আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: অবতক খবর :: ২৯শে,নভেম্বর :: কোলকাতা :: ২০১৬ সালের পর থেকে যেভাবে প্রতিটা নির্বাচনেই বিজেপি তাদের ভোট বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে, আর মোটামুটি ভাবে দ্বিতীয় স্থানটা ধরে রাখতে পারছে, তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটা নতুন ঘটনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে “দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে বিজেপি থাকতে পারছে কী না, সেটা  একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেটা গুরুত্বের, তা হল, দলটা কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ভোট বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। বিগত বেশ কয়েকটা নির্বাচনের ফল দেখলেই সেটা স্পষ্ট হবে।”

উলুবেড়িয়া আর নোয়াপাড়ার আগেও কাথি উপনির্বাচন বা গতবছরের পৌরসভাগুলির নির্বাচনেও আসন সংখ্যার দিক থেকে না হলেও বিজেপি-র ভোটের শেয়ার বৃদ্ধি হয়েই চলেছে। উল্টোদিকে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের ঠিক পরেই বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে যে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস ছিল তাদের ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে।

কথা হল বিজেপি-র দিকে ভোটটা আসছে কোথা থেকে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে যে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট তো কমছে না, উল্টে বাড়ছে। আবার প্রতিষ্ঠিত দুটি রাজনৈতিক শক্তি ছিল – বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস, তাদের যতটা ভোট কমছে, সেই ভোটই বিজেপির দিকে যাচ্ছে। তাই কংগ্রেস আর বামেদের ভোটই যে মোটামুটি ভাবে বিজেপি পাচ্ছে, এটা বলা যায়।”

নিজেদের দিকে ভোট কীভাবে টানতে পারছে বিজেপি? বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ব্যাখ্যা দেয় যে ভোটারদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটিয়ে ভোট বাড়াচ্ছে বিজেপি তথা হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি।

সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জায়গায় ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরী হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি কোথাও পেশীশক্তি প্রদর্শনের জন্য মিছিলও করেছে। তবে অন্যান্য রাজ্যের মতো সম্পূর্ণ ধর্মীয় মেরুকরণ পশ্চিমবঙ্গ করা সম্ভব নয়।

“আবার বীরভূম বা কোচবিহারের মতো কয়েকটি জেলা সেখানে মুসলমানদের একটা অংশ – যারা কোনও কারণে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘোরতর বিরোধী, তারাও কিন্তু বিজেপি-র দিকে গেছেন। যদিও এটা রাজ্যের সার্বিক চিত্র নয় এবং ওই সব অঞ্চলে মুসলমানদের বিজেপিকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় কিছু ইস্যুই মূলত কাজ করেছে,”

হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জড় পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই থেকেছে, কিন্তু বামপন্থীদের প্রভাবে সেটা এতদিন সামনে আসতে পারে নি। “সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই জাতীয়তাবাদের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদকে ব্যবহার করার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গেই। তাই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির দিকে একটা সমর্থন ছিলই। কিন্তু জনসংঘের ব্যর্থতা হল স্বাধীনতার পরে তারা এটাকে কাজে লাগাতে পারে নি –

বিশেষত দেশভাগ, উদ্বাস্তুদের সমস্যা – এইসব ইস্যুকে তারা সামনে নিয়ে আসতে পারে নি। যে কাজটা করেছিল কমিউনিস্টরা। মানুষের একটা বিরাট অংশের সমর্থন তাই কমিউনিস্টদের দিকে চলে গিয়েছিল।”

কিন্তু ২০১১ সালে যখন কমিউনিস্টরা বিদায় নিল পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা থেকে, ওই  মানুষরা বিরোধী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন, তারা বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়লেন|মূলত তার ফলেই ক্রমাগত বিজেপি-র ভোট বেড়ে চলেছে ।

একদিকে বাম ও কংগ্রেসের শক্তিক্ষয়, অন্যদিকে বিজেপি-র দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে সামনে উঠে আসা – এটাকেই বিশ্লেষকরা এখন পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজনৈতিক ট্রেন্ড বলে মনে করছেন।