ বছর বয়স্কা নারীর কাছে প্রমাণ চাও, আমি এ দেশের নাগরিক কিনা? তোমার এত বড় স্পর্ধা? এত বড় হিম্মত?

দিল্লির কনকনে ঠাণ্ডাকে তুড়ি মেরে শাহীনবাগ চত্বরে বসে আছে মায়েরা। শত শত রমণীয় মা। তাদের লড়াই, তাদের অভিযান এনসিআর, এনপিআর এবং সিএএ-এর বিরুদ্ধে।‌

আইন তৈরি করে কে? কার জন্য আইন? কিসের জন্য আইন? মানুষ তৈরি করে আইন মানুষের কল্যাণের জন্য। আমরা চাই কল্যাণকর রাষ্ট্র, যে আমাদের রুটি দেবে,কাপড়া দেবে,মকান দেবে,কাম দেবে। তুমি তা দাওনা? তুমি তা দিতে সক্ষম নও? অথচ তুমি চাইছো প্রমাণপত্র কাগজপত্র?

মায়েরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা কাগজ দেবে না। কাগজে যে পরিচয় দেওয়া থাকে, যে শংসাপত্র লেখা থাকে তা তো মানুষই লেখে। মানুষ যদি তার মনুষ্যত্ব ধ্বংস করে তার মায়ের কাছে প্রমাণপত্র চায়, সেটা কোন সভ্যতা? আমরা মানিনা কাগজ, জানিয়ে দিয়েছে মায়েরা।

১৭ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। মায়েরা লড়ে যাচ্ছে, মায়েরা সংগ্রাম করে যাচ্ছে, মায়েরা অভিযানে নেমেছে। মায়েরা চাইছে যুদ্ধ। এ যুদ্ধ অস্তিত্বের যুদ্ধ, ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথের বৈচিত্রের ভারতবর্ষে বেঁচে থাকার লড়াই। দেখুন মায়েরা লড়ছে। ভারতবর্ষে যুগে যুগে লড়ে গিয়েছে মায়েরা, স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে মায়েরা, শিক্ষা বিস্তারের জন্য লড়েছে মায়েরা।

দিল্লিতে নয়া ইতিহাস রচনার হতে চলেছে স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে স্বাধীনতার ৭২ বছরের এই প্রান্তিক বেলায়। শত‌ শত নারীদের সঙ্গে শত শত প্রবীণ প্রৌঢ়া বয়স্কা মা সামিল হয়েছে নিজেদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে।
সাবাস মায়েরা। জিন্দা রহো মায়েরা, জিন্দা রহো!